সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে জাতীয় স্তরে কংগ্রেসকে সমর্থন করার কথা বললেও পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই দাঁড়ালেন জামা মসজিদের শাহি ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারি।
আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে আসন্ন লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালেন বুখারি। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নের প্রশ্নে তৃণমূল সরকারের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ কার্যত মডেল। রাজ্যে তৃণমূল সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়নের যে রিপোর্টটি মমতা ফেব্রুয়ারিতে বুখারির কাছে পাঠান, আজ সেটি সাংবাদিকদের বিলি করেছেন তিনি।
শাহি ইমাম বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মুসলিমদের সমস্যা সমাধানে কিছুটা এগিয়েছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতেও তিনি এই সমস্যাগুলির সমাধানে ব্রতী হবেন।” পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের উদ্দেশে মমতাকে সমর্থন করার ডাক দিয়ে তিনি এই আশাও পোষণ করেন, কেন্দ্রে সরকার গড়তে তৃণমূল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তৃণমূলকে সমর্থনের আরও একটি কারণ আজ তুলে ধরেন শাহি ইমাম। জানিয়েছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে এই আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে, কোনও কারণেই তিনি এনডিএ-তে যোগ দেবেন না।” অর্থাৎ মোদী বিরোধিতার-বিষয়টিও যে একটি বড় সূচক, সেই ইঙ্গিতও আজ দিয়েছেন তিনি।
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই শাহি ইমামের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছিলেন মমতা। পরে মমতার নির্দেশে দলের এক শীর্ষ নেতা দিল্লিতে নিয়মিত ভাবে শাহি ইমামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। সম্প্রতি কলকাতা থেকে ইমামের পারিবারিক বিবাহ অনুষ্ঠানেও আসেন তৃণমূলের এক মন্ত্রী। বিয়েতে নিজে উপস্থিত না থাকতে পারলেও পরে মমতাও দিল্লি এসে ইমামের সঙ্গে দেখা করে পাত্র-পাত্রীকে উপহার দিয়ে যান।
ক্ষমতায় আসার পরই ইমাম ভাতা চালু করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। ৩০ জানুয়ারি শাহি ইমাম নিজেই একটি চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, তাঁর রাজ্যে সাচার কমিটির প্রস্তাবগুলি রূপায়ণের জন্য কী কী পদক্ষেপ নতুন সরকার করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে একটি বৈঠকে তিনি সেই পদক্ষেপগুলি নিয়ে আলোচনা করবেন বলেও মমতাকে চিঠিতে জানিয়েছিলেন বুখারি। চিঠির জবাবে মমতা জানান, সাচার কমিটির সমস্ত প্রস্তাব তাঁর সরকার পূরণ তো করেইছে, কিছু বাড়তি কাজও করা শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁর আড়াই বছরে রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য কী কাজ করেছে, সেই রিপোর্ট তখনই বুখারিকে পাঠিয়ে দেন মমতা।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তৃণমূল নেতৃত্বকে গোড়াতেই অনুরোধ করেছিলেন শাহি ইমাম। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও সেটা অভিপ্রেত। এমনিতেই রাজ্যের ৪২টি আসনে বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে এবং চর্তুমুখী লড়াইয়ের ফলে তৃণমূলের বেশ কিছু আসনে সমস্যা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিজেপি-র ভোটের হার এ বার বাড়তে পারে। তাই নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করাটা তৃণমূলের বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। মমতাও ক্রমশ বিজেপিকে সমালোচনার ধার বাড়াচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ইমামের এই সর্বাত্মক সমর্থনে তৃণমূল কতটা লাভবান হয়, সেটাই এখন দেখার।