তৃণমূল সরকারের বর্ধিত কর আদায়ের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেন দলেরই সাংসদ। ফলে, নতুন হারে উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুরের গরু-হাট থেকে কর আদায় করতে গিয়ে পিছিয়ে আসতে হল সরকার পক্ষকে।
রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের অধীন হাওড়া জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটি সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেয়, উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুরের গরু-হাট থেকে বর্ধিত হারে কর নেওয়া হবে ব্যবসায়ীদের থেকে। এতে দফতরের আয় বাড়বে। রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়ের উপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোমবার থেকে কর আদায় করার কথা ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বাধায় ব্যর্থ হন কর আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা। তাঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ কর আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্ণধার রমেন সাঁইয়ের। যদিও মারধরের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর তাঁদের বাড়তি কর না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন উলুবেড়িয়ার সাংসদ সুলতান আহমেদ। মন্ত্রীর কাছে কম হারে কর নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনা নিয়ে অস্বস্তি মন্ত্রীর গলায়। অরূপবাবু বলেন, “আসলে ব্যবসায়ীরা সাংসদকে ভুল বুঝিয়েছেন। আমি তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসে ঠিকঠাক তথ্য জানিয়ে দেব। আশা করি, তার পরে সাংসদের আর আপত্তি থাকবে না।” কিন্তু রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা যদি দলেরই সাংসদ করেন, তা হলে জনতার কাছে কী বার্তা যাবে? মন্ত্রী জবাব দেননি। তবে তৃণমূল অন্দরের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে অরূপবাবু এ ঘটনায় নিজের ক্ষোভ লুকোননি। পক্ষান্তরে, সুলতানের মন্তব্য, “মন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি, বর্ধিত হারে কর নেওয়া যাবে না।”
১২ বছর ধরে বীরশিবপুরের এই গরু-হাটটি সপ্তাহে তিন দিন করে বসে। হাওড়া জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটি হাটটির লাইসেন্স যাঁকে দিয়েছে, তিনি বছরে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা কর দেন সরকারকে। তবে বিধানসভার কৃষি বিপণন সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি সুপারিশ করে বিভিন্ন বাজারের কর-কাঠামো সমীক্ষা করে বর্ধিত হারে কর নিলে দফতরের আয় অনেকটাই বাড়ানো যাবে।
সেই সূত্রেই কৃষি বিপণন দফতর রাজ্য জুড়ে তাদের হাতে থাকা বাজার-হাটগুলির সমীক্ষা করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় বর্ধিত কর নেওয়ার। ঠিক হয়, বীরশিবপুরের গরু-হাট থেকে বছরে অন্তত ২ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা কর আদায় করা যেতে পারে। কর আদায়ের নতুন সূত্রটি হলহাটের মালিক যেমন কর দিচ্ছেন, দেবেন। তবে তার সঙ্গে হাটে আসা ট্রাকে যতগুলি গরু থাকবে তাদের মোট দামের ১ শতাংশ সরকারকে কর দিতে হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে সংশোধিত হারে কর আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা রাজি হননি। কর আদায় করার দিন দু’বার পিছোয়। সোমবারও কর আদায় করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়ে রণে ভঙ্গ দিতে হয় এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীদের।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদায় গরুর হাট থেকে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি ট্রাক পিছু ৩০০ টাকা হারে কর নেয়। বীরশিবপুরে তার চেয়ে অনেক বেশি কর চাওয়া হচ্ছে কেন? সুলতান আহমেদ বলেন, “একটা ট্রাকে গড়ে ২০টা গরু থাকে। তাদের দাম পাঁচ লক্ষ টাকা হলে নতুন হিসেবে কর দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু এত টাকা কর দেওয়া ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, গরু বেচে তাঁদের অত লাভ হয় না।”
অরূপবাবুর কথায়, সব খতিয়ে দেখেই বর্ধিত কর আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে, তা থেকে সরে আসার প্রশ্ন নেই। তিনি বলেন, “বেলদাতেও নতুন হারেই কর নেওয়া হয়। সাংসদকে ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে।” তা হলে বীরশিবপুরে নতুন হারে কর নেওয়া কবে থেকে শুরু হবে? মন্ত্রী বলেন, “পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী দিন ঠিক করব।”