সংবিধানের ৩৯বি অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিল সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিকে সব ক্ষেত্রে অধিগ্রহণ করতে পারে না সরকার। মঙ্গলবার এই রায় দিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ৯ বিচারপতির বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতের মতে, ব্যক্তি মালিকানাধীন সব সম্পত্তি গোষ্ঠী উন্নতির কাজে ব্যবহারের মতো নয়। ফলে জনস্বার্থের কারণ দেখিয়ে সেগুলি অধিগ্রহণ করা যায় না।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি হৃষীকেশ রায়, বিচারপতি বিভি নাগরত্ন, বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা, বিচারপতি মনোজ মিশ্র, বিচারপতি রাজেশ বিন্দল, বিচারপতি এসসি শর্মা এবং বিচারপতি এজি মাসিহ্ এই মামলাটি শুনছিলেন। মামলায় তিনটি রায় লিখেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। একটি রায় লিখেছেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবং আরও ছ’জন বিচারপতি। অপর একটি রায় লিখেছেন বিচারপতি নাগরত্ন। তিনি পৃথক রায় দিলেও প্রথম রায়ের সঙ্গেই সহমত পোষণ করেছেন। তৃতীয় রায়টি লিখেছেন বিচারপতি ধুলিয়া। তিনি ভিন্ন মত পোষণ করেছেন।
সংবিধানের ৩১সি অনুচ্ছেদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই মামলা। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ সরকারকে নির্দেশমূলক নীতি পূরণের জন্য আইনগুলিকে সুরক্ষিত করে। সংবিধানের ৩৯বি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সম্পর্কিত আইনগুলি এই সুরক্ষার আওতায় রয়েছে। ৩৯বি অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনও সম্পত্তি গোষ্ঠী উন্নয়নের জন্য সরকার জনস্বার্থে অধিগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে সম্পত্তি বলতে ব্যক্তিগত সম্পত্তিও বোঝানো হয় কি না, তার নির্দিষ্ট উল্লেখ নেই। ওই অংশ নিয়েই দীর্ঘ দিন ধরে মামলা চলছিল।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, তাত্ত্বিক ভাবে দেখলে এর মধ্যে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তিও রয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিটি সম্পত্তিই যে গোষ্ঠীর কাজে ব্যবহার করা যাবে— এমন কোনও বিষয় নেই। এ ক্ষেত্রে একাধিক মাপকাঠির কথা উল্লেখ করেছেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি। যেমন, সেটি কী ধরনের সম্পত্তি, সেটির বৈশিষ্ট্য , গোষ্ঠী উন্নয়নে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, ওই ধরনের সম্পত্তির অভাব রয়েছে কি না, বা সেটি ব্যক্তি মালিকানায় থাকলে কী প্রভাব পড়তে পারে— এমন বেশ কিছু বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ৩৯বি অনুচ্ছেদ নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে সত্তরের দশক থেকে। ১৯৭৭ সালেও এক বার এই অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলা উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টে। ওই সময়ে সাত বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছিল, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সব সম্পত্তি সংবিধানের ৩৯বি অনুচ্ছেদে বর্ণিত সম্পত্তির আওতায় পড়ে না। চার জন বিচারপতি এই মত জানিয়েছিলেন। তিন জন ভিন্ন মত পোষণ করেছিলেন। সেই সময় বিচারপতি কৃষ্ণা আইয়ারের রায় ছিল সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ধরনের সম্পত্তিই সংবিধানের ৩৯বি অনুচ্ছেদের আওতায় পড়ে।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় মতের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন বিচারপতি নাগরত্ন। তিনি ১৯৭৭ সালে বিচারপতি আইয়ারের রায়ের কথা তুলে ধরেছেন নিজের পর্যবেক্ষণে।