দ্বিধার মধ্যেই রিপোর্ট প্রকাশের পক্ষে বুদ্ধেরা

লেখক নিজে মনে করেন তাঁর দলিল প্রকাশ্যে আনা হলে ক্ষতি নেই। কিন্তু দলের মধ্যে অনেকেই সন্দিহান, তৃণমূলের বিড়ম্বনার বাজারে এই কাজ করতে গেলে হিতে বিপরীত হবে কি না! তাই বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরের কাজের মূল্যায়নে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের লেখা দলিল প্রকাশ্যে এনে জনতার মতামত সংগ্রহের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আপাতত ঝুলে রইল সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৩
Share:

লেখক নিজে মনে করেন তাঁর দলিল প্রকাশ্যে আনা হলে ক্ষতি নেই। কিন্তু দলের মধ্যে অনেকেই সন্দিহান, তৃণমূলের বিড়ম্বনার বাজারে এই কাজ করতে গেলে হিতে বিপরীত হবে কি না! তাই বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরের কাজের মূল্যায়নে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের লেখা দলিল প্রকাশ্যে এনে জনতার মতামত সংগ্রহের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আপাতত ঝুলে রইল সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে। তবে দলের রাজ্য নেতৃত্ব চাইছেন, দ্বিধা জয় করে বাম সরকারের কাজের মূল্যায়ন সাধারণ মানুষের দরবারে পেশ করা হোক। শেষ পর্যন্ত যা ঘটলে যথেষ্ট বেনজির ঘটনাই হবে!

Advertisement

রাজ্যে টানা ৩৪ বছর সরকার চালানোর অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করে ভবিষ্যতের রোডম্যাপ ঠিক করার জন্য দলের তরফে একটি দলিল তৈরি করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু। আগামী মার্চে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে বিতর্কের পরে সেই দলিল গৃহীত হওয়ার কথা। আলিমুদ্দিনে এ বারের রাজ্য কমিটির বৈঠকে বুদ্ধবাবুর তৈরি সেই ৩৫ পাতার দলিলেরই খসড়া পেশ করা হয়েছিল। তার উপরে মতামত জানিয়ে একগুচ্ছ সংশোধনী জমা দিয়েছেন রাজ্য কমিটির সদস্যেরা। পাশাপাশিই রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্য ওই দলিল প্রকাশ্যে আনার বিরুদ্ধে সওয়াল করেছেন। এমতাবস্থায় বৈঠকের শেষ দিনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু জানিয়েছেন, ওই দলিল এবং তার উপরে জমা-পড়া সংশোধনী বিবেচনা করবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। কোন কোন সংশোধনী গৃহীত হল, আগামী ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি পরিবর্তিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। পরিবর্ধিত ওই দলিল প্রকাশ্যে আনা হবে কি না, বা তার কোনও নির্দিষ্ট অংশ জনমত সংগ্রহের জন্য প্রকাশ করা হবে কি না, সেই ব্যাপারেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজ্য নেতৃত্বই নেবেন।

বুদ্ধবাবুর লেখা দলিলে যে ভাবে শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তা এবং তার জন্য সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ‘ব্যতিক্রম’ থেকে শিক্ষা নিয়ে জমির প্রশ্নে সতর্ক ভাবে এগোনোর কথা বলা হয়েছে, সেই মূল নীতির সঙ্গে দলের সিংহ ভাগই সহমত। তবে রাজ্য কমিটির কেউ কেউ চান ভূমি সংস্কারের পরে তার কার্যকারিতা বাড়াতে ব্যর্থতা, শিক্ষার সর্বস্তরে অতিরিক্ত সরকারি হস্তক্ষেপ (যা ‘অনিলায়ন’ নামে পরিচিত), সংখ্যালঘু উন্নয়নে খামতি বা মানবোন্নয়ন সূচক বাম জমানায় তেমন উচ্চ মানে না থাকার ঘাটতিও দলিলে স্বীকার করে নেওয়া হোক।

Advertisement

পাশাপাশিই বিতর্ক রয়েছে দলিল প্রকাশ্যে আনার প্রশ্নে। রাজ্য কমিটির বৈঠকে বুধবার যেমন উত্তর ২৪ পরগনার এক প্রাক্তন সাংসদ বলেছেন, সমুদ্র মন্থন করলে হলাহলও উঠবে। কিন্তু এখন জনতার মাঝে হলাহল বিলি করার সময় নয়! হলাহল যা উঠবে (অর্থাৎ অতীতের ভুল-ভ্রান্তি), সে সব নিজেদের কণ্ঠে ধারণ করে মানুষের কাছে অমৃত নিয়েই যেতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, ৩৪ বছরের যে রাজত্বের কথা বলে বলে তৃণমূলও হাঁফিয়ে উঠেছে, সেই সময় কালে সাধারণ মানুষের জন্য অনেক ভাল কাজও হয়েছিল। অর্থাৎ প্রচার হোক ‘ইতিবাচক’।

সিপিএমের দলীয় মুখপত্রের তরফে এক রাজ্য কমিটির সদস্যও বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছেন, বাম জমানার পুরনো ভুল-ভ্রান্তির কাটাছেঁড়া এখন প্রকাশ্যে আনলে নানা বিড়ম্বনায় জেরবার তৃণমূল বা অন্য বিরোধীরাও অযাচিত ভাবে হাতিয়ার পেয়ে যেতে পারে! রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে স্বয়ং বুদ্ধবাবুর অবশ্য মত, সরকার তৈরি হয় মানুষের সমর্থনেই। তাই অতীতের ভুলের কথা আন্তরিক ভাবে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে কোনও কুণ্ঠা থাকা উচিত নয়। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক প্রভাবশালী নেতাও বুদ্ধবাবুর সঙ্গে সহমত। তাঁদেরই এক জনের কথায়, “ভুলের কথা খোলাখুলি মানুষের কাছে কবুল করে নিলে এবং সেগুলির পুনরাবৃত্তি না করার অঙ্গীকার করলে বরং আম জনতার সঙ্গে দলের সংযোগ ভাল হবে।” তাই শেষ পর্যন্ত রাজ্য সম্মেলনের আগে বাম জমানার কাজের মূল্যায়ন রিপোর্ট দলের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হতে পারে জনমত সংগ্রহের জন্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement