মমতা, মুকুল নিয়ে বয়ান দেবেন কুণাল

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুল রায় সম্পর্কে তাঁর দু’টি কথা আছে এবং সেগুলো তিনি সিবিআইকে বলতে চান। অনেকটা এই রকম নাটকীয় ঢংয়েই সোমবার এজলাসে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলে উঠলেন কুণাল ঘোষ। তাঁর আর্জি মঞ্জুর হল। বিচারক নির্দেশ দিলেন, সিবিআই যেন জেলে গিয়ে কুণালের বয়ান রেকর্ড করে আনে। মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তোলা তাঁর অবশ্য এই প্রথম নয়। সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল এর আগে একাধিক বার অভিযোগ করেছেন, সারদা মিডিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা যদি কেউ পেয়ে থাকেন, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেগুলো ছিল আদালতের বাইরে বলা। সোমবার একেবারে কাঠগড়া থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুল রায়ের নাম নিলেন কুণাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
Share:

নজর উপরের দিকে। সিবিআই আদালতে রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুল রায় সম্পর্কে তাঁর দু’টি কথা আছে এবং সেগুলো তিনি সিবিআইকে বলতে চান। অনেকটা এই রকম নাটকীয় ঢংয়েই সোমবার এজলাসে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলে উঠলেন কুণাল ঘোষ। তাঁর আর্জি মঞ্জুর হল। বিচারক নির্দেশ দিলেন, সিবিআই যেন জেলে গিয়ে কুণালের বয়ান রেকর্ড করে আনে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তোলা তাঁর অবশ্য এই প্রথম নয়। সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল এর আগে একাধিক বার অভিযোগ করেছেন, সারদা মিডিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা যদি কেউ পেয়ে থাকেন, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেগুলো ছিল আদালতের বাইরে বলা। সোমবার একেবারে কাঠগড়া থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুল রায়ের নাম নিলেন কুণাল।

ইদানীং আদালতের বাইরে কথা বলতে গেলেই কুণাল বা প্রাক্তন তৃণমূলী আসিফ খানের গলার আওয়াজ চাপা দেওয়ার জন্য নানাবিধ পথ বার করে থাকে পুলিশ। কুণাল প্রথম বার যখন আদালত থেকে বেরিয়ে পুলিশ ভ্যানে ওঠার আগে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন, তার পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে পাল্টা শব্দ-পুলিশি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে তৃণমূলের প্রভাবশালীদের গ্রেফতার করার চরমসীমা দিয়ে জেলে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন কুণাল। এ দিন তিনি ভিন্ন রাস্তা ধরলেন।

Advertisement

সোমবার বরং অন্যান্য দিনের মতো আদালতের বাইরে কুণালকে মুখ খোলার চেষ্টা করতে দেখাই যায়নি। তিনি যেন স্থির করেই এসেছিলেন, যা বলার একেবারে ধর্মাবতারের সামনেই বলবেন। বললেনও তাই। সিবিআই আদালতের বিশেষ বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের এজলাসে দাঁড়িয়ে কুণালের এ দিনের আর্জি, “মমতা-মুকুল সম্পর্কে আমার কাছে দু’টি নির্দিষ্ট তথ্য আছে। সেটা আমি সিবিআইকে বলতে চাই। সারদা মিডিয়ার থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা যিনি নিয়েছেন, তাঁর এক নম্বর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন তিনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য এ রকম করে বেড়াচ্ছেন।”

এর আগে সারদা নিয়ে আদালতের কাছে গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়েছিলেন কুণাল। কিন্তু সিবিআই তখন তাঁর গোপন জবানবন্দির প্রয়োজন নেই বলে আদালতে জানিয়েছিল। তবে আদালতের নির্দেশে ওই সময়েও জেলে গিয়ে সাংসদের বয়ান রেকর্ড করেছিলেন তদন্তকারীরা। এ বারও তাঁরা সেটাই করবেন। কিন্তু আগের বারের সঙ্গে এ বারের তফাৎ একটাই এ বার কুণাল আগে থেকে বলেকয়েই সরাসরি মমতা-মুকুলের বিরুদ্ধে ‘নির্দিষ্ট তথ্য’ দিতে চলেছেন। কী তথ্য কুণাল দিতে চান তা নিয়ে এ দিন আদালতের মধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে যায়।

কুণাল ইতিমধ্যে ইডি-কে চিঠি লিখে দাবি করেছেন, কালিম্পঙের ডেলো বাংলোতে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন এবং রোজভ্যালির গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছিল। কুণালের অভিযোগ ছিল, ওই বৈঠকে সুদীপ্ত সেন বলেছিলেন, মমতাকে প্রধানমন্ত্রী করার কথা ভেবেই তিনি তাঁর মিডিয়া ব্যবসা সাজাচ্ছেন। মুকুল সম্পর্কে তাঁর অভিযোগ ছিল, সারদার ভরাডুবির পরে সুদীপ্ত সেন নিজাম প্যালেসে বৈঠক করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হোক বলেও চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন কুণাল। মুকুল-ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেছিলেন, “তৃণমূল ডাকাতদের দল। আর মমতা হলেন ডাকাতরানি।” আসিফ দাবি করেছিলেন, সারদার ভরাডুবির কথা নববর্ষের আগে জানতেন না বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

সারদা তদন্তে সম্প্রতি তৃণমূলের হেভিওয়েট মন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। বিরোধী দলগুলি এর মধ্যে মমতা-মুকুলকে জেরা করার দাবি তুলেছে। এমনকী তাঁদের গ্রেফতারের দাবিতেও মিছিল হয়েছে রাজপথে। এই আবহে এ দিন কুণাল যে ভাবে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নাম আদালতে রেকর্ড করিয়ে নিলেন, সেটা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ।

এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে মুকুলবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সারা দিনে এ নিয়ে আলাদা করে মুখ খোলেননি মুখ্যমন্ত্রীও। তবে ঘটনাচক্রে এ দিনই টাউন হলে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের সভায় প্রায় অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই মমতা বলে ওঠেন, “কাজের বিচারে এখন জেলে পোরা হয় না। রাজনৈতিক স্বার্থে, রাজনীতির বিচারে হয়। সত্যিকারের চুরি করে কেউ জেলে গেলে তার দুঃখ থাকে না। চুরি না করে জেলে গেলে দুঃখ থাকে। যে চুরি না করে জেলে যায়, সৎ থাকে, জেলও তাকে প্রত্যাখ্যান করে।” আচমকা এই মন্তব্যে শ্রোতারা অবাক হয়ে যান। এর সঙ্গে কুণালের বক্তব্যের কোনও যোগ আছে কি না, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়।

এ দিন সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের মামলায় সিবিআই আদালতে হাজির করানো হয় কুণাল, সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে। কুণাল আসেন বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ। তাঁর পরনে ছিল সাদা এবং ধূসর রঙের হাফহাতা জ্যাকেট। সঙ্গে বেগুনি রঙের ফুলহাতা টি-শার্ট সঙ্গে ধূসর রঙের ট্র্যাকস্যুট, পায়ে সাদা স্নিকার্স। পুলিশে ঠাসা আদালত চত্বরে প্রিজন ভ্যান থেকে নেমে তিনি সাংবাদিকদের দিকে হাত নেড়ে আদালতের ভিতরে ঢুকে যান। আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়েও একই ভাবে হাত নেড়ে চলে যান। প্রশ্ন করা হলে আদালতের দিকে আঙুল দেখিয়ে পুলিশের গাড়িতে উঠে পড়েন। এ দিন আদালতে ছিলেন সারদা মামলায় ধৃত মনোজ নাগেলও। আদালতে মনোজের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, “সিবিআই যে মামলা দায়ের করেছে, তাতে অভিযুক্ত হিসেবে মনোজ নাগেলের নাম রয়েছে। অথচ চার্জশিটে মনোজের নাম নেই।” বিচারক বিষয়টি সিবিআই-এর আইনজীবী পার্থসারথি দত্তের কাছে জানতে চান। তিনি সময় চাওয়াতে বিচারক আগামী ২ জানুয়ারি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement