সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীরা টাকা ফেরত পেতে শুরু করেছেন। অথচ একই ধরনের অন্যান্য অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তাঁদের টাকা ফেরতের ব্যাপারে সরকারি সহায়তা মিলছে না বলে সোমবার অভিযোগ তুলল এজেন্ট ও আমানতকারীদের একটি সংগঠন।
ফিল্ড নেটওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামে ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মলয় ঘোষের দাবি, সারদা কমিশনের মাধ্যমে যে-সওয়া চার লক্ষ আমানতকারীকে চেক দেওয়া হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকেই সারদা সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন। অথচ বিচারপতি শ্যামলকুমার সেনের নেতৃত্বে কমিশন গঠনের পরে নোটিস দিয়ে বলা হয়েছিল, শুধু সারদা নয়, অন্যান্য বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই টাকা ফেরত চেয়ে কমিশনের কাছে আবেদনপত্র পাঠাতে পারেন। ওই সংগঠনের সদস্যের প্রশ্ন, তা হলে বিনিয়োগের টাকা ফেরতের ব্যাপারে সারদার ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে কেন?
শুধু প্রশ্ন তোলাই নয়। ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে এ দিন জানানো হয়, খুব শীঘ্রই পুরো বিষয়টি নিয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত আবেদন জানাবেন।
সারদার ভরাডুবির পরে এজেন্ট, আমানতকারীদের টাকা ফেরতের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই বিশেষ তহবিল গড়া হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, টাকা ফেরত চেয়ে প্রায় সাড়ে ১৭ লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়েছে সেন কমিশনে। তার মধ্যে তিন লক্ষেরও বেশি আবেদন এসেছে অন্যান্য সংস্থায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে। তাঁদের টাকা ফেরতের ব্যাপারে কী হবে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ওই সব আমানতকারীর টাকা উদ্ধারের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলাও হয়েছে। একই দাবিতে অন্যান্য অর্থ লগ্নি সংস্থার এজেন্টরা ডিসেম্বরে ‘অল বেঙ্গল ফিনান্সিয়াল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে কলকাতা এবং বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ দেখায়।
সারদার মতো অনেক সংস্থাই অসংখ্য আমানতকারীর কাছ থেকে টাকা তুলে হঠাৎই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। ওই সব সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে এজেন্ট ও আমানতকারীরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এজেন্টদের অভিযোগ, সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়, সাংসদ কুণাল ঘোষ-সহ অনেক কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু পাততাড়ি গুটিয়ে নেওয়া অন্যান্য লগ্নি সংস্থার অভিযুক্ত কর্তাদের ধরতে বিশেষ উদ্যোগী হয়নি পুলিশ। ফলে আমানতকারীদের পুরো চাপটাই এসে পড়ছে এজেন্টদের উপরে। এই অবস্থায় নতুন সংগঠনের অধীনে এজেন্টরা ফের টাকা ফেরত-সহ বিভিন্ন দাবি জানাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সারদা কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলবাবু জানিয়েছেন, সারদা ছাড়া অন্য সংস্থার ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনপত্র স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্ত সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা সব খোঁজখবর নিচ্ছে। তাদের কাজ সম্পূর্ণ হলেই প্রাপক-তালিকা তৈরি হবে।