তৃণমূলের নেতা খুনে কমিশনকেই তোপ মুকুলের

ভোটের হিংসাকে ঘিরে ফের শাসক দলের তোপের মুখে নির্বাচন কমিশন। বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরে রাজনৈতিক সংঘর্ষকে ঘিরেই শুরু হয়েছে এই চাপানউতোর। শুক্রবার রাতে বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরে খুন হন এলাকার যুব তৃণমূল নেতা অমিতাভ পাঁজা। আর শনিবার বিকেলে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের সভা থেকে ফেরার পথে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে পিটিয়ে খুন করা হয় সিপিএম কর্মী প্রহ্লাদ রায়কে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৪
Share:

তৃণমূল নেতা অমিতাভ পাঁজার দেহে মালা দিচ্ছেন ববি হাকিম। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ভোটের হিংসাকে ঘিরে ফের শাসক দলের তোপের মুখে নির্বাচন কমিশন। বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরে রাজনৈতিক সংঘর্ষকে ঘিরেই শুরু হয়েছে এই চাপানউতোর।

Advertisement

শুক্রবার রাতে বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরে খুন হন এলাকার যুব তৃণমূল নেতা অমিতাভ পাঁজা। আর শনিবার বিকেলে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের সভা থেকে ফেরার পথে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে পিটিয়ে খুন করা হয় সিপিএম কর্মী প্রহ্লাদ রায়কে। প্রথম ঘটনায় অভিযোগের তির সিপিএমের দিকে। আর দ্বিতীয় ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে সিপিএম।

কমিশন এসপি-ডিএমদের বদল করার পরেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব বলেছিলেন, ওই সব জেলায় কোনও গণ্ডগোল হলে কমিশন সে জন্য দায়ী থাকবে। সেই সূত্র ধরেই রবিবার হাটগোবিন্দপুরের দলীয় সভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “গত ছ’মাস রাজ্যে কোনও রাজনৈতিক খুন হয়নি। সংঘর্ষ বাধেনি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই পরিসংখ্যানের চেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-র অভিযোগকে। জেলায়-জেলায় এসপি, ডিএম বদল ঘটেছে। ওসি-দের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই ভোটের মুখে সংঘর্ষে আমাদের যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে, তার দায় কে নেবে? নির্বাচন কমিশন?”

Advertisement

ডিএম-এসপি বদলকে ঘিরে ইতিমধ্যেই শাসক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংঘাত তুঙ্গে উঠেছে। বিভিন্ন সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই বদলি-নির্দেশের কড়া সমালোচনা করে কমিশনের প্রতি সুর চড়া করেছেন। বর্ধমানে মুকুলবাবুও এ দিন বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন জবাব দেবে কেন এই হাটগোবিন্দপুরে অমিতাভ পাঁজা খুন হলেন? কেন এই হত্যা রোখা গেল না? এই জেলায় তো এসপি নির্বাচন কমিশন পোস্টিং করিয়েছে! তা-ও কেন খুন হল?”

মুকুলবাবুর দাবি, “আসলে নির্বাচন কমিশন চাইছে এই রাজ্যে আমাদের আসন কমিয়ে দিতে। আমি বলছি, যতই চেষ্টা করুন না কেন, তা পারবেন না!” এ দিনই কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিহত দলীয় নেতার মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম কমিশনকে বিঁধে বলেন, “দিল্লি থেকে এসে এসপি-ডিএমদের বদলি করে দিলেই ক্ষমতার প্রদর্শন হয় না! কেউই নিরপেক্ষ নয়। সাধারণ মানুষই তাদের ক্ষমতা দেখাবে ভোট দিয়ে।”


সিপিএম কর্মী প্রহ্লাদ রায়ের দেহে মালা দিচ্ছেন সন্তোষ রানা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

শুক্রবার রাতে মারধরে আহত অমিতাভবাবু শনিবার দুপুরে মারা যান এসএসকেএম হাসপাতালে। রবিবার দুপুরে তাঁর মৃতদেহ পৌঁছয় হাটগোবিন্দপুরে। সেখানে তখন মুকুলবাবু-সহ উপস্থিত তৃণমূলের একাধিক নেতা। সভা সেরে মুকুলবাবু নিহত নেতার বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন। নিহতের স্ত্রী কেকা পাঁজার হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন দলের তরফে। অমিতাভ পাঁজা হত্যার ঘটনায় সিপিএমের মোট ৫৯ জন কর্মীর নামে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, “মৃত্যু অবশ্যই দুঃখজনক। কিন্তু, ওই তৃণমূল নেতা শুক্রবার রাত ১২টার পরে দুলেপাড়ায় কী করতে গিয়েছিলেন?” তাঁর অভিযোগ, দুলেপাড়ার সিপিএমের এক যুব নেতার বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছিল নিহত তৃণমূল নেতার নেতৃত্ব। ওই মহিলার চিৎকারে গ্রামবাসীরা হামলাকারীদের বাধা দেন। সংঘর্ষে আহত হন অমিতাভবাবু। মৃত্যু তারই পরিণতি।

ঘটনাচক্রে যে পাঁচ জেলায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে পুলিশ সুপার বদলি হয়েছিল, সেগুলির মধ্যে ছিল বর্ধমান এবং পশ্চিম মেদিনীপুরও। সেই সূত্র ধরেই বিমানবাবুর অভিযোগ, ওই দুই জেলায় তৃণমূল ‘পরিকল্পনামাফিক’ অশান্তি করছে। বিমানবাবু বলেন, “এটা হতেই পারে যে, ছক করে ওই জেলাগুলোয় গোলমাল পাকানো হচ্ছে। কমিশনকে দেখানো হচ্ছে, তোমরা তো এসপি বদল করেছিলে, এখন দেখ কী হচ্ছে সেখানে!”

ঘাটালে সিপিএম কর্মী প্রহ্লাদ রায়কে পিটিয়ে মারা ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাত তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের দুই আত্মীয়ও রয়েছেন। এফআইআর-এ নাম থাকা শঙ্করবাবুর আর এক আত্মীয় পলাতক। তিনি ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও। শঙ্করবাবু আবার পুলিশের বিরুদ্ধে তল্লাশির নামে তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর, মারধর ও শ্লীলতাহানির পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। রবিবার ফ্যাক্স মারফত পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচন কমিশন ও মহিলা কমিশনে ঘাটাল থানার ওসি সুদীপ ঘোষাল এবং ডিএসপি (ক্রাইম) দেবজ্যোতি চক্রবর্তীর নামে অভিযোগ জানিয়েছেন ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের আহ্বায়ক শঙ্করবাবু। শঙ্করবাবুর দাবি, “আমার যে দুই আত্মীয়কে পুলিশ ধরেছে, তাঁরা সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। আর যাঁকে পলাতক বলা হচ্ছে, তিনি সক্রিয় রাজনীতি করলেও ঘটনাস্থলে ছিলেন না।” পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

অশান্তি অবশ্য থামেনি। রবিবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের ভাজাচাউলির ডুমুরবেড়িয়া গ্রামে আক্রান্ত হন দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি, সিপিএম নেতা আশিস গিরি। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। আহত নেতা কাঁথি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মালদহে রবিবার সকাল থেকে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বৈষ্ণবনগর থানার শবদলপুর এলাকা। পুলিশ জানিয়েছে, বোমার ঘায়ে ও হাঁসুয়ার কোপে জখম হন দু’দলের ৮ জন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement