সারদায় জড়িয়ে রাজের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র ইতিমধ্যে জেলে গিয়েছেন। জেরার মুখে পড়েছেন বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সারদা-তদন্তে এ বার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা মহলে উঠে আসছে রাজ্যের আর এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর নাম। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের পাশাপাশি যিনি কিনা সারদা গোষ্ঠীর বন্ধ হয়ে যাওয়া সংবাদমাধ্যমগুলি চালাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন বলে সিবিআইয়ের দাবি। মুকুলবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মুখ্যমন্ত্রীর ‘পাশে-পাশে’ থাকা কলকাতার ওই প্রভাবশালী মন্ত্রীর ‘সারদা-ভূমিকা’ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা এখন নিশ্চিত হতে চাইছেন।
সিবিআই-সূত্রের খবর: সারদা-কাণ্ডে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খান, রজত মজুমদার ও কুণাল ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, ২০১৩-র ৫ এপ্রিল নিজাম প্যালেসে মুকুলবাবুর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। চার দিন বাদে, ৯ এপ্রিল সুদীপ্ত কলকাতা ছেড়ে গা ঢাকা দেন। অভিযোগ, মাঝের ক’দিনে তিনি কয়েকশো কোটি টাকা মুকুলবাবুর কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। গোয়েন্দাদের দাবি, সুদীপ্তর গাড়ির চালক অরবিন্দ চৌহানকে জেরা করে একই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
আর এখানেই গোয়েন্দাদের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন ‘প্রভাবশালী’ মন্ত্রীটি। তদন্তকারীদের সন্দেহ, প্রকাশ্যে না-এলেও পর্দার আড়ালে থেকে সুদীপ্ত সেনের রেখে যাওয়া টাকার একাংশ তিনিও হস্তগত করেছেন। যার সূত্র ছিল সারদার বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। কী রকম?
সিবিআই-সূত্রের বক্তব্য: সুদীপ্ত সেন পালানোর পরে রাজ্য সরকার সারদা পরিচালিত কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে চালাতে উদ্যোগী হয়। মহাকরণে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, সারদার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। তদন্তকারীদের দাবি: কুণাল-রজত-আসিফেরা জানিয়েছেন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন সংক্রান্ত ‘কলম’ ও ‘আজাদ হিন্দ’ সংবাদপত্র দু’টি চালানোর জন্য মুকুল রায় এবং উল্লিখিত প্রভাবশালী মন্ত্রীকে সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল দলের সর্বোচ্চ মহল থেকে। তার পরেই, ২০১৩-র ১৫ এপ্রিল অর্থাৎ বাংলা নববর্ষের দিনে কলম পত্রিকার অফিসে মুকুল, রজত, আসিফ, তৃণমূল সাংসদ হাসান আহমেদ ইমরান, নাদিমুল হক, মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায় প্রমুখ বৈঠক করেন। সেখানে অবশ্য প্রভাবশালী মন্ত্রীটি উপস্থিত ছিলেন না।
শেষমেশ আইনি জটিলতায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। সারদার বন্ধ হয়ে যাওয়া সংবাদমাধ্যমের ঝাঁপ পরে আর খোলেনি। সিবিআই তদন্তে জেনেছে, সুদীপ্ত সেনের রেখে যাওয়া টাকা দিয়ে সেগুলো যাতে চালানো যায়, প্রভাবশালী মন্ত্রীটি গোড়ায় সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু সে পরিকল্পনা দিনের আলো না-দেখায় সুদীপ্তের দেওয়া বিপুল টাকার একাংশ তাঁর কাছেই রয়ে গিয়েছে বলে সিবিআই মনে করছেন। কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর এক কর্তার কথায়, “সারদা-কাণ্ডে ধৃত কুণাল ঘোষ, রজত মজুমদার, মদন মিত্র ও আসিফ খানকে জেরা করে জানা গিয়েছে, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে দলীয় কাজেও সারদার গচ্ছিত টাকার কিছুটা উনি খরচ করেছিলেন।”
বস্তুত ওই মন্ত্রীরই মারফত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ৪২ জন প্রার্থীকে টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে সিবিআই জানতে পেরেছে। তদন্তকারীদের দাবি, দলের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশেই তিনি ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় নেতা সারদার টাকা ভোটের কাজে খাটিয়েছিলেন।
এমতাবস্থায় রাজ্যের ‘প্রভাবশালী’ মন্ত্রীটি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা মুকলবাবুর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। “আর্থিক কেলেঙ্কারির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে মুকুলবাবুকে জিজ্ঞাসা করা হবে। সারদার টাকা তছরুপের ঘটনায় ওই প্রভাবশালী মন্ত্রীর যোগাযোগ কতটা, তা-ও মুকুলবাবুর কাছে জানতে চাওয়া হবে।” বলছেন এক সিবিআই অফিসার।