মাছের চাহিদা মেটাতে এ বার বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের মৎস্য দফতর একাধিক প্রজাতির পরীক্ষামূলক ভাবে মাছ চাষে উদ্যোগী হয়েছে। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের দাবি, “সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের পুজোর সময় বাজারে পরীক্ষামূলক ভাবে ওই মাছ ছাড়া হবে।”
মাস চারেক আগে কলকাতার উপকণ্ঠে একটি সভায় রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রীর কাছে ওই এলাকার মাছ ব্যাবসায়ীদের একাংশ মাছের আগুন দরের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে এই রাজ্যে দিন দিন মাছের চাহিদা বাড়ার প্রসঙ্গ তুলে প্রয়োজনীয় বিকল্প ব্যাবস্থা নেওয়ার আর্জিও জানিয়েছিলেন তাঁরা। এরপরই নিজের দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে একটি জরুরী বৈঠক করেন মৎস্য মন্ত্রী। ওই বৈঠকে বিকল্প মাছ চাষের ব্যাবস্থা করে দৈনিক বাজারের চাহিদা কিভাবে মেটানো যায় এবং ওই চাষকে কি ভাবে অর্থকরী করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়। মন্ত্রী জানান, বিস্তর ওই আলোচনায় উঠে আসা বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে, বিকল্প মাছ চাষের উদ্যোগ নেয় মৎস্য দফতর। ঠিক হয়, পরীক্ষামূলক ভাবে, তিনটি প্রজাতির অর্থকরী মাছ চাষ করবে রাজ্য।
রাজ্য মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্য থেকে প্রতিদিন এ রাজ্যের বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য মাছ আমদানি করতে হয়। ঋতু কেন্দ্রিক মাছের জন্য বাংলাদেশের ওপরও নির্ভর করে পশ্চিমবঙ্গ। চন্দ্রনাথবাবুর অবশ্য দাবি, দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিবেশী রাজ্যের ওপর নির্ভরশীল হলেও, এই রাজ্য থেকে বেশ কিছু প্রজাতির মাছ বিদেশেও রফতানি করা হয়।
দফতর সূত্রে খবর, গলদা চিংড়ি, পমফ্রেট এবং সিঙ্গি তথা মাগুর জাতীয় যথাক্রমে চ্যাঙ্গোস, পমপানো এবং কোবিলা প্রজাতির মাছ চাষে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই চেন্নাইয়ের কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্ট্রাল মেরিন ফিসারি রিসার্চ ইন্সটিউট থেকে এই তিন রকম প্রজাতির মাছের চারা এনেছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, ৪০ হাজার চ্যাঙ্গোস চারা সুন্দরবনের কাছে, দিঘার আলোমপুরে ৭৬ হাজার পমপানো প্রায় দু’ হেক্টর জমিতে এবং দিঘা এলাকায় ৩৬ হাজার চারা কোবিয়া চাষ শুরু করা হয়েছে।
সবকটি মাছই নোনা জলের। বিশেষজ্ঞদের কথায়, আনুমানিক ছয় মাসের মধ্যে এক একটি প্রজাতির ওই মাছ প্রায় এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের হবে। তবে মাস তিনেকের বয়সে ওই মাছ গুলি সাধারণত ৪০০ থেকে সাড়ে চারশো গ্রাম ওজনের হয়।
রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “বিকল্প মাছ চাষ নিয়ে আমাদের দফতর বেশ কয়েকদিন ধরে উদ্যোগী হয়েছিল। রাজ্যবাসীর পাতের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ব্যাবসায়ীদের কাছে এটিকে অর্থকরী চাষ হিসেবে তুলে ধরতে বেশ কিছু উদ্যোগ ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, পরীক্ষামূলক ভাবে তিনটি প্রজাতির মাছের চাষ রাজ্যে শুরু করেছি। আশা করছি, এবারের পুজোর আগে সুলভ দরে বাজারে ওই তিন রকমের মাছ দিতে পারব।”