দাদাদের ভাবনায় ছাই ফেলে দিচ্ছেন দিদিই!
কলকাতা-সহ ৯৬টি পুরসভার প্রস্তাবিত ভোটের নির্ঘণ্টের সঙ্গে সংঘাত বাধছে পার্টি কংগ্রেসের সময়সূচির। আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে সিপিএম এ বার তাই পার্টি কংগ্রেসের জন্য বিকল্প প্রতিনিধি বাছতে বসছে। কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিতে পার্টি কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করাকে বিশেষ সম্মান বলেই ধরা হয়। দলের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ এবং গুরুগম্ভীর আলোচনার মাধ্যমে পথ নির্ণয় হয় সেখানেই। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পুরভোটের গেরোয় সেই ‘সম্মান’ থেকে এ বার বঞ্চিত হতে হবে সিপিএমের অনেক নেতা-কর্মীকে!
অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস বসবে ১৪ থেকে ১৯ এপ্রিল। আর রাজ্য সরকার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সর্বশেষ যে সূচি পাঠিয়েছে, সেই অনুযায়ী কলকাতায় পুরভোট ১৮ এপ্রিল। বাকি পুরসভাগুলির ভোট হওয়ার কথা ২৫ এপ্রিল। এই নির্ঘণ্ট মেনেই ভোট হলে সিপিএমের নেতাদের পক্ষে প্রচার এবং নির্বাচনী কাজে অংশ নেওয়া মুশকিল পার্টি কংগ্রেসের জন্যই। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার আলিমুদ্দিনে দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকের জবাবি ভাষণে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু জানিয়ে দিয়েছেন, পার্টি কংগ্রেসের জন্য বিকল্প প্রতিনিধি বাছতে হবে আসন্ন রাজ্য সম্মেলনে। যাঁরা প্রার্থী হবেন, প্রচারের দায়িত্বে থাকবেন বা সংশ্লিষ্ট কোনও কমিটির আহ্বায়ক হবেন, তাঁদের নিজ নিজ এলাকাতেই থেকে যেতে হবে। তাঁদের বিকল্প প্রতিনিধি বেছে রাখতে হবে পার্টি কংগ্রেসের জন্য।
বিমানবাবু অবশ্য একই সঙ্গে বলেছেন, এ সবই পরিস্থিতির নিরিখে ভেবে রাখা সূত্র। কারণ, পুরভোট এপ্রিলের ওই সময়েই হবে, তারও কোনও স্থিরতা নেই! রাজ্য সরকার এতটাই অস্থিরমতি! যে পুরসভাগুলির বোর্ডের মেয়াদ অনেক আগেই ফুরিয়ে গিয়েছে, সেখানে নির্বাচন না করে তারা বাকি এলাকার ভোট নিয়ে আগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পুরভোট এপ্রিল না হয়ে মে-জুনে গড়িয়ে গেলে পার্টি কংগ্রেসের জন্য আর বিকল্প ব্যবস্থা কার্যকর হবে না। এর পাশাপাশি, পুরভোটের জন্য সিপিএমের প্রার্থী বাছাইয়ের রূপরেখাও এ দিন ঠিক করে দেওয়া হয়েছে রাজ্য কমিটিতে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “সাম্প্রতিক দু’টি উপনির্বাচনের ফলাফলের পরে বোঝাই যাচ্ছে, পুরভোট খুব কঠিন লড়াই। তবু রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই এখানে লড়াই করতে হবে। স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তির রাজনৈতিক মুখকে প্রার্থী করার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
রাজ্য সম্মেলনের আগে সিপিএমের বিদায়ী রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষ দিন আলোচনা ছিল পুরভোট নিয়েই। সিদ্ধান্ত হয়েছে, পুরভোটের জন্য রাজ্য স্তরে একটি ইস্তাহার তৈরি করবে বামেরা। তৃণমূল-শাসিত পুরসভা ও সার্বিক ভাবে সরকারের দুর্নীতি, অপশাসন এবং প্রোমোটার-সিন্ডিকেটের রমরমার কথা সেখানে তুলে ধরা হবে। আবার স্থানীয় স্তরে আরও একটি প্রচার-পুস্তিকা হবে। এলাকাভিত্তিতে স্থানীয় প্রশ্নে আলাদা রাজনৈতিক বক্তব্য যোগ করবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতৃত্ব।
উত্তরবঙ্গের নেতারা এ দিন বৈঠকে জানিয়েছেন, নানা জায়গা থেকে টাকা-পয়সা এনে এখন শিলিগুড়ি পুর এলাকায় খরচ করছেন মন্ত্রী গৌতম দেব। স্থানীয় তৃণমূলের হাবভাবে মনে হচ্ছে, মন্ত্রী গৌতমবাবুই এ বার শিলিগুড়িতে তৃণমূলের মেয়র পদপ্রার্থী হতে পারেন। সত্যিই তেমন কিছু ঘটলে সিপিএমও প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যকে সামনে রেখে পুর-লড়াইয়ে নামবে বলে রাজ্য কমিটিকে জানিয়ে রেখেছেন দার্জিলিঙের জেলা সম্পাদক। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তৈরি ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পর্যালোচনা রিপোর্টও রাজ্য কমিটিতে পাশ করিয়ে এ দিনই দলের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে বাইরের মতামত নেওয়ার জন্য। দলের পলিটব্যুরোর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র বৈঠকে জানিয়েছেন, রাজ্য কমিটিতে ইতিমধ্যেই ওই রিপোর্টের উপরে সংশোধনী এসেছে। ওয়েবসাইটের মতামত নিয়ে রিপোর্ট চূড়ান্ত আকারে পেশ হবে রাজ্য সম্মেলনে।