সব জেলার পুলিশ সুপার, জেলাশাসক ও রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক সেরে মঙ্গলবার রাতে কলকাতা ছাড়ার আগে রাজ্যে আরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন উপ-নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসি। কমিশন সূত্রের খবর, ১২ মে শেষ দফার ভোটে বাড়তি ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এ রাজ্যে আসতে পারে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে স্পর্শকাতর বুথের তালিকা নিয়ে আগামী ২৮ মার্চ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) সুনীল গুপ্তকে দিল্লিতে তলব করেছে কমিশন।
গত দু’দিন কলকাতায় ছিলেন জুৎসি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে অধিকাংশ নেতা তাঁর কাছে কার্যত একটাই অভিযোগ জানান, কমিশনের কাছে তাঁরা যে সব অভিযোগ করেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই তার সুরাহা মিলছে না। অভিযোগের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের অনীহা নিয়েও জুৎসির কাছে উষ্মা প্রকাশ করেন একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা। সেই সব অভিযোগের প্রেক্ষাপটে জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের উপস্থিতিতে কমিশন-কর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন জুৎসি। এমনকী, কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারকে আরও এক দফা সতর্ক করে সমস্ত অভিযোগের দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেন উপ-নির্বাচন কমিশনার।
আর এর পরেই নড়েচড়ে বসেছে সিইও দফতর। উপ-নির্বাচন কমিশনার কলকাতা ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বুধবার তৃণমূল কর্মিসভায় সৌগত রায়ের বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ ও জেলাশাসকের রিপোর্ট দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে তারা। মঙ্গলবার বিরোধী দলগুলি একযোগে সৌগতবাবুর বক্তব্য তুলে অভিযোগ জানিয়েছিল জুৎসির কাছে। একই সঙ্গে বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং সিপিএম নেতা আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগের ভিত্তিতে বীরভূমের জেলাশাসকের রিপোর্টও দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। এক কমিশন-কর্তা বলেন, “রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে টাকা পাঠানোর যে অভিযোগ মালদহেরই এক ব্যবসায়ী করেছেন, সে সম্পর্কে জেলাশাসক এখনও রিপোর্ট পাঠাননি। এলেই উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
কমিশন সূত্রের খবর, এসপি-ডিএম এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে একান্তে কথা বলার পাশাপাশি নিজস্ব সূত্রেও রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন জুৎসি। তাঁর বক্তব্য, “আমি এখানকার পরিস্থিতি নিয়ে খবরাখবর নিয়েছি। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটের চেয়েও এ বার বেশি বাহিনী দেওয়া হবে। প্রাথমিক ভাবে ভোটে যত বাহিনী মোতায়েনের কথা ভাবা হয়েছিল, এ বার তা বাড়তে পারে।” জুৎসির এই বক্তব্য সামনে রেখে বুধবার নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে আর এক দফা বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা।
রাজ্যে পঞ্চম তথা শেষ দফায় ভোট ১২ মে। সে দিন ১৭টি লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন হবে। তাই শেষ দফাতেই বাড়তি বাহিনী মোতায়েন করতে চাইছে কমিশন। সিইও দফতর সূত্রের খবর, সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলেও যেখানে গোলমালের আশঙ্কা, সেখানে মাইক্রো অবজারভার, ভিডিও ওয়েবকাস্টিং-এর মাধ্যমে নজর রাখবে নির্বাচন কমিশন।