সিঙ্গাপুরে বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের নৈশভোজে দেব।—নিজস্ব চিত্র।
গত রবিবার রাতের ঘটনা। সিঙ্গাপুরের পথে দমদম বিমানবন্দরে এক-এক করে এসে পৌঁছচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। হলুদ জামা আর নীল জিনসে হাজির দেবও।
এমন সময় ঢুকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। “আরে দেব এসে গেছো? ২০ তারিখ ফেরা হবে না। ২১ তারিখে আসতে হবে!” বলেই সটান হাঁটা লাগালেন তিনি। খোকাবাবু তখন মাথা চুলকোচ্ছেন। তাঁর অবস্থা দেখে ছায়াসঙ্গী প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা হাসতে শুরু করেছেন। ব্যাপারটা দাঁড়াল ‘এই রে ফেঁসে গেলাম’ গোছের। কিন্তু উপায় কী?
বুধবার সন্ধেয় সিঙ্গাপুরের বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের নৈশভোজে দেবকে আবিষ্কার করা গেল। কবে ফিরছেন? জবাব এল, “এই তো কাল, বৃহস্পতিবার।” কেন আপনার তো আজই ফেরার কথা ছিল? নায়কের জবাব, “সে আর হল কই?”
শিল্প সম্মেলনে দেবের আসা নিয়ে কলকাতায় হইচই হয়েছে বেশ কয়েক দিন। সিঙ্গাপুরে ‘পাগলু-থ্রি’র আসর বসতে চলেছে কি না, এমন প্রশ্নও তুলেছিল কোনও কোনও মহল। তাতে আমল দেননি মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিনিধিদলের সদস্যদের নিয়ে রাজ্য সরকার যে পুস্তিকা ছাপিয়েছে, তাতেও মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর পরেই দীপক অধিকারী ওরফে দেবের নাম। গুরুত্বের বিচারে ঘাটালের সাংসদের কদর তো তা হলে ছিলই। শিল্প সম্মেলনে কিন্তু দেবকে তেমন ভাবে পাওয়া যায়নি। কোথায় দেব, বারে বারে এই প্রশ্ন উঠেছে। নৈশভোজে নায়ককে জিজ্ঞেস করা গেল, “আপনাকে তো দেখাই যাচ্ছে না!” দেবের উত্তর, “আছি তো!”
স্যুট-টাই পরিহিত দীপক অধিকারী এই জাতীয় সম্মেলনে তাঁর উপযোগিতা নিয়ে নিজের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “অভিনেতা হিসাবে আমার এখানে আর কী করার আছে? তবে সাংসদ হিসাবে অনেক কিছু শিখলাম।” প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক, বণিকসভার সঙ্গে কী ভাবে আলোচনা হয়, এ সব আগে জানা ছিল না। সাংসদ হিসেবে এটা তাঁর প্রশিক্ষণ হলো বলে দাবি করছেন তিনি। নায়ক নিজে কি প্রতিনিধিদলের হয়ে কোনও বৈঠক করতে গিয়েছিলেন? দেব জানাচ্ছেন, তিনি কোনও বৈঠকেই যাননি। তবে আলোচনা শুনে তাঁর ভাল লেগেছে।
প্রশাসন সূত্রে আগে জানানো হয়েছিল, শ্রীকান্ত মোহতা এবং দেবকে সিঙ্গাপুরে আনার উদ্দেশ্য বিনোদন শিল্পে বিনিয়োগ টানা। সেই লক্ষ্যে কিছু কাজ হয়েছে কি? দেব জানালেন, সিঙ্গাপুরে প্রায় দু’লক্ষ বাঙালির বাস। এখানকার হলগুলিতে নিয়মিত বাংলা ছবি রিলিজ করা কি না, সে ব্যাপারে কথা চলছে। তাঁর নতুন ছবি ‘বুনোহাঁস’ও আগামী শুক্রবার সিঙ্গাপুরের একটি হল-এ মুক্তি পাবে।
সিঙ্গাপুরে এমনিতে বাংলা ছবির উৎসবও হয়। ‘দর্পণ’ নামে সেই উৎসবের আয়োজক শ্রেয়সী সেন জানালেন, আগে সিঙ্গাপুরে ‘জাতিস্মর’ দেখানো হয়েছিল। দেব এ দিন এই উৎসবের আয়োজকদের সঙ্গেই বৈঠক করেছেন। তাঁর মনে হচ্ছে, বিশ্বের বাজারে বাংলা ছবিকে তুলে ধরতে এটা একটা বড় কাজ হলো।
এ দিন নৈশভোজে দেবকে নিয়ে ছবি তোলার হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সকলেই ঘিরে ধরেন নায়ককে। তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর নজর পড়ল তাঁর দিকে এই দেব, এ দিকে এসো। তার পর হাসিমুখে বললেন, “আমার জন্য বেচারা ক’দিন একটু ছুটি পেল। কী, তাই তো?”
খোকাবাবু ফের মাথা চুলকে বললেন, “হ্যাঁ দিদি।” প্রযোজকমশাই তখনও হাসছেন।