বিশেষ পর্যবেক্ষক, পুলিশ পর্যবেক্ষক, আর্থিক হিসাব পর্যবেক্ষকের সঙ্গে লোকসভা ভোটের জন্য এ বার আবগারি পর্যবেক্ষক। তবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে এই আবগারি পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে রাজ্যের আবগারি দফতর। পড়শি রাজ্যগুলি থেকে চোরা পথে মদ আসা রুখতে নির্বাচন কমিশনের সুপারিশেই এ বার ওই আবগারি পর্যবেক্ষকদের নিয়োগ করা হয়েছে বলে কমিশন সূত্রের খবর।
চোরাই পথে আসা মদের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক কী? নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়, বিনা পয়সায় মদ বিলি করে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ বহু দিনের। তাই নির্বাচনের সময়ে মদ বিক্রি এবং ভিন রাজ্য থেকে মদের জোগান হঠাৎ বেড়ে যায়। মদ খাইয়ে ভোট কেনার প্রবণতা রুখতে এ বার চোরা পথে মদ আসা ও বিক্রির উপরে নজরদারির সুপারিশ করেছে কমিশন। আবগারি পর্যবেক্ষদের মাধ্যমে ওই নজরদারি চালিয়ে ভাল ফল পেয়েছে বলে দাবি করেছেন আবগারি দফতরের একটি সূত্র।
রাজ্যের আবগারি বিভাগের একটি সূত্র বলেন, “নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে আমরা মদের চোরাকারবারির বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছি। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে এক জন করে অফিসারকে কালো টাকা উদ্ধার এবং চোলাই মদ উদ্ধারে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে থাকছে একটি করে বিশেষ দল। কোনও খবর পেলেই অভিযানে নামবে ওই বিশেষ দল।” রাজ্যের আবগারি দফতরের এক কর্তা বলেন, সমন্বয়কারী অফিসারেরাই আবগারি পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব পালন করবেন।
আবগারি দফতর সূত্রের খবর, এ রাজ্যে মদের উপর শুল্ক অন্য রাজ্যের থেকে বেশি। তাই অসম, ওড়িশা, সিকিম, ঝাড়খণ্ড থেকে সব সময়ই চোরা পথে এ রাজ্যে মদ ঢোকে। ভোটের আগে চালান অনেক বেড়ে যায়। এ বার সেই পথে চোলাই মদ ঢোকা আটকাতে এই চার রাজ্যের সীমানায় কড়া পাহারার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন রাজ্যের আবগারি দফতরের কর্তারা। তার ভিত্তিতেই এ রাজ্যের কর্তারা ওই চার রাজ্যের আবগারি দফতরের আধিকারিদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ভোটের সময় চোরা পথে মদ চালানে লাগাম দিতে যেন তাঁরা সক্রিয় ব্যবস্থা নেন।
এ রাজ্যে পাঁচ দফায় ভোট। প্রথম দফার ভোট শুরু হচ্ছে ১৭ এপ্রিল। ইতিমধ্যেই সিকিমে ভোট পর্ব মিটেছে। অসমে ১৪টি আসনের মধ্যে ৮টির ভোট হয়ে গিয়েছে। তাই ওই দুই রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে চোরা পথে মদ ঢোকার আশঙ্কা বেশি।
এই সব রাজ্যের সীমানাগুলিতে ২৪ ঘণ্টা তল্লাশি অভিযান চালাতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রগুলির বিশেষ দলকে।
আবগারি দফতরের দাবি, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ আসার পরে ৫ মার্চ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়। শনিবার পর্যন্ত তারা ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫৭৭ লিটার চোলাই মদ আটক করেছে, যার মূল্য আনুমানিক ২ কোটি ১৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪২১ জনকে।
শুধু আবগারি দফতর নয়, ভোট কেনা রুখতেও আয়কর দফতরের আধিকারিকদের কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।