একেবারে ক্লাসে ঢুকে ছাত্র-শিক্ষকদের শাসানোর অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। আছে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ, যার জেরে ক্লাস বয়কট পর্যন্ত করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। এখানেই শেষ নয়, তাঁর বিরুদ্ধে আছে দুই শিক্ষককে হেনস্থার অভিযোগও। এবং এ-পর্যন্ত কোনও অভিযোগেরই সুরাহা হয়নি।
এমন অভিযোগের গন্ধমাদন যে-ছাত্রনেতার মাথায়, সেই সৌরভ অধিকারীকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক করা হল। ওখানে প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদ দখল করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি।
শুক্রবার টিএমসিপি পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের পদাধিকারীদের নাম ঘোষণার পরে প্রশ্ন উঠেছে, যাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে পদে বসিয়ে কি ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে শাসক দলের ছাত্র শাখা?
রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র সৌরভ নিজে অবশ্য কোনও বিতর্কে জড়িত থাকার অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “প্রায় ১০ মাস আগে এক শিক্ষককে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল আমার বিরুদ্ধে। সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলেছি। ওই শিক্ষকের সঙ্গে আর কোনও গোলমাল নেই।”
কিন্তু সেই ঘটনার পরেও ক্লাসে ঢুকে হুমকি দিয়ে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে সৌরভের বিরুদ্ধে। নিরাপত্তার দাবিতে প্রায় এক সপ্তাহ ক্লাস বয়কট করেন শারীরবিদ্যা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। গোলমাল মেটাতে আসরে নেমেছিলেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তার মাসখানেক বাদে শারীরবিদ্যার শিক্ষিকা, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মেয়ে রোশেনারা মিশ্রকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে সৌরভের বিরুদ্ধে। পুলিশের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রোশেনারাদেবীর।
পুলিশ জানায়, অভিযোগের তদন্ত চলছে। সৌরভ নিজে তো ওই সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেনই। তাঁর সংগঠনের অন্যতম নেতা সুজিত শাম এক ধাপ এগিয়ে সৌরভকে ‘ভাল ছেলে’, ‘দক্ষ প্রশাসক’ বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। যাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের অন্ত নেই, তাঁকে সংসদে কর্তার পদ কেন দেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে সুজিতের পাল্টা প্রশ্ন, “ও থাকতে অন্য কাউকে সাধারণ সম্পাদক করাই বা হবে কেন?”
ছাত্র-শিক্ষকদের শাসানো, সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগই শুধু নয়। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখানোয় সৌরভকে ফোন করে ধমক দিয়েছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু শাসক দলের ছাত্র শাখার নতুন কর্তারা তাঁকে কোনও শাস্তি দেননি।
টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র আরও সময় দিতে চেয়েছিলেন সৌরভকে। নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা ভবনের দোতলায় সেনেট হলের সামনে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভে দেখানো হয় সৌরভের নেতৃত্বেই। পার্থবাবুর ধমক ছিল সেই কারণেই। তা সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেননি অশোক। উপরন্তু এ বার বড় পদ পেয়ে গেলেন সৌরভ।
সৌরভই প্রথম নন। নকল করে বাধা দেওয়ায় শিক্ষককে মারধর থেকে শুরু করে ছাত্রী-নিগ্রহে অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ দাস (বাপ্পা) এখনও রবীন্দ্রভারতীর ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। সৌরভের আগে যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তিনি আবার চটুল নাচগানে নবীনবরণের আয়োজন করে বিতর্কে জড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভাঙার অভিযোগ আছে তাঁর নামে। এ বার সৌরভকে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক করে টিএমসিপি বিতর্কের ধারাই বজায় রাখল, মনে করছেন শিক্ষাজগতের অনেকে।