আগে তাঁরা পুলিশের কাছে মুখ খুলতেই অস্বীকার করছিলেন। পুলিশের অভিযোগ, এ বার তাঁরা এমন কথা বলছেন, যাতে তদন্ত ভুল পথে চালিত হয়! বিভ্রান্ত হয় পুলিশ! এনআরএস হাসপাতালের হস্টেলে প্রতিবন্ধী যুবক কোরপান শা-কে মারার তদন্ত চালাতে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা হচ্ছে তদন্তকারীদের। যদিও স্বাস্থ্য দফতর সংবেদনশীল হতে বলায় ভুল তথ্য দেওয়া হবু ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এখনই কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে চাইছে না লালবাজার। বরং কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এগোচ্ছেন তদন্তকারীরা।
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা ও তথ্য দিতে টালবাহানা করার যে অভিযোগ প্রথম থেকেই উঠেছে, এখনও তাতে খুব কিছু বদল হয়নি। ওই হস্টেলের সামনে যে সিসিটিভি রয়েছে, চাওয়া সত্ত্বেও তার ফুটেজ এখনও পুলিশকে দেওয়া হয়নি। অথচ তা পেলে, ১৬ তারিখ কোরপানের মৃত্যুর আগের রাত থেকে কে কে হস্টেলে ছিলেন তার অকাট্য প্রমাণ মিলবে। শুধু তা-ই নয়, চাওয়া হয়েছিল হস্টেলে ঢোকা-বেরনোর রেকর্ড। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী থাকলেও এমন কোনও রেজিস্ট্রার বা খাতা এত দিন ছিলই না। এখন চালু করা হয়েছে।
হস্টেলের হবু ডাক্তারদের ভূমিকাটি কেমন? পুলিশকে কোনও তথ্য দিতে অস্বীকার করে তাঁরা এর আগে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ওই মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ কেন খুনের মামলা দায়ের করেছে। বেশ ক’দিন ধরে চাপানউতোর চলার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার আবাসিকদের নাম ও ফোন নম্বর দিয়েছে। সেগুলির কল লিস্ট ও টাওয়ার লোকেশন থেকে ঘটনার আগের রাত থেকে কারা হোস্টেলে ছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। ভাবা হয়েছিল, ওই হবু ডাক্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই কোরপানের খুনিরা ধরা পড়বে। এ জন্য গত তিন দিন ধরে বারবার আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু আবাসিকরা এমন তথ্য দিচ্ছেন যা তদন্ত গুলিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। গোয়েন্দাদের অভিযোগ, ওই হবু ডাক্তাররা তদন্তে সহযোগিতা করা তো দূর উল্টে বিভ্রান্ত করছেন।
পুলিশ যখন বুঝতেই পারছে যে আবাসিকরা তাঁদের বিভ্রান্ত করছেন, সে ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করার অভিযোগে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? লালবাজার সূত্রে শুক্রবার বলা হয়েছে, “তদন্তের শুরুতেই স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল খুব সংবেদনশীল ভাবে বিষয়টি দেখতে। তাই প্রতিটি মুহূর্তে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই যা কিছু করা হচ্ছে। যদিও এখনও পুরো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।” লালবাজার ও এন্টালি থানা, উভয় তরফেই এ প্রসঙ্গে সিসিটিভির ফুটেজ ও হস্টেলে ঢোকা-বেরনোর খাতা না পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এন্টালি থানার এক অফিসার বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই ওই খাতাটা চাইছিলাম। কিন্তু কলেজ থেকে বলা হয়েছে, হস্টেলে এমন কোনও খাতাই নেই। আবাসিকদের কোনও রেজিস্টার নেই! এটা ভাবতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।” রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, “আমাদের কোনও মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলেই এই ধরনের খাতা নেই। তাই এনআরএস-কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খাতা দিতে পারেননি। তবে আমরা পুলিশের সঙ্গে কোনও অসহযোগিতা করিনি। করবও না।” এনআরএস কর্তৃপক্ষ এ দিন তদন্তের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি ।
কলকাতা হাইকোর্টে কোরপান শা খুনের তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলাটির শুনানি হয় এ দিন। প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে ওই ঘটনা নিয়ে হলফনামা দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে। মামলাটির পরবর্তী শুনানি দু’সপ্তাহ পরে।