দিকে দিকে এমপিএসের ডেরায় সিবিআই হানা

শ্যামল সেন কমিশনের অফিস থেকে নাটকীয় ভাবে তাঁকে পাকড়াও করেছিল রাজ্য পুলিশ। অর্থলগ্নি সংস্থা এমপিএস-এর সেই ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রমথনাথ মান্নার ডেরায় ডেরায় এ বার হানা দিল সিবিআই। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যুরোর প্রায় ৬০ জন তদন্তকারী বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে দিনভর তল্লাশি চালালেন তাঁর বাড়ি ও নানা অফিসে। একই সঙ্গে সিবিআই অভিযান চলেছে সংস্থার কয়েক জন ডিরেক্টরের বাড়িতে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৩
Share:

লেক টাউনে এমপিএস কর্ণধারের বাড়িতে সিবিআই হানা। -নিজস্ব চিত্র

শ্যামল সেন কমিশনের অফিস থেকে নাটকীয় ভাবে তাঁকে পাকড়াও করেছিল রাজ্য পুলিশ। অর্থলগ্নি সংস্থা এমপিএস-এর সেই ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রমথনাথ মান্নার ডেরায় ডেরায় এ বার হানা দিল সিবিআই। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যুরোর প্রায় ৬০ জন তদন্তকারী বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে দিনভর তল্লাশি চালালেন তাঁর বাড়ি ও নানা অফিসে। একই সঙ্গে সিবিআই অভিযান চলেছে সংস্থার কয়েক জন ডিরেক্টরের বাড়িতে।

Advertisement

সিবিআই-সূত্রের খবর: লেকটাউনে এমপিএসের প্রধান অফিস ও প্রমথনাথের বাড়িতে তো বটেই, হাওড়া, সন্তোষপুর, নৈহাটি, আগরপাড়া ও ঝাড়গ্রামে এমপিএসের অফিস ও সংস্থার কিছু ডিরেক্টরের বাড়িতে এ দিন তল্লাশি হয়েছে। প্রমথনাথের বাড়ি ও কয়েকটি অফিস থেকে বিস্তর নথিপত্র, হার্ড ডিস্ক, সিডি, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সারদার মতো এমপিএস-ও ক’বছরের মধ্যে সাধারণ মানুষের থেকে বিপুল সম্পত্তি সংগ্রহ করেছে। কী ভাবে, কাদের সাহায্যে তার এ হেন উত্থান, এবং সারদার মতো এমপিএসের মাথাতেও কোনও ‘প্রভাবশালী’র ছাতা ছিল কিনা, সিবিআই আপাতত তা যাচাই করছে।

সিবিআই-সূত্রের খবর, প্রমথনাথকে এ বার তারা নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপারস প্রাইভেট লিমিটেডের নামে বাজার থেকে তোলা টাকা কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে, তারও একটা তালিকা তৈরি করা হবে।

Advertisement

২০১৩-র সেপ্টেম্বরে হাওড়ার এক আমানতকারীশ্যামল সেন কমিশনে এমপিএসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে কমিশন প্রমথনাথকে বলে, তিনি ব্যবসা বন্ধ করে এই মর্মে নোটিস দিন যে, বাজার থেকে টাকা তুলবেন না। কমিশনের নির্দেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে প্রমথনাথ হাইকোর্টে যান। ২০১৪-র ২৭ সেপ্টেম্বর সংস্থার ডিরেক্টর প্রবীর চন্দ্রকে নিয়ে প্রমথনাথ কমিশনের অফিসে হাজির হয়েছিলেন, পরিচয় গোপন রেখে। ওই সময় আমানতকারীদের আইনজীবী অরিন্দম দাস কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শ্যামল সেনকে জানান, বাঁকুড়া থানায় প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত প্রমথবাবু ও প্রবীরবাবু পুলিশের খাতায় ফেরার হলেও কমিশনের অফিসে গা ঢাকা দিয়ে বসে রয়েছেন!

কমিশন বাঁকুড়া থানায় ফোন করে। পুলিশ সত্যিই প্রমথ মান্নাকে খুঁজছে জেনে বিচারপতি সেন হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশের হাতে দু’জনকে তুলে দেন।

সেই ইস্তক প্রমথনাথ বন্দি। এ বার তাঁর সংস্থাও পড়ল সিবিআইয়ের তল্লাশি-জালে। এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ নিজাম প্যালেসের ব্যুরো দফতর থেকে ৬০ জনের একটি দল কয়েকটি গাড়িতে করে প্রথমে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের অফিসে আসে। সেখান থেকে কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে লেকটাউন, হাওড়া, সন্তোষপুর, নৈহাটি, ঝাড়গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন তদন্তকারীরা। সকাল ন’টা নাগাদ তিনটে দল লেকটাউনে পৌঁছায়। দু’টি যায় বি ব্লকে এমপিএসের দুই অফিসে। কাছেই প্রমথনাথের বাড়িতে ঢোকে তৃতীয়টি। প্রমথনাথের দমদম পার্কের এক বাড়িতে যায় আর একটি দল।

প্রায় প্রতিটি অফিসেই রাত পর্যন্ত তল্লাশি চলেছে। অফিসের কিছু কর্মীকে জেরা করা হয়েছে। বাড়িতে প্রমথনাথের স্ত্রী-মেয়েও সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন। লেকটাউনে এমপিএসের মূল অফিস থেকে ১৬ পেটি নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। পাশাপাশি হাওড়া জগাছার নন্দীপাড়ায় এমপিএসের অন্যতম ডিরেক্টর প্রণব দাসের বাড়িতে অভিযান চলে। পড়শিরা জানিয়েছেন, বাড়িটি বছরখানেক ধরে তালাবন্ধ। সিবিআই প্রণববাবুর বড় ছেলেকে ফোন করে ডেকে পাঠায়। তাঁর থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলে ভিতরে ঢোকেন গোয়েন্দারা। সাত ঘণ্টা টানা তল্লাশি চলে। প্রণববাবুকে ফোনেই এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিবিআই-সূত্রের খবর, প্রণববাবুর বাড়িতে প্রচুর নথিপত্র মিলেছে।

নৈহাটি ও আগরপাড়ায় আরও দুই এমপিএস-ডিরেক্টরের বাড়িতেও তল্লাশি হয়। ঝাড়গ্রামে সংস্থার কৃষি-খামার ও বাণিজ্যিক ভবনে অভিযান চলেছে টানা আট ঘণ্টা। দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে সংস্থার আধিকারিক ও কর্মীদের। এর আগে ঝাড়গ্রামের ওই অফিস ও খামারে সেবি-ও দু’বার হানা দিয়েছিল বলে কর্মীরা জানিয়েছেন। এমপিএসের ডিরেক্টর অশোককুমার মণ্ডল এ দিন বলেন, “আমরা সিবিআই’কে তদন্তে সহযোগিতা করেছি। ওঁরা যা জানতে চেয়েছেন, যে সব নথিপত্র চেয়েছেন, সব সরবরাহ করা হয়েছে। যেগুলো দরকার মনে হয়েছে, ওঁরা বাজেয়াপ্ত করেছেন।”

কী কী বাজেয়াপ্ত হল? মুখ খোলেননি অশোকবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement