হন্যে হয়ে খুঁজেও সারদা গোষ্ঠীর প্রতিদিনের আয়-ব্যয়ের হিসেব পাচ্ছিল না দুই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি এবং সিবিআই। অবশেষে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের এক সহকারিণীর কাছ থেকে সেই তথ্যের অনেকটাই হাতে পেয়ে গেলেন ইডি-র তদন্তকারীরা। স্রেফ আয়-ব্যয়ের হিসেব নয়, বহু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি এবং সারদার অনেক অজানা সম্পত্তির আর্থিক লেনদেনের হিসেবও মিলেছে বলে ইডি সূত্রের খবর।
আমরিন আরা নামে সারদার এক কর্মীকে বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করে এই সব তথ্য মিলেছে। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সারদায় যোগ দেন আমরিন। তদন্তে জানা গিয়েছে, প্রথমে রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন ওই মহিলা। কিন্তু ছ’মাসের মধ্যেই সারদার ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্মের শেষ কথা হয়ে দাঁড়ান তিনি।
সারদা কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে আমরিনকে বেশ কয়েক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। কিন্তু তখন তাঁর কাছ থেকে বিশেষ করে ওই লগ্নি সংস্থার আয় ও ব্যয়ের হিসেব ও তথ্য সে-ভাবে পাওয়া যায়নি। তাই তাঁকে ফের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বিধাননগরের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি-র দফতরে যান ওই মহিলা। তবে তার আগে রীতিমতো নাটক হয়ে যায় তাঁকে ঘিরে। প্রথমে সাংবাদিকদের দেখে তিনি সিজিও থেকে বেরিয়েও যান। তার পরে সংবাদমাধ্যমকে এড়াতে হেলমেট পরে নেন। কিছু ক্ষণের মধ্যে আবার দফতরের ভিতরে ঢুকে লিফটে ওঠেন। কিন্তু সেখানেও সাংবাদিকেরা হাজির দেখে লিফট থেকে বেরিয়ে সিজিও একতলার মেঝেতেই বসে পড়েন। অগত্যা সাংবাদিকেরা সরে যান। তার পরে ইডি দফতরে ঢোকেন আমরিন। পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা।
ইডি-র এক তদন্তকারী জানান, আমরিনের কাছে পাওয়া পেন ড্রাইভে শুধু সারদার আয়-ব্যয়ের হিসেব নয়, আরও নানা ধরনের তথ্য মিলেছে। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই সব তথ্যের ভিত্তিতে সারদার আরও অজানা বহু সম্পত্তি এবং সেগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ২০১৩ সালের জুলাইয়েই আমরিনের কাছে একটি পেন ড্রাইভ পাওয়া গিয়েছিল বলে ইডি সূত্রের দাবি। এ বার সেই তথ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন আমরিন। সারদার ওই সব তথ্য একটি আলাদা ফাইলে রাখা ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
ঠিক কী কী সারদা-তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারল ইডি?
ওই তদন্ত সংস্থা সূত্রের খবর, ২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সারদার প্রতিদিনের আর্থিক লেনদেনের বিবরণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। পাশাপাশি সারদার হয়ে যত জমিজমা এবং অন্যান্য সম্পত্তি কেনা হয়েছে, তার আর্থিক বিবরণও পাওয়া গিয়েছে। ইডি-র খবর, কিছু দিন আগেই জেরার মুখে সুদীপ্ত উত্তরবঙ্গে নতুন কিছু সম্পত্তির খোঁজ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে তথ্য ছিল না। আমরিনের দেওয়া পেন ড্রাইভে সেই তথ্য মিলেছে।
রাজ্যের এক মন্ত্রীর সিমেন্ট কারখানা এবং সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত মাতঙ্গ সিংহের সঙ্গে সারদার চুক্তির আর্থিক বিবরণও মিলেছে। মাতঙ্গের সঙ্গে সারদার একাধিক চুক্তি হয়েছিল। সারদার অর্থে বিদেশযাত্রার খরচও যাচাই করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই পেন ড্রাইভের তথ্য সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে গতি আনবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।