কুমারগ্রামের শরণার্থী শিবিরে বিজেপি সাংসদ। ছবি: রাজু সাহা।
সেনা অভিযানের জেরে অসমের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতেই ডুয়ার্সের কুমারগ্রামের নানা শিবিরে থাকা শরণার্থীরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার ১১৪ জন শরণার্থী ফিরে যাওয়ায় একটি শিবির তুলে দিয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন। সেই সূত্র ধরেই শরণার্থীদের নিয়ে রাজনীতি করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের এ রাজ্যে পাকাপাকি ভাবে রাখার কথা বলেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া।
অহলুওয়ালিয়ার নেতৃত্বে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল কুমারগ্রামের বালাপাড়া শরণার্থী শিবিরে গিয়ে পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। তাঁর পরেই দার্জিলিঙের সাংসদের মন্তব্য, “দুর্দিনে কেউ আশ্রয় নিলে সাহায্য করতে হয়। তা বলে পরিস্থিতি ঠিক হলে সে ঘরে না ফিরে পাকাপাকি ভাবে থাকুক, এমন বলার আড়ালে রাজনীতিই প্রধান।” তাঁর সংযোজন: “সারদা-কাণ্ডে জেরবার হয়ে একটু ছুটি কাটাতে ডুয়ার্সে ঘুরতেই হয়তো আচমকা সফরের আয়োজন হয়েছিল।” যার জবাবে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এঁরা সব উস্কানিদাতা সমিতির সদস্য! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা কাজ করছেন, তার পাঁচ শতাংশও ওঁরা করতে পারবেন না।” অহলুওয়ালিয়াকে বিঁধে পার্থবাবু বলেন, “উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে তাঁর মাটির যোগ নেই। অন্য দলের সহায়তায় জিতে এখন মুখ্যমন্ত্রীর কল্যাণমূলক কাজ নিয়ে সমালোচনা করছেন।”
অহলুওয়ালিয়া জানান, খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে তাঁরা এ দিন শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। প্রতিনিধি দলে দার্জিলিঙের সাংসদ ছাড়াও ছিলেন অসমের জোরহাটের সাংসদ কামাখ্যা টাসা, ডিব্রুগড়ের সাংসদ রামেশ্বর তেলি, রাজ্য বিজেপি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী এবং অসমের বিজেপি নেতা বিজয় গুপ্ত। কেন্দ্রের কাছে আগামী ৬ জানুয়ারি গোটা পরিস্থিতির উপরে একটি রিপোর্ট দেবেন প্রতিনিধিরা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন যে শরণার্থীরা অসমে ফিরেছেন তাঁরা গোসাইগাঁওয়ের পাখড়িগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। গোয়াবাড়ি শিবিরে মোট ৫০ জন শরণার্থী ছিলেন। তাঁরা সকলেই অসমে ফিরে যাওয়ায় শিবিরটি তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন কুমারগ্রামে আর চারটি শিবির রয়েছে। ঘরে ফেরার পথে বিনয় সোরেন, পুকিন হাঁসদার মতো শরণার্থীরা বলেন, “ভিটেমাটি, গরু-ছাগল ফেলে প্রাণের ভয়ে এ রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কত দিন থাকব? খবর পেয়েছি, অসমের পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। গ্রামে সেনা টহল চলছে। তাই ফিরছি।”
যদিও বিজেপি-র স্থানীয় নেতারা সেই প্রসঙ্গ টেনে বিঁধতে চেষ্টা করেছেন তৃণমূলকে। তাঁদের কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে স্থায়ী ভাবে এ রাজ্যে রাখার আশ্বাস দিয়ে গেলেও শরণার্থীদের অসমে ফেরা রুখতে তৃণমূলের জেলা নেতারা কেন আসরে নামছেন না?” তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, “কেউ চলে যেতে চাইলে, তাঁকে আটকে রাখা হবে কেন বিজেপি নেতারা আগে সেই যুক্তিটা দিন।”