তালা রইলই, হাতে কেবল বকেয়ার আশ্বাস

মন্ত্রীর সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বৈঠকের পর আংশিক বকেয়া বেতনের আশ্বাস মিলল ঠিকই। কিন্তু বিন্দুমাত্রও আশার আলো দেখা গেল না কারখানার তালা খোলা নিয়ে। ফলে কাজ বন্ধের (সাসপেনশন অব ওয়ার্ক) নোটিসই আপাতত লটকে থাকছে হিন্দুস্তান মোটরসের উত্তরপাড়া কারখানার দরজায়। ঝুলে থাকছে তার ২,৬০০ কর্মী ও তাঁদের পরিবারের ভবিষ্যৎ। গভীর অনিশ্চয়তার মুখে বেশ কিছু দিন ধরে ধুঁকতে থাকা অ্যাম্বাসাডরের ভবিষ্যৎও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০৩:১৭
Share:

হিন্দুস্তান মোটরস কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। বৃহস্পতিবার মহাকরণে। —নিজস্ব চিত্র।

মন্ত্রীর সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বৈঠকের পর আংশিক বকেয়া বেতনের আশ্বাস মিলল ঠিকই। কিন্তু বিন্দুমাত্রও আশার আলো দেখা গেল না কারখানার তালা খোলা নিয়ে। ফলে কাজ বন্ধের (সাসপেনশন অব ওয়ার্ক) নোটিসই আপাতত লটকে থাকছে হিন্দুস্তান মোটরসের উত্তরপাড়া কারখানার দরজায়। ঝুলে থাকছে তার ২,৬০০ কর্মী ও তাঁদের পরিবারের ভবিষ্যৎ। গভীর অনিশ্চয়তার মুখে বেশ কিছু দিন ধরে ধুঁকতে থাকা অ্যাম্বাসাডরের ভবিষ্যৎও। যাকে রাজ্যের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের ‘স্বপ্নের মৃত্যু’ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে শিল্পমহলের একাংশ।

Advertisement

গত শনিবার উত্তরপাড়া কারখানায় কাজ বন্ধের নোটিস ঝোলায় হিন্দুস্তান মোটরস। সেই সমস্যা মেটাতে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার মহাকরণে কর্তৃপক্ষকে ডেকেছিলেন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। বৈঠক শেষে তাঁর দাবি, সোমবারের মধ্যে কর্মীদের বকেয়া বেতনের একটা অংশ আগাম হিসেবে মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সংস্থার দেওয়া বিবৃতিতেও দাবি, তিন-চার দিনের মধ্যে ওই টাকা মেটাতে রাজি তাঁরা।

কিন্তু প্রাপ্তি হয়তো ওইটুকুই। কারণ, কারখানা ফের দ্রুত চালু করা নিয়ে এ দিন আদৌ ইতিবাচক শোনায়নি মন্ত্রীর গলা। যদিও তিনি বলেছেন, “বন্ধ শিল্পের দরজা খোলার আগ্রহ আমাদের রয়েছে।” দাবি করেছেন, রাজ্য চায় না যে, এক সময় মেটাল বক্স বা গেস্ট কিন উইলিয়ামসের মতো ঐতিহ্যবাহী সংস্থার যে পরিণতি হয়েছে, হিন্দ মোটরেরও তা হোক। মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, “একে চালু রাখতে রাজ্য যত দূর সম্ভব চেষ্টা করবে।”

Advertisement

কিন্তু যে কোনও ব্যবসা বেঁচে থাকার কিছু প্রাথমিক শর্ত থাকে। হিন্দ মোটরের তা রয়েছে কোথায়? সংস্থাই জানাচ্ছে, কারখানার দরজায় তালা ঝোলাতে তারা চায় না। কিন্তু গত দশ বছর ধরেই এই কারখানা ধুঁকছে। ক্রমশ বেড়ে চলেছে লোকসানের বোঝা। অন্য সংস্থা যেখানে প্রতি বছর কর্মী পিছু গড়ে ৩৬৫টি গাড়ি তৈরি করে, সেখানে হিন্দ মোটরে সেই সংখ্যা একেরও কম। তার মানে, যেখানে অন্য সংস্থায় এক জন কর্মী প্রতি দিন গড়ে একটি করে গাড়ি তৈরি করছেন, সেখানে এক বছর ধরেও একটি গাড়ি বানাতে পারছেন না হিন্দ মোটরের এক জন কর্মী। এই অবস্থায় এখনই ফের দরজা খুলে লাভজনক ভাবে ব্যবসা কী ভাবে সম্ভব, তা বুঝে উঠতে পারছে না শিল্পমহলও।

কারখানা কর্তৃপক্ষের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, কর্মী সমস্যা শ্রমমন্ত্রীর এক্তিয়ারভুক্ত। কিন্তু কারখানা চালুর ব্যবসায়িক বিষয়টি শিল্প দফতরের। তাই তার খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনার জন্য শিল্পমন্ত্রীর সময় দরকার ছিল।

সুজুকির হাত ধরে মারুতির চাকা গড়ানোর আগে এ দেশের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা ছিল হিন্দ মোটরই। মন্ত্রী-আমলাদের গাড়ি থেকে রাস্তার ট্যাক্সি সর্বত্র সদর্প উপস্থিতি ছিল তাদের গাড়ি অ্যাম্বাসাডরের। কিন্তু নয়ের দশকে অর্থনীতির আগল খুলে যাওয়ার পর তীব্র প্রতিযোগিতায় যুঝতে পারেনি তারা। চুক্তিমাফিক কখনও মিৎসুবিশির যাত্রী-গাড়ি, তো কখনও হাল্কা বাণিজ্যিক গাড়ি তৈরির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে বটে। কিন্তু হালে পানি পায়নি। ক্ষতির বোঝা ক্রমশ বেড়েছে। এক সময় পুঞ্জীভূত লোকসান ছাপিয়ে গিয়েছে নিট সম্পদকেও। সাধারণত যা হলে সংস্থাকে বিআইএফআরে পাঠাতে হয়। এমনকী এক সময় টাকার অভাবে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাওয়াই ক্রমশ মুশকিল হয়ে পড়ছে বলে জানাতে বাধ্য হয়েছে সংস্থা। আর এ সব কিছুর পরেই এই কাজ বন্ধের নোটিস।

অনেকেই বলছেন, শিল্পে ঋদ্ধ যে বাংলার স্বপ্ন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় দেখেছিলেন, তারও অন্যতম অঙ্গ ছিল হিন্দ মোটর। তাঁদের মতে, দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই স্বপ্নের অপমৃত্যুর সাক্ষী। ঠিক তেমনই এ বার অতীত হতে বসা অ্যাম্বাসাডরের সূত্রেও আরও এক বার চুরমার হচ্ছে সেই স্বপ্ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement