দুই পদত্যাগী। অনিন্দ্য মিত্র (বাঁ দিকে) ও বিমল চট্টোপাধ্যায়।
সাড়ে তিন বছরে দু’বার। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যের দু’-দু’জন অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) পদত্যাগপত্র পেশ করলেন রাজ্যপালের কাছে।
বছর দেড়েক আগে ইস্তফা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রথম অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র। তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন শুক্রবার। প্রথম জন জানিয়েছিলেন, তাঁর ইস্তফার কারণ একেবারেই ব্যক্তিগত। আর বিমলবাবু জানান, তাঁর ইস্তফা অসুস্থতাজনিত কারণে। তিনি বলেন, “আমি রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।”
রাজ্যের আইন দফতর সূত্রের খবর, সাত মাসেরও কম সময় এজি-পদে ছিলেন বিমলবাবু। অসুস্থতার জন্য এই মেয়াদের অনেকটা সময়ই তিনি নিয়মিত হাইকোর্টে হাজির হতে পারতেন না। মূলত বিমলবাবুর অনুপস্থিতির জন্যই প্রাক্তন জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল করা হয় অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনিই এখন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলার শুনানিতে নিয়মিত সওয়াল করছেন।
অ্যাডভোকেট জেনারেল পদটির গুরুত্ব এখানেই যে, রাজ্যের বিরুদ্ধে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সরকারের সেনাপতি ওই পদাধিকারীই। আইনি লড়াইয়ে সরকার পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করাই তাঁর কাজ। এ-হেন পদ থেকে অনিন্দ্যবাবু ইস্তফা দেওয়ার পরে কাকে সেখানে বসানো হবে, তা নিয়ে বিস্তর টানাপড়েন চলেছিল তৃণমূলে। একাধারে দক্ষ আইনজ্ঞ এবং তৃণমূল সরকারের আস্থাভাজন, এমন কৌঁসুলি কে আছেন, শুরু হয় খোঁজ।
কলকাতা হাইকোর্টের কৌঁসুলিদের একাংশ জানান, ক্ষমতায় আসার কিছু দিনের মধ্যেই তৃণমূল সরকারের একাধিক কাজের জন্য সমালোচনা শুরু হওয়ায় বেশ কয়েক জন প্রবীণ আইনজীবী ওই পদে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েও শেষ পর্যন্ত রাজি হননি। কেউই ওই পদে যোগ দিতে রাজি হচ্ছেন না দেখে রাজ্যের বর্তমান অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অ্যাডভোকেট জেনারেলের পদে যোগ দিতে অনুরোধ জানায় তৃণমূল। সেই সময় অশোকবাবু ছিলেন রাজ্যের জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার)। তৃণমূল সূত্রের খবর, একটি অনুষ্ঠানে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম-সহ দলের কয়েক জন শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতেই অশোকবাবুকে অ্যাডভোকেট জেনারেল হতে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু অশোবাবু তাঁদের জানান, তিনি শারীরিক ভাবে পুরো সুস্থ নন। জিপি হিসেবে তিনি যে-দায়িত্ব পালন করছিলেন, সেই কাজেই তাঁর বিস্তর পরিশ্রম হচ্ছে। আরও বেশি দায়িত্ব তিনি নিতে পারবেন না।
অশোকবাবু এজি হতে রাজি না-হওয়ায় তৃণমূল নেতৃত্ব সমস্যায় পড়ে যান। তত দিনে হাইকোর্টের অজস্র মামলায় সরকারের কাজকর্ম নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। বেগতিক দেখে প্রবীণ আইনজীবী বিমল চট্টোপাধ্যায়কে এজি-পদে বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়। আইন দফতরের এক কর্তা জানান, ওই দায়িত্ব নেওয়ার পরে পরেই লিভারের সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন বিমলবাবু। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য তাঁকে দিল্লিতেও যেতে হয়েছে। ইস্তফা দিয়েছেন অসুস্থতার জন্যই।
কিন্তু আইনজীবী মহলের জল্পনা অন্য রকম। ওই শিবিরের বক্তব্য, নানা ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে মতের মিল না-হওয়ায় সরে দাঁড়ালেন বিমলবাবু। অনিন্দ্যবাবুর ইস্তফার পিছনেও সেই মতবিরোধ বলে আইনজীবী শিবিরের একটি অংশের অভিমত। স্বভাবতই অনিন্দ্যবাবু তখন মুখ খোলেননি। এখন মুখ খুলছেন না বিমলবাবুও।