মনোরোগী খুনে তদন্তের রাশ মমতার হাতে

প্রথম হুঁশিয়ারিটা ছিল শাসক দলের ছাত্র শাখার। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ বা এনআরএসের হস্টেলে মনোরোগীকে পিটিয়ে হত্যার তদন্তে এ বার খাস নবান্নেরই পিছুটান! ওই খুনের তদন্ত কী ভাবে এগোবে এবং কতটা এগোবে, সেটা এখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং পুলিশমন্ত্রীও। ১৫ নভেম্বর রাতে নীলরতনের ছাত্রাবাসে কোরপান শাহ নামে এক মনোরোগী যুবককে পিটিয়ে মারার পরে দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০২
Share:

কোরপান শাহ

প্রথম হুঁশিয়ারিটা ছিল শাসক দলের ছাত্র শাখার। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ বা এনআরএসের হস্টেলে মনোরোগীকে পিটিয়ে হত্যার তদন্তে এ বার খাস নবান্নেরই পিছুটান! ওই খুনের তদন্ত কী ভাবে এগোবে এবং কতটা এগোবে, সেটা এখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং পুলিশমন্ত্রীও।

Advertisement

১৫ নভেম্বর রাতে নীলরতনের ছাত্রাবাসে কোরপান শাহ নামে এক মনোরোগী যুবককে পিটিয়ে মারার পরে দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। ওই হস্টেলের হবু চিকিৎসকদের কয়েক জনকে সন্দেহ করলেও এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। হস্টেল থেকে কয়েক জন সন্দেহভাজনকে লালবাজারে তুলে নিয়ে গিয়ে জেরা করতে চেয়েছিলেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। কিন্তু নবান্ন থেকে তাঁদের নিরস্ত করা হয় বলে জানাচ্ছেন লালবাজারের এক কর্তা। নবান্ন থেকে লালবাজারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নীলরতনের অধ্যক্ষার রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর হাতে না-পৌঁছনো পর্যন্ত মনোরোগী-হত্যার তদন্তে কোনও রকম তড়িঘড়ি করা চলবে না।

হত্যাকাণ্ডের ১১ দিন পরে, গত বৃহস্পতিবার নীলরতনের অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। পুলিশি সূত্রের খবর, সেই রিপোর্ট এখন মমতার টেবিলে। রিপোর্টটি খতিয়ে দেখে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই লালবাজারকে নির্দেশ দেবেন। তিনি যেমন যেমন বলবেন, তদন্তের অভিমুখও সেই ভাবে এগোবে।

Advertisement

এমনিতেই ওই ঘটনার তদন্তে গড়িমসি ও রাখঢাকের অভিযোগ উঠেছে। আঙুল উঠছে পুলিশের দিকে। তার উপরে নবান্নের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার ফরমান আসায় পুলিশের একাংশ হতাশ। অধ্যক্ষার রিপোর্ট সম্পর্কে লালবাজার যা জেনেছে, তাতে তদন্তের ভবিষ্যৎ নিয়ে সেখানকার কর্তারা সন্দিহান। এক পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, সে-রাতে গণপিটুনির ঘটনা কী ভাবে ঘটেছিল এবং কারা ঘটিয়েছিল, সেই বিষয়ে মঞ্জুদেবীর রিপোর্টে একটি বাক্যও খরচ করা হয়নি। তাতে মূলত প্রশ্ন তোলা হয়েছে হস্টেলের নিরাপত্তা নিয়ে। কী ভাবে হস্টেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা যায়, সেই বিষয়ে নিজের মতামত দিয়েছেন অধ্যক্ষা। কয়েকটি সুপারিশও করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ হবু ডাক্তারদের দিকে ইঙ্গিত করলেও অধ্যক্ষার রিপোর্টে তাঁদের পুরোপুরি আড়াল করা হয়েছে।

ঘটনার পরে পুলিশের দু’টি দল (একটি এন্টালি থানার, অন্যটি লালবাজারের গোয়েন্দা শাখার) তদন্ত শুরু করেছিল। অনেক টালবাহানার পরে নীলরতন-কর্তৃপক্ষ তাঁদের হস্টেলের আবাসিকদের নাম ও মোবাইল নম্বর দেন। তার পরে তদন্ত গতিও পেয়েছিল কমবেশি। হস্টেলের আবাসিকদের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে সন্দেহভাজনদের তালিকাও তৈরি করেছিল পুলিশ। কিন্তু তার পরে তদন্ত আর এতটুকুও এগোয়নি।

কেন?

লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “পুলিশের উপরে মানুষের আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যে আমাদের অনেকেই চেয়েছিলেন, সন্দেহভাজনদের তুলে এনে লালবাজারেই জেরা করা হোক। তা হলেই আসল অপরাধীদের শনাক্ত করা যেত। কিন্তু নবান্ন থেকে অন্য রকম নির্দেশ আসায় শেষ পর্যন্ত আমাদের পিছিয়ে আসতে হয়। তাই অনেকটা এগিয়েও আমরা তদন্তের রাশ টেনে ধরেছি।” লালবাজারের সূত্র জানাচ্ছে, বেশ কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, বহিরাগত কেউ ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই হস্টেলের আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। তদন্তকারীরা মনে করেছিলেন, পারিপার্শ্বিক কোনও প্রমাণ না-থাকায় ওই আবাসিকদের ঠিকঠাক জিজ্ঞাসাবাদ করলেই কোরপান-হত্যার কিনারা হয়ে যাবে।

লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা হবু চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না কেন?

তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র হুঁশিয়ারি তার বড় কারণ বলে জানাচ্ছে পুলিশ। এক পুলিশকর্তা জানান, শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের চোখরাঙানিটা এসেছিল নির্দোষ আবাসিকদের স্বার্থরক্ষার ছদ্মবেশে। নির্দোষ ডাক্তারি পড়ুয়াদের যাতে কোনও ভাবে হেনস্থা করা না-হয়, টিএমসিপি সেই ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবনকে। দোষীদের শাস্তি চেয়েও তৃণমূলের স্বাস্থ্য সেলের প্রধান নির্মল মাজি টিএমসিপি-র সুরেই কথা বলেছিলেন। এর পরে তদন্ত যে আর বিশেষ এগোবে না, ধরে নিতে বাধা হয় লালবাজার। এখন মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিষয়টি হাতে নেওয়ায় তাঁর দিকে তাকিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় দেখছে না পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement