প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর হলং সফরের সময়ে পর্যটকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করায় বিতর্কে পড়েছিল পুলিশ-প্রশাসন ও বন দফতর। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডুয়ার্স সফরের সময়েও একই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। শুক্রবার বন দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, ২-৪ জুন মাদারিহাট বনাঞ্চলে ‘কার সাফারি’ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নানা সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ডুয়ার্স সফর শুরুর কথা ২ জুন। সে দিন শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে উত্তরকন্যায় দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার নানা কাজকর্ম পর্যালোচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে হলংয়ে যেতে পারেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী দুদিন হলং বনবাংলোয় থাকতে পারেন ভেবে সেখানে প্রস্তুতি চলছে। ৪ এবং ৫ জুন জয়ন্তী বাংলোয় যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। ৬ জুন মুখ্যমন্ত্রীর মংপংয়ে থাকার কথা। ৭ জুন কলকাতায় ফেরার কথা।
ভরা পর্যটন মরসুমে ওই সময়ে ‘কার সাফারি’ বন্ধ হওয়ায় পর্যটন মহল উদ্বিগ্ন। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার কথা তো ভাবতেই হবে। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে আমি হলংয়ে যাব।” যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সঙ্গে কার সাফারি বন্ধের সিদ্ধান্তের যোগসূত্র নেই বলে জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণ (৩) বিভাগের সহকারী বন্যপ্রাণ আধিকারিক শ্বেতা রাই-এর দাবি। বন দফতর জানিয়েছে, মাদারিহাট থেকে হলং বনবাংলো যাতায়াতের রাস্তা মেরামতির করতেই ওই সময়টায় ‘কার সাফারি’ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ওই এলাকার বনবাংলোয় যে আগাম ‘বুকিং’ রয়েছে, তা বাতিল করা হয়নি।
ডুয়ার্সের গাড়ি মালিক সংগঠন মাদারিহাট জিপসি ওনার্স অ্যসোসিয়েশনের অভিযোগ, অতীতে মুখ্যমন্ত্রী বা ভিভিআইপি এলে, পর্যটকদের হলং বাংলো এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হতো না। কিন্তু ‘কার সাফারি’ বন্ধ করা হয়নি। গত ডিসেম্বরে গাড়িগুলির (জিপসি) বাণিজ্যিক নম্বর করানোর জন্য প্রায় তিন সপ্তাহ সাফারি বন্ধ ছিল। কিছু দিন আগে পূর্ব জলদাপাড়া রেঞ্জে ভাঙচুরের ঘটনার জেরেও প্রায় সপ্তাহ খানেক সাফারি বন্ধ ছিল। এ বার ফের তিন দিন বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে চললে পর্যটকদের হয়রানির পাশাপাশি তাঁদেরও লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে সংগঠনের কর্তারা মনে করছেন। সুব্রতবাবু বলেন, “বন দফতর রাস্তা মেরামতির জন্য সাফারি বন্ধের কথা বলছে। আদতে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্যই সাফারি বন্ধ হচ্ছে বলে অনেকেই আড়ালে-আবডালে বলছেন। কোনটা সত্যি কে জানে?”
মাদারিহাটের ওই সংগঠনের তরফে রঞ্জন দত্ত, সুব্রতবাবুরা জানান, জ্যোতিবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন হলং বাংলোয় গিয়েছিলেন। তখন ‘কার সাফারি’ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা হলেও পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি। এখন ভরা পর্যটন মরসুমে এ ভাবে সাফারি বন্ধ করায় বিশাল ক্ষতি হবে বলে গাড়ি মালিক সংগঠনের আশঙ্কা। পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত অপারেটরদের একাংশ জানান, আগামী ১৬ জুন থেকে সাফারি তিন মাসের জন্য বন্ধ হবে। সে সময়েই রাস্তা মেরামতি করা যেতে পারত বলে তাঁদের দাবি। ট্যুর অপারেটরদের তরফে কয়েকজনের আর্জি, “বাম আমলের পুনরাবৃত্তি না ঘটিয়ে একটু অন্য ভাবে ভাবুক প্রশাসন। অন্তত মুখ্যমন্ত্রী যে এলাকায় থাকবেন, সেই দিকটি বাদ দিয়ে অন্যত্র কার সাফারি যেতে দেওয়া হোক।”