দূষণ এড়াতে ভারত থেকে আসা পণ্যের মোড়ক হিসাবে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করল বাংলাদেশ সরকার। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই যাতে ওই নিয়ম চালু হয়, তার জন্য ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার-সহ সমস্ত সীমান্ত বাণিজ্য বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং আমদানি-রফতানির সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের সবগুলি সীমান্ত বন্দর দিয়ে রোজ বিপুল পরিমাণে চাল, গম, ডাল ও অন্য খাদ্যশস্য বাংলাদেশে রফতানি হয়। এবং প্রায় সবটাই প্লাস্টিকের ব্যাগে। এ বার থেকে আর তা চলবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, গোটা দেশকেই প্লাস্টিক-মুক্ত এলাকা বলে ঘোষণা করেছে সরকার। দোকানে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ হওয়ায় পরিবেশবান্ধব কাগজের প্যাকেট ও ব্যাগই ব্যবহার হয় সর্বত্র। এই নিষেধাজ্ঞা রূপায়ণের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, কয়েক বছরের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারত থেকে আমদানি হয়ে আসা পণ্যের টন টন প্লাস্টিক প্যাকেট ও পলিথিনের বস্তা দূষণ ছড়াচ্ছে। আশপাশের জমির উর্বরতাও কমছে। অনেকে সেই বস্তা ব্যবহারও করছেন। তাই প্লাস্টিকের বস্তা আর ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ মাসের গোড়ায় রাজ্যের বেনাপোল, হিলি, মহদিপুর, চ্যাংড়াবান্ধা ও ঘোজাডাঙা সীমান্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ভারতের রফতানিকারীদের সংগঠনগুলিকে চিঠি দিয়ে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যেই যাবতীয় পণ্যসামগ্রী পাটের বস্তায় আনার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। কিন্তু এ পারের ব্যবসায়ীরা রফতানির পণ্যসামগ্রী দু’এক মাস আগে থেকেই বুকিং করে ফেলায়, বাড়তি সময় চাওয়া হয়।
এর পরে বাংলাদেশ সরকারের তরফে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহকারী কমিশনার মহিবুর ভুঁইঞা ৭ ডিসেম্বর ফের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি ভাবে আমদানি করা খাদ্যশস্যের জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে পাটের বস্তাই ব্যবহার করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই এই বিষয়টি কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হল।’ বাংলাদেশ সরকারের তরফে ওই নির্দেশ সীমান্ত বন্দর কর্তৃপক্ষগুলিকেও দেওয়া হয়েছে। ‘হিলি কাস্টমস অ্যান্ড ক্লিয়ারিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি বিকাশ মণ্ডল এ দিন বলেন, “ইতিমধ্যে আমরা প্লাস্টিকের বস্তা থেকে খাদ্যসামগ্রী বার করে চটের বস্তায় ভরে পাঠাতে শুরু করেছি। এর মধ্যে হাতে তিন দিন সময় মেলায় অনেকে আগের নিয়মেই প্লাস্টিকের বস্তা ভর্তি চালের ট্রাক দ্রুত হিলি চেকপোস্ট দিয়ে পাঠাচ্ছেন। তবে এর পরে আর তা চলবে না।”
বাংলাদেশের ওই নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের ধুঁকতে থাকা চটশিল্প লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কাস্টমস অ্যান্ড ক্লিয়ারিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের খবর, শুধু হিলি বাণিজ্য বন্দর দিয়েই রোজ গড়ে প্রায় ১০০টি চালের ট্রাক বাংলাদেশে যায়। বিকাশবাবু জানিয়েছেন, প্রতি ট্রাকে গড়ে ১৬ টন করে চাল থাকে। এক টন চাল ভরতে ২০টি বস্তার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ১৬ টন চালের জন্য প্রয়োজন হয় ৩২০টি বস্তা। আর ১০০টি ট্রাকের জন্য রোজ ৩২,০০০ বস্তা। এ ছাড়া যায় অন্য খাদ্যশস্যও। রাজ্যের সবগুলি সীমান্ত বাণিজ্য বন্দর দিয়ে প্রতিদিন যে পরিমাণ খাদ্যশস্য বাংলাদেশে রফতানি হয়, তার হিসাব ধরলে প্রচুর বস্তার চাহিদা তৈরি হল। রাজ্যের চটকলগুলি এর ফলে অবশ্যই লাভবান হবে।