দলের এক নেতা তথা জিটিএ (গোখাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সদস্যকে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে অস্ত্র আনায় যুক্ত সন্দেহে প্রায় মাসখানেক ধরে খুঁজছে দার্জিলিং পুলিশ। তা নিয়ে ঘরে-বাইরে ক্রমশ চাপ বাড়ছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার উপরে। রবিবার রাজনৈতিক সঙ্গী বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের কলকাতা সমাবেশে মঞ্চ বা তার ধারেকাছে দেখা যায়নি মোর্চার শীর্ষ নেতাদের। কিন্তু সোমবার বিকেলে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন মোর্চার শীর্ষ নেতা বিমল গুরুঙ্গ।
ঘটনাক্রমের প্রেক্ষিতে যে বৈঠককে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন মোর্চা এবং তৃণমূলদু’দলেরই পাহাড়ের নেতাদের একটা বড় অংশ। তাঁদের অনুমান, দেখা করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মোর্চা তথা নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি গুরুঙ্গ।
বৈঠক চলে এ দিন বিকেল সওয়া ৩টে থেকে ৪টে পর্যন্ত। গুরুঙ্গের সঙ্গে ছিলেন মোর্চা নেতা বিনয় তামাঙ্গ। রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এবং স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও বৈঠকে হাজির ছিলেন।
দলের অন্দরের খবর, ‘হৃদয়ে গোর্খাল্যান্ড’ থাকলেও মোর্চা নেতারা যে আপাতত আন্তরিক ভাবে জিটিএ চালাতে চান, মোর্চা সভাপতি গুরুঙ্গ সে আশ্বাসই এ দিন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। নবান্ন ছেড়ে বেরনোর সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পুজো দিতে কলকাতায় এসেছি। বিজেপি-র মিটিং-এ আসিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে গেলাম।” জিটিএ-র দফতর নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে? গুরুঙ্গ বলেন, “কিছু কিছু দফতর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব দেখছেন।”
সরকারি সূত্রের খবর, ২০১১ সালের আগে ৫০৭টি মামলা হয় মোর্চার নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে দু’টি খুনের মামলা। দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সব পুরনো মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টিও মোর্চার নেতাদের কাছে বরাবর অগ্রাধিকার পেয়েছে। সেই বিষয়ে কি এ দিন কোনও আলোচনা হয়েছে? গুরুঙ্গ দাবি করেন, “সেটা রাজনৈতিক স্তরে আলোচনা হবে।”
সম্প্রতি অসমে অস্ত্র সরবরাহে জিটিএ-র তাকদা গ্লেনবার্নের সদস্য সঞ্জয় ঠুলুঙ্গের যোগ থাকার অভিযোগ নিয়ে মামলা হয়েছে। তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছি কি? মোর্চার সহকারী সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ বলেন, “এটা একেবারেই সৌজন্য সাক্ষাৎ। এখানে অন্য বিষয় আলোচনার অবকাশ কম ছিল।” রাতে সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঠানো ই-মেলেও গুরুঙ্গ বলেছেন, “জিটিএর বিভিন্ন বিষয় এবং পাহাড়ের বাসিন্দাদের সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কথা হয়েছে বাকি কয়েকটি দফতর জিটিএ-র হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারেও।”
নবান্ন সূত্রের খবর, গুরুঙ্গরা জিটিএ-র হাতে ৫৭টি দফতর রাখতে চেয়েছিলেন। তার মধ্যে ৩৫টি হস্তান্তর হয়েছে। জিটিএ-চুক্তিতে ভূমি, বন, তথ্য-সম্প্রচারের মতো দফতর জিটিএ-র হাতে দেওয়া যাবে না বলা হয়েছে। তবে আলোচনা সাপেক্ষে তথ্য ও সম্প্রচারের জন্য একটি বিভাগ খুলতে পারে জিটিএ। তা নিয়ে এ দিন আলোচনা হয়েছে।