বিধবাপল্লির জন্য থামল না দিদির লঞ্চ

সারা দিন প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে অপেক্ষাই সার। বেলা পর্যন্ত বসে থেকেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখা মিলল না। তিনটে অবধি বসে থেকে চোখের সামনে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর লঞ্চ ভুটভুটিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখার হতাশা আর চেপে রাখতে পারছিলেন না বিশাখা, কৌশল্যা, কমলারা। সুন্দরবনের বিভিন্ন বিধবাপল্লির এই মেয়েরা বললেন, “মুখ্যমন্ত্রীর লঞ্চের দিকে বারবার হাত নাড়লাম। ভেবেছিলাম, উনি হয়তো একবার দেখবেন। কিন্তু ফিরেও তাকালেন না!”

Advertisement

সামসুল হুদা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:০১
Share:

মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা গিয়েছেন ওঁদের স্বামী-সন্তানেরা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে ফেস্টুন হাতে দিনভর নদীর ধারে বসে রইলেন নিহত মৎস্যজীবীদের পরিবারের সদস্যেরা। —নিজস্ব চিত্র

সারা দিন প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে অপেক্ষাই সার। বেলা পর্যন্ত বসে থেকেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখা মিলল না। তিনটে অবধি বসে থেকে চোখের সামনে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর লঞ্চ ভুটভুটিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখার হতাশা আর চেপে রাখতে পারছিলেন না বিশাখা, কৌশল্যা, কমলারা। সুন্দরবনের বিভিন্ন বিধবাপল্লির এই মেয়েরা বললেন, “মুখ্যমন্ত্রীর লঞ্চের দিকে বারবার হাত নাড়লাম। ভেবেছিলাম, উনি হয়তো একবার দেখবেন। কিন্তু ফিরেও তাকালেন না!”

Advertisement

কেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একবার কথা বলার জন্য এত আকুলতা ছিল ওঁদের? বাঘের আক্রমণে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের এই মহিলারা জানালেন, ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী সুন্দরবনে এসে তাঁদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘সরকার তোমাদের ব্যবস্থা করবে’। কিন্তু কৌশল্যা, কমলাদের দাবি, সরকারি সহযোগিতার সেই আশ্বাসের কিছুই ওদের কাছে পৌঁছয়নি। আজও। ওঁদের কথায়, “২০১১ সালে এসে যে আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন, তা আজ পর্যন্ত কিছুই হল না। আজ নদী ধারে সারা দিন বসেই থাকলাম শুধু মাত্র মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব বলে। কিন্তু ওনার সময় হল না!”

হতদরিদ্র এই বিধবাদের সঙ্গে দেখা না করে ওই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীকী করছিলেন?

Advertisement

এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ ঘুম থেকে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। সজনেখালি রেঞ্জ অফিসে ১৫ পাক হেঁটে প্রাতর্ভ্রমণ সেরেছেন। তাঁর অতিথিদের মধ্যে ছিলেন কয়েক জন শিল্পপতি, সঙ্গীতশিল্পী। অতিথিরা ব্যাডমিন্টন খেলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী না খেললেও হাততালি দিয়ে তাঁদের উৎসাহিত করেছেন। এর ফাঁকেই তিনি শিল্পপতিদের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেন। বেলা ১২টা ১০ নাগাদ সজনেখালি থেকে ‘এমভি পরমহংস’ নামে একটি বিলাসবহুল লঞ্চে ওঠেন। বেসরকারি এই লঞ্চে বসেই তিনি অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। দুপুর ১টা ৪০ নাগাদ লঞ্চ ওই এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

লঞ্চ যখন সজনেখালি ছেড়ে জলে ভেসেছে, তখনই উল্টো দিকে পাখিরালয়ে জড়ো হওয়া বিধবারা হাত তুলে, প্ল্যাকার্ড নাড়িয়ে, চিৎকার করে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তাঁদের কারও হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, “দিদি আমরা বিধবারা কবে পাব টাকা,” কারও প্ল্যাকার্ডে আকুতি, “মুখ্যমন্ত্রী দেখে যান, বিধবারা কেমন আছে।”

মুখ্যমন্ত্রীর লঞ্চ অবশ্য থামেনি। নিজের মতো করেই বেরিয়ে গিয়েছে। একবার থেমেছিল বটে, তবে তা নেতিধোপানির ঘাটে। এ দিনও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই ছিলেন পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এই গোটা সফরের পরিকল্পনা তাঁরই। তবে এ দিন পরিবহণ সচিব দাবি করেছেন, সোমবার কুলতলিও ঝড়খালিতে উদ্বোধনীঅনুষ্ঠানগুলির পরিচালনার দায়িত্বে তিনি ছিলেন না।

বিধবা মহিলাদের সঙ্গে দেখা না করলেও সোমবার আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান মুখ্যমন্ত্রী। সে দিন ঝড়খালি থেকে লঞ্চে সজনেখালি আসেন মমতা। সেখান থেকে অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে দয়াপুরে ঘুরতে গিয়ে আদিবাসী মহিলাদের নাচ দেখেন। ‘ধিতাং ধিতাং বোলে’ গানও গেয়ে শোনান তাঁদের।

নাচ-গান-খেলা, শিল্প-প্রশাসনে ঠাসা এই সফরে মমতার নাগাল পেলেন না কেবল বিধবাপল্লির মেয়েরা। অগত্যা ‘বাঘের কামড়ে স্বামীহারা বিধবাদের ক্ষতিপূরণ চাই’ লেখা সাদা কাগজ গুটিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement