গ্রেফতার হওয়া দূরের কথা, কারখানার গেটেই বিক্ষোভ দেখালেন অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর অরবিন্দ নন্দী। সোমবার। ছবি: বিকাশ মশান
রাতভর তল্লাশি চালিয়েও তাঁকে ধরা যায়নি বলে জানিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সোমবার সকালে দিব্যি লোকলস্কর নিয়ে বেসরকারি ইস্পাত কারখানার সামনে বিক্ষোভ দেখালেন দুর্গাপুরের তৃণমূল কাউন্সিলর অরবিন্দ নন্দী। সামনে পেয়েও তাঁকে ধরল না পুলিশ। রবিবার রাতে ওই কারখানায় ঢুকেই তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে অরবিন্দবাবুর বিরুদ্ধে। কারখানা কর্তৃপক্ষ এ দিন জানান, সেই ঘটনার পর থেকে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।
তৃণমূল নেতাদের দাদাগিরিতে সম্প্রতি একের পর এক কারখানায় অচলাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর খনি-শিল্পাঞ্চলে। দুর্গাপুরে জয় বালাজির ইস্পাত কারখানা, জামুড়িয়ায় শ্যাম সেলের কারখানা, প্রতাপপুরের কাগজকল কখনও সিন্ডিকেট, কখনও নিজেদের লোক নিয়োগ, কখনও অন্য দাবি আদায়ের নামে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দৌরাত্ম্যে বিপাকে পড়েছে নানা শিল্প সংস্থা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিশেষ কোনও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রবিবার রাতে রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকের এক ইস্পাত কারখানায় বোনাস বাড়ানোর দাবি জানাতে ঢুকে কর্মী-আধিকারিকদের মারধর, ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে কাউন্সিলর অরবিন্দবাবু ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। কারখানা সূত্রের খবর, শ্রম দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে যে বোনাস নির্দিষ্ট হয়েছে, ঠিকা শ্রমিকেরা তার থেকে বেশি বোনাসের দাবি জানান। তা মানা অসম্ভব জানানোর পরেই সন্ধ্যায় অরবিন্দবাবু সদলবলে কারখানায় আসেন। সঙ্গে তাণ্ডবে যোগ দেয় কিছু ঠিকা শ্রমিক। কিছু কর্মী, এক আধিকারিককে কিল-চড়-ঘুষি মারা হয়। রাতে অরবিন্দবাবু-সহ চার জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন কর্তৃপক্ষ।
পুলিশের দাবি, অরবিন্দবাবুকে ধরতে রাতেই অঙ্গদপুরে তাঁর বাড়ি ও তৃণমূলের স্থানীয় ওয়ার্ড অফিসে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, রাতে কাউন্সিলর গা-ঢাকা দেন। পুলিশ আসছে কি না জানতে তাঁর কিছু অনুগামী রাস্তায় পাহারায় ছিলেন। এ দিন সকালে ফের কারখানার সামনে আসেন অরবিন্দবাবু। তাঁর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ দায়ের ও পুলিশি তল্লাশির প্রতিবাদে দল নিয়ে বিক্ষোভও দেখান।
খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছয়। কিন্তু যাঁকে ধরতে রাতে তল্লাশি চালানো হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি, সেই অভিযুক্ত কাউন্সিলরকে হাতের কাছে পেয়েও ধরা হয়নি। পুলিশের দাবি, তখন তাঁকে গ্রেফতার করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা-জনিত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারত। তাই ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদবের আশ্বাস, “অভিযুক্তদের শীঘ্রই ধরা হবে।” কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন কোনও ঠিকা শ্রমিককে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। উৎপাদনও কার্যত বন্ধ ছিল। কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, “পরিস্থিতি যত ক্ষণ না স্বাভাবিক হচ্ছে, ওই শ্রমিকদের কাজে আসতে বারণ করা হয়েছে।”
শিল্পাঞ্চলে ফের শাসকদলের দাদাগিরি সামনে আসায় প্রত্যাশিত ভাবেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর দাবি, “এমনিতেই শিল্প আসছে না। তার উপরে জুলুম চলছে। এতে যে আখেরে শিল্পাঞ্চলের ক্ষতি, ওরা বুঝছে না।” আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাসের বক্তব্য, “পুলিশ-প্রশাসন কড়া না হলে দৌরাত্ম্য রোখা মুশকিল।” অরবিন্দবাবুর দাবি, “গোলমালের সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলাম না।” তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি তথা বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “কী ঘটেছে, দলের তরফে দেখা হবে। কেউ দোষ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আইএনটিটিইউসি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব শ্রমিক সংগঠনের উপস্থিতিতে সরকারি মধ্যস্থতায় বোনাস চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। তার পরেও কেউ অশান্তি করলে পুলিশ ব্যবস্থা নিক।”