ফেরার হয়েও কমিশনে, পুলিশের কব্জায় এমপিএস-কর্তা

পালে বাঘ পড়ে এক দিনই। এমপিএস সংস্থার কর্ণধার প্রমথনাথ মান্নার ক্ষেত্রে সেটা হল শুক্রবার। পুলিশের খাতায় তিনি ফেরার। অথচ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন খাস কলকাতায়। হাজিরা দিচ্ছিলেন বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনেও! প্রমথবাবু এবং তাঁর সংস্থার অন্য ডিরেক্টর প্রবীর চন্দ্র এ দিনও হাজির হন ওই কমিশনের অফিসে। এ দিনও হয়তো বেরিয়ে যেতেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৮
Share:

শ্যামল সেন কমিশনে এমপিএস-কর্তা প্রমথনাথ মান্না। —নিজস্ব চিত্র।

পালে বাঘ পড়ে এক দিনই। এমপিএস সংস্থার কর্ণধার প্রমথনাথ মান্নার ক্ষেত্রে সেটা হল শুক্রবার। পুলিশের খাতায় তিনি ফেরার। অথচ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন খাস কলকাতায়। হাজিরা দিচ্ছিলেন বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনেও!

Advertisement

প্রমথবাবু এবং তাঁর সংস্থার অন্য ডিরেক্টর প্রবীর চন্দ্র এ দিনও হাজির হন ওই কমিশনের অফিসে। এ দিনও হয়তো বেরিয়ে যেতেন। কিন্তু বাদ সাধলেন আমানতকারীদের আইনজীবী অরিন্দম দাস। তিনি কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনকে জানান, বাঁকুড়া থানায় প্রমথবাবু ও প্রবীরবাবুর নামে মামলা রয়েছে। তিনি জামিনও নেননি। কমিশন তখনই বাঁকুড়া থানায় ফোন করে খোঁজখবর নেয়। পুলিশ যে প্রমথবাবুকে খুঁজছে, তা জানতে পেরেই হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ ডেকে এমপিএস-কর্ণধার এবং তাঁর সঙ্গীকে আটক করা হয়। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “শ্যামল সেন কমিশনের দফতর হেয়ার স্ট্রিট থানার অধীনে পড়ে। তাই কমিশন থেকে ওই থানায় খবর দেওয়া হয়। হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ প্রমথবাবুকে তাদের হেফাজতে রেখেছে। খবর দেওয়া হয়েছে বাঁকুড়া থানার পুলিশকে।”

সেন কমিশন হঠাৎই এ ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠল কেন?

Advertisement

কমিশনের একাংশ জানিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্তে নামার পরে একের পর এক গ্রেফতার করা হচ্ছে অভিযুক্তদের। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-ও সারদা-সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। অথচ গত প্রায় এক বছর ধরে কমিশন সারদা কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশকে ক্ষতিপূরণের চেক বিলি ছাড়া কার্যত আর কিছুই করেনি। এতে কমিশনের ভাবমূর্তি নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তাই নিজেদের ভাবমূর্তি উদ্ধারের জন্যই এখন সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে কমিশন। এ দিন এমপিএসের কর্ণধারকে ধরিয়ে দেওয়াটা সেই প্রক্রিয়ার একটি অংশ বলে মনে করছেন অনেকেই।

প্রথমবাবুদের বিরুদ্ধে ঠিক কী কী কী অভিযোগ আছে?

ঝাড়গ্রাম শহরের উপকণ্ঠে বিনপুর থানার দহিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের দিঘিশোল মৌজায় ৪০০ একর জায়গা জুড়ে ছিল এমপিএসের বহুমুখী কৃষি খামার। প্রমথবাবু তার ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ১৯৯৩ সালে ওই খামারের কাজ শুরু হয়। ক্রমে বিশাল ওই এলাকায় ছাগল, গরু, মুরগি, শুয়োর পালন, মাছ চাষ এবং জৈব সার ব্যবহার করে বিভিন্ন শাকসব্জি ও ফলের বাগান গড়ে তোলা হয়। মিনারেল ওয়াটার তৈরির প্ল্যান্টও ছিল। অভিযোগ, ওই পেল্লাই কর্মকাণ্ড দেখিয়েই বাজার থেকে দেদার টাকা তুলে যাচ্ছিল এমপিএস।

লগ্নিকারীদের আইনজীবী অরিন্দমবাবু জানান, ২০১২ সালে সেবি ওই সংস্থাকে বাজার থেকে

টাকা তোলা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। তার পরেও প্রমথবাবুরা টাকা তুলছিলেন। এই নিয়ে সেন কমিশনে অভিযোগ জানান আমানতকারীরা। তার ভিত্তিতেই মাসখানেক আগে কমিশনে হাজিরা দেন প্রমথবাবু। সে-দিন তাঁকে দেখে শ্যামলবাবু বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “এত সবের পরেও আপনি কী করে জেলের বাইরে থাকেন? আপনার তো বাইরে থাকার কথা নয়!” সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলা বন্ধ করতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

কমিশনে এ দিন অবশ্য প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন প্রমথবাবুর আইনজীবী। কমিশন সূত্রের খবর, প্রমথবাবুর আইনজীবী প্রথমেই অভিযোগ করেন, তাঁর মক্কেলকে হেনস্থা করা হতে পারে। পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা নেই। এমপিএস এখনও বাজার থেকে টাকা তুলছে বলে আমানতকারীদের আইনজীবী অভিযোগ করায় প্রমথবাবুর কৌঁসুলি জানান, তাঁরা টাকা তুলে যাবেন। কমিশন সূত্রের খবর, এ কথা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন চেয়ারম্যান। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তার পরেই অরিন্দমবাবু জানিয়ে দেন, বাঁকুড়া থানায় প্রমথবাবুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।

পুলিশি সূত্রের খবর, এই প্রথম নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানা এলাকার গোলগ্রামের আদি বাসিন্দা প্রমথবাবু আগেও প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। অর্থ লগ্নি সংস্থার ব্যবসাতেও তিনি নতুন নন। ’৭৮ সালে একটি বেসরকারি লগ্নি সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ’৮২ সালে পাঁচ সঙ্গীকে নিয়ে তৈরি করেন ‘শতদল সেভিংস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট (ইন্ডিয়া) লিমিটেড’। ওই লগ্নি সংস্থার এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন প্রমথবাবু। পাঁশকুড়া রেল স্টেশনের কাছে ঘর ভাড়া নিয়ে চলত শতদল সেভিংসের অফিস। ’৯৬ সালে ওই সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসেন প্রমথবাবু। তবে আমানতকারীদের টাকা না-মেটানোয় তমলুক আদালতে প্রতারণার মামলা হয়। ’৯৮ সালে প্রমথবাবু গ্রেফতারও হন। কিছু দিন জেল-হাজতে থাকার পরে তিনি জামিন পান। তবে সেই মামলা এখনও চলছে তমলুক আদালতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement