‘মানবিক’ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে হকার-নীতি তৈরির পথে রাজ্য

দীর্ঘ টালবাহানার পরে অবশেষে হকার-নীতি তৈরির পথে হাঁটা শুরু করল রাজ্য সরকার। পথচারী এবং হকার দুই তরফের অধিকার রক্ষা হবে, এমন হকার-নীতিই তৈরির লক্ষ্য সরকারের।

Advertisement

অত্রি মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৯:২৭
Share:

দীর্ঘ টালবাহানার পরে অবশেষে হকার-নীতি তৈরির পথে হাঁটা শুরু করল রাজ্য সরকার।

Advertisement

পথচারী এবং হকার দুই তরফের অধিকার রক্ষা হবে, এমন হকার-নীতিই তৈরির লক্ষ্য সরকারের। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ, তবে তার সম্ভাব্য রূপরেখা শুক্রবার এই নীতি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে জমা দিয়েছে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।

রাজ্যের মন্ত্রিগোষ্ঠী এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরে তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলে এটি বিল আকারে বিধানসভায় পেশ করা হবে। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে এখনও দেরি আছে। তবে হকারদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বিষয়টি দেখছে সরকার।”

Advertisement

হকার নিয়ে সুস্পষ্ট নীতি তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। দ্রুত হকার-নীতি তৈরির জন্য রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও। তবুও বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তেমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে, কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন শহরে ফুটপাথ জুড়ে হকার-দৌরাত্ম্য বজায় ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার আগে হকারদের জন্য সুস্পষ্ট নীতি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। হকারদের আন্দোলনেও নানা সময়েও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল তাঁর।

রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “হকার আন্দোলনের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জড়িত থাকার নির্দিষ্ট ইতিহাস আছে। রাজ্য জুড়ে হকারের সংখ্যা কয়েক লক্ষ। সেই হিসেবে, লোকসভা ভোটের ঠিক আগে হকার-নীতি নিয়ে সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।”

এ দিন মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এবং পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান হলেও এ দিনের বৈঠতে থাকতে পারেননি রাজ্যের শিল্প ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বৈঠকের পরে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “হকার এবং পথচারীদের স্বার্থ রক্ষা হবে, এমন ভাবনা মাথায় রেখেই হকার-নীতি তৈরি করবে রাজ্য সরকার।”

পথচারী এবং হকার উভয়ের স্বার্থ রক্ষার কথা ভেবে প্রতিটি কর্পোরেশন এবং পুরসভার রাস্তার দু’পাশকে চারটি ভাগে বা জোন-এ ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি জোনে সারা দিন হকার বসতে পারবে, আর একটিতে কখনওই বসতে পারবে না হকার। বাকি দু’টি জোনের ক্ষেত্রে, হকারেরা হয় দিনে অথবা রাতে বসতে পারবে। তবে কোথায়, কখন, কত জন হকার বসতে পারবেন, তা ঠিক করবে সংশ্লিষ্ট পুরসভা-কর্তৃপক্ষ। এ জন্য প্রতিটি পুরসভায় পৃথক ‘ভেন্ডিং কমিটি’ তৈরি করা হবে।

পুরসভার কমিশনার বা এগজিকিউটিভ অফিসার-সহ জনপ্রতিনিধি, সরকার-মনোনীত প্রতিনিধি, পুলিশ, বাসিন্দা এবং হকারদের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই কমিটি তৈরি হবে। হকারদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মহিলা প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে এ দিন। ওই কমিটি পুরসভার সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে নির্দিষ্ট এলাকায় হকারের সংখ্যা, তাঁদের পরিচয়পত্র, রেজিস্ট্রেশন-সহ হকারদের ফি গ্রহণ করার বিষয়টিও দেখবে। বিভিন্ন এলাকায় হকারদের তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট সময় অন্তর হকার-এলাকা পরিদর্শন করার দায়িত্বেও থাকবে ওই কমিটি।

ভেন্ডিং কমিটির উপরে থাকবে পুরসভা এবং প্ল্যানিং অথরিটি। কোথায় কী ভাবে হকারেরা বসতে পারবেন, তা ঠিক করবে তারা। রাজ্য জুড়ে এই পুরো ব্যবস্থা সুসংহত ভাবে চালাতে এবং নানা সমস্যা দূর করতে রাজ্য স্তরে হকার নিয়ে এক জন নোডাল অফিসার নিয়োগেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

তবে নতুন হকার-নীতির ফলে কোনও রাস্তা থেকে হকার তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার মানবিক ভূমিকাই নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে কোনও হকারকে ফুটপাথ থেকে তুলে দেওয়ার আগে যথাযথ পুনর্বাসন কিংবা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হবে। তবে হকার বসার জন্য যাতে নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত না হয়, তার দিকে কড়া নজর দিতে হবে। প্রতিটি এলাকায় কোনও পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে যথাযথ পর্যবেক্ষণ করানোর পরেই ঠিক হবে কোথায়, কখন, কত হকার বসবে। হকারদের রেজিস্ট্রেশন ফি ২৫০ টাকার কম ও দেরিতে রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণ করার জন্য জরিমানা কখনওই পাঁচশো টাকার বেশি না করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এ দিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement