তথ্য নয়, স্রেফ নাম দিল এনআরএস

ঘটনার সাত দিনের মাথায় স্রেফ হস্টেলের আবাসিকদের নামের তালিকা পুলিশের হাতে তালিকা তুলে দিলেন এনআরএস কর্তৃপক্ষ। ঘটনার দিন আবাসিকরা কে কোথায় ছিলেন, সেই তথ্য দেওয়া হলো না। জানানো হলো না তাঁদের ঠিকানা বা ফোন নম্বরও। গোয়েন্দারা শনিবারও এনআরএসে ওই হস্টেলে গিয়ে হবু ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ দিনও তাঁরা কেউ মুখ খোলেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০২
Share:

ঘটনার সাত দিনের মাথায় স্রেফ হস্টেলের আবাসিকদের নামের তালিকা পুলিশের হাতে তালিকা তুলে দিলেন এনআরএস কর্তৃপক্ষ। ঘটনার দিন আবাসিকরা কে কোথায় ছিলেন, সেই তথ্য দেওয়া হলো না। জানানো হলো না তাঁদের ঠিকানা বা ফোন নম্বরও। গোয়েন্দারা শনিবারও এনআরএসে ওই হস্টেলে গিয়ে হবু ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ দিনও তাঁরা কেউ মুখ খোলেননি। বরং তাঁদের মনোভাব দেখে পুলিশের ধারণা হয়েছে, এর পিছনে এক বা একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন।

Advertisement

লালবাজারের দাবি, হস্টেলের আবাসিকদের নাম শুধু নয়, প্রত্যেকের ঠিকানা, ফোন নম্বর, ছবি ও সে দিন কে কোথায় ছিলেন সব তথ্যই চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার এত দিন পরে তথ্য হিসেবে যা দেওয়া হলো, তা এতটাই অসম্পূর্ণ যে এ দিয়ে তদন্তের এতটুকুও অগ্রগতি হবে না। তাই পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়ার জন্য ফের এনআরএস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে পুলিশ।

হাসপাতাল কতৃর্র্পক্ষ কেন এ ভাবে অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে তদন্তে অসহযোগিতা করছেন? এই প্রশ্ন করায় রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ যা চাইবে, সব কিছু না-ও পাওয়া যেতে পারে। আবাসিকদের ছবি পাওয়াটা এমনিতেই কঠিন। অনেক খুঁজতে হবে। নীলরতনের অধ্যক্ষা বিষয়টি দেখছেন। পুলিশের সঙ্গে নিশ্চয়ই সহযোগিতা করা হবে।” তাঁর আরও বক্তব্য, “বললেই তো চট করে সব তথ্য পাওয়া যায় না। সময় লাগবে একটু। যতটা পাওয়া গিয়েছে দেওয়া হয়েছে। আবার দেওয়া হবে। এ নিয়ে পুলিশের অভিযোগের কী হয়েছে?” পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা অবশ্য তা মনে করছেন না। এক পুলিশকর্তা শনিবার বলেন, মৃতের পরিবার যদি তদন্তে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করে, তাতে স্বাস্থ্য দফতরকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। কারণ, হাসপাতালের অসহযোগিতার কারণে তদন্ত এগোতে পারছে না।”

Advertisement

লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলেন, “আমরা আবাসিকদের তথ্য চেয়েছিলাম গত সোমবার। বুধবার ফের তার জন্য তাগাদা করি। কিন্তু এত দিন পরে আমাদের কাছে যে তালিকাটা দেওয়া হলো তা নিয়ে কোনও কাজই হবে না।” তদন্তকারী অন্য এক অফিসারের বক্তব্য, “হাসপাতাল আবাসিকদের বিস্তারিত তথ্য দিলে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা সম্ভব হতো। কিন্তু আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করল না হাসপাতাল।” তদম্তের কাজ এ ভাবে আটকে পড়ায় হতাশ এনআরএস-এর হস্টেলে গণপিটুনিতে নিহত উলুবেড়িয়ার কোরপান (কুরবান) শাহ-র পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৬ নভেম্বর। বৃহস্পতিবার কোরপানের স্ত্রী আর্জিনা বিবি এন্টালি থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করে গিয়েছেন। সে দিনই তিনি তাঁর স্বামীর সম্ভাব্য খুনি হিসেবে হবু চিকিৎসকদের চিহ্নিত করে তাঁদের গ্রেফতার ও কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও তদন্ত না এগোনোয় আর্জিনা বলেন, “ওঁরা (অভিযুক্ত হবু চিকিৎসকরা) বড়লোক। তাই ওঁদের ধরা হচ্ছে না। আমরা গরিব মানুষ। তাই আমাদের কথা শোনা হচ্ছে না।”

শনিবারও গোয়েন্দাদের একটি দল এনআরএসের ওই হস্টেলে যান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন নকশাকার (প্ল্যানার)। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে সে দিনের ঘটনার পুনর্গঠন করার চেষ্টা করেন গোয়েন্দারা। পরে তাঁরা কথা বলেন হস্টেলের বেশ কিছু হবু চিকিৎসকদের সঙ্গে। লালবাজার সূত্রে খবর, গত সাত দিনে আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলা হলে তাঁরা ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে কোনও রকম সহযোগিতা করতে চাননি। উল্টে তদন্তকারীদের কাছে বেশ কিছু আবাসিক জানতে চেয়েছেন, পুলিশ কেন খুনের মামলা শুরু করেছে।

হবু চিকিৎসক আবাসিকদের এই মনোভাব দেখে পুুলিশের কাছেও এটা স্পষ্ট যে, তাঁদের পিছনে কোনও ক্ষমতাবান ব্যক্তি রয়েছেন। এনআরএস সূত্রের খবর, তৃণমূলের চিকিৎসক সেলের প্রধান বিধায়ক নির্মল মাজি এনআরএস-কে নিয়ন্ত্রণ করছেন তাঁর এক সময়ের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ তৃণমূলের আর এক চিকিৎসক নেতা সাক্ষীগোপাল সাহার মাধ্যমে। হবু চিকিৎসকদের একটি অংশ বলছেন, নীলরতন-কাণ্ডে তৃণমূলের সাংগঠনিক ভাবে যাতে কোন ক্ষতি না হয়, তার জন্য ওই দুই নেতা হাত মিলিয়েছেন। সূত্রের কবর, নির্মলের ক্ষমতার কেন্দ্র যেমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তেমন সাক্ষীগোপাল স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী, তৃণমূলের বিধায়ক শিউলি সাহার সুবাদে। শিউলি আবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের অতি ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।

এনআরএস-কাণ্ড নিয়ে কী বলছেন নির্মল ও সাক্ষীগোপাল? দু’জনেই দোষীদের গ্রেফতার ও কড়া শাস্তির দাবি করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement