এই বাড়িটি ভেঙেই তৈরি হবে নয়া ভবন।—নিজস্ব চিত্র।
নবান্ন-র ঠিক পাশেই তৈরি হবে একটি প্রশাসনিক ভবন। চলতি বছরের জুলাই মাসে এর কাজ শুরু হওয়ার কথা। কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ১৫ মাস। খরচ হবে প্রায় ৪ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি, নবান্ন-র মানোন্নয়নে নেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা।
২০১৩-র অক্টোবর মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সচিবালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু দফতর মহাকরণ থেকে সরিয়ে আনেন নবান্ন-তে। মহাকরণের অন্য কয়েকটি দফতর নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং এবং বিধাননগর, আলিপুর প্রভৃতি জায়গার কিছু সরকারি ভবনে স্থানান্তরিত হয়। মহাকরণের প্রতিটি বিভাগ স্থানান্তরের পরে ঐতিহ্যপূর্ণ ওই বাড়িটির পর্যাপ্ত সংস্কার ও সংরক্ষণে আগ্রহী হন মুখ্যমন্ত্রী। এই অবস্থায় নবান্ন সংলগ্ন নতুন ভবন তৈরি হলে বিশেষ সুবিধা হবে।
নতুন প্রশাসনিক ভবন যেখানে তৈরি হবে, নির্মাণকাজের জন্য সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ১৬ কাঠা জমি। এখন সেখানে হাওড়া ট্রাফিক পুলিশের একটি বাড়ি আছে। সেটির হাল খুব জীর্ণ। বিভিন্ন জায়গায় ফাটল। দেওয়ালে বাড়ছে বটের চারা। পূর্ত সচিব ইন্দিবর পাণ্ডে বলেন, “নবান্ন-র গা ঘেঁষা এই পুরনো বাড়িটি ভেঙে নতুন ভবন হবে। প্রস্তাবিত ভবনটির জন্য নবান্ন-র কোনও অংশ ঢাকা পড়বে না।” পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর প্রাথমিক সায় মিলেছে। চূড়ান্ত সরকারি অনুমোদনের পরে নির্মাণকাজের বরাত দেওয়া হবে। পূর্ত দফতরের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার করুণ দে বলেন, “নয়া চারতলা ভবনে প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গা আছে। ১৫ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।”
যে বাড়িটি এখন রাজ্যের প্রধান সচিবালয়, ২০১০ সালে সেটি তৈরির কাজ শুরু হয় মূলত ‘গারমেন্ট পার্ক’ তৈরির লক্ষ্যে। কাজের তদারকির দায়িত্বে ছিল হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি)। ২০১২-তে কাজ শেষ হলেও বিভিন্ন কারণে ‘গারমেন্ট পার্ক’ করা যায়নি। পড়ে থাকা বাড়িটিকে প্রধান সচিবালয় করার ব্যাপারে আগ্রহী হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনিই ভবনটির নামকরণ করেন। এটির বিদ্যুত্-ব্যবস্থার জন্য আগেই ২ মেগাভোল্টের ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে। পূর্ত দফতরের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার (ইলেকট্রিক্যাল) শুভাশিস বিশ্বাস বলেন, “এই ভবন এবং প্রস্তাবিত ভবনের জন্য আরও ৩ মেগাভোল্টের সংযোগ করা হচ্ছে। সম্প্রসারিত হচ্ছে নবান্ন-র শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও।”
কর্মসংস্কৃতি আনার লক্ষ্যে নবান্ন-তে বায়োমেট্রিক যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, পর্যাপ্ত লিফ্ট না থাকায় তাঁদের বিভাগে উঠতে দেরি হচ্ছে। তাই ঠিক হয়েছে, প্রথম তল এবং দোতলায় ৪টি করে, তৃতীয় থেকে পঞ্চদশ তল পর্যন্ত ১টি করে বায়োমেট্রিক যন্ত্র বসানো হবে। এর সঙ্গে সাধারণ কর্মী এবং বহিরাগতদের জন্য আরও দু’টি লিফ্ট শীঘ্রই চালু হবে। এখন নবান্ন-তে আছে পাঁচটি লিফ্ট। এর মধ্যে দু’টি ভিআইপি-দের জন্য সংরক্ষিত।
পাশাপাশি, নবান্ন সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টির জমা জল দ্রুত বার করতে নিকাশি প্রকল্পে হাত দিয়েছে এইচআরবিসি। এখন বৃষ্টির জল বিদ্যাসাগর সেতুর ঢাল বেয়ে নবান্ন-র আশপাশে জমা হয়। তা বার করার ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বর্ষায় ফাঁপরে পড়ছিল প্রশাসন। এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান সাধনরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই নিকাশি প্রকল্পে খরচ হবে প্রায় ২ কোটি টাকা। জমা জল পাম্প করে কাছের একটি খালে ফেলা হবে। এই কাজ শেষ হবে জুলাইয়ে।”