বেশ কয়েকটি রাজ্যে আগেই ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইনফর্মেশন টেকনোলজি (ট্রিপল আইটি)-র যাত্রা শুরু হয়েছে। আসন্ন শিক্ষাবর্ষে পশ্চিমবঙ্গেও চালু হতে চলেছে ট্রিপল আইটি। কেন্দ্র, রাজ্য এবং বেসরকারি উদ্যোগের মিলিত প্রয়াসে রাজ্যের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে এটিই। অন্যান্য রাজ্যের মতো এখানেও স্বশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ট্রিপল আইটি গড়ে তোলার কথা।
ট্রিপল আইটি গড়ে তোলার জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কল্যাণীতে ৫০ একর জমি চিহ্নিত করেছে। তবে পরিকাঠামো তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি। তাই আপাতত পাশেই একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ট্রিপল আইটি-র পঠনপাঠন শুরু করে দিতে চাইছে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। প্রথম বছরে ৬০ জন পড়ুয়া ভর্তি করানো হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। ওই পড়ুয়াদের নেওয়া হবে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের তালিকা থেকে। রাজ্যের দাবি, দেড় বছরের মধ্যে ট্রিপল আইটি-র পরিকাঠামো তৈরি হয়ে যাবে। স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরির পরে আসন-সংখ্যাও বাড়তে পারে।
রাজ্যে ট্রিপল আইটি-র পরিকল্পনা শুরু হয় বাম সরকারের আমলে। তবে তখন তা সে-ভাবে দানা বাঁধেনি। ২০১১-র মার্চে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছ থেকে কল্যাণীতে ১০০ একর জমি পায় তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। তার মধ্যে ৫০ একর চিহ্নিত করে রাখা হয় ট্রিপল আইটি প্রকল্পের জন্য। কেন্দ্র-রাজ্যের এই যৌথ প্রকল্পে শরিক হিসেবে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কোল ইন্ডিয়া, বেসরকারি ইস্পাত সংস্থা জে এস ডব্লিউ বেঙ্গল ও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা রোল্টা। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি মডেল) বা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে তৈরি হবে ওই প্রতিষ্ঠান। ৫০% টাকা দেবে কেন্দ্র, রাজ্য ৩৫% ও বেসরকারি সংস্থা ১৫%। আগ্রহী সংস্থাদের কাছ থেকে ইচ্ছাপত্র চাওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী জমি ছাড়াও প্রকল্পে ৪৬ কোটি খরচ করবে রাজ্য। কেন্দ্র দেবে ১৪৮ কোটি। তিনটি বেসরকারি সংস্থা দেবে ২০ কোটি।
তথ্যপ্রযুক্তি দফতর সূত্রের খবর, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের অগ্রগতির কথা জানতে চেয়েছিল। তার জানতে চেয়েছিল, আগামী শিক্ষাবর্ষে ক্লাস চালু করা যাবে কি না। বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এপ্রিলের শেষে বৈঠক ডাকেন রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে ছিলেন তিনটি বেসরকারি সংস্থা এবং শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি বা পূর্বতন বেসু)-র প্রতিনিধিরা। আইআইইএসটি আপাতত নতুন ওই প্রতিষ্ঠানের মেন্টর হিসেবে কাজ করবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আসন্ন শিক্ষাবর্ষেই ট্রিপল আইটি চালু হবে। বৈঠকের পরের দিন কল্যাণীতে প্রকল্পের জমি, অস্থায়ী ক্যাম্পাস দেখেও আসেন রাজ্য ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়াও ট্রিপল আইটি-তে পূর্বাঞ্চলের প্রধান শিল্পগুলির দিকে নজর দিয়ে পাঠ্যক্রম তৈরি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। এই ব্যাপারে সাহায্য করছে আইআইইএসটি। সেখানকার ডিরেক্টর অজয় রায় জানান, আপাতত ট্রিপল আইটি-র পাঠ্যক্রম তৈরি করছেন তাঁরা।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে শিক্ষক বাছাই করে পড়াশোনা চালাতেও সাহায্য করবে মেন্টর ইনস্টিটিউট। অন্যান্য রাজ্যের ট্রিপল আইটি-র মতোই বাংলার প্রতিষ্ঠানটিও হবে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। সেটি চালাবে ‘বোর্ড অব গভর্নরস’। তাতে থাকবেন কেন্দ্র, রাজ্য ও সংশ্লিষ্ট তিন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। থাকবেন মেন্টর ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টরও। কেন্দ্রের তরফে বিষয়টি দেখছে মানবসম্পদ মন্ত্রক। এবং এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরই প্রকল্পটির দায়িত্বে রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি দেখবে বোর্ড অব গভর্নরস।
এখন দেশে চারটি ট্রিপল আইটি চলছে পুরোপুরি কেন্দ্রীয় অনুদানে। ইলাহাবাদ, জবলপুর, গ্বালিয়র এবং কাঞ্চীপুরমে এই চারটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া আছে কেন্দ্র, রাজ্য ও শিল্প সংস্থার মিলিত প্রয়াসে চালু ছ’টি ট্রিপল আইটি। সেগুলি রয়েছে অন্ধ্রের শ্রী সিটি, অসমের গুয়াহাটি, রাজস্থানের কোটা, গুজরাতের বডোদরা, কেরলের তিরুঅনন্তপুরম এবং তামিলনাডুর ত্রিচিতে।