শিক্ষা ক্ষেত্রে সুস্থ পরিবেশ ফেরাতে রাজ্যের বর্তমান সরকার ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুলল বাম শিবির। এবং শিক্ষায় অসুস্থতার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হিসেবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢালাও টোকাটুকির দিকেই আঙুল তুলছে তারা।
মাধ্যমিকে টোকাটুকির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষায় ‘নৈরাজ্য’-এর ছবি প্রকট হয়েছে বলে বাম পক্ষের অভিযোগ। এর প্রতিবাদে বুধবার বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনেন বাম বিধায়কেরা। যদিও তাঁদের সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে গিয়েছে। পরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন বাম প্রতিনিধিরা। বামেদের তরফে অভিযোগ করা হয়, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার মোকাবিলা করতে পারছে না তৃণমূল সরকার।
মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত সোমবার। প্রথম দিন থেকেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় অনেক পরীক্ষা কেন্দ্রে বাইরে থেকে টুকলির কাগজ সরবরাহের চিত্র ধরা পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তবে সরকার যে টোকাটুকি রুখতে বদ্ধপরিকর, সেই বার্তা দেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু। মঙ্গলবার তিনি জানান, টোকাটুকি বন্ধে জেলাশসক, পুলিশ সুপারদের কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রীর উদ্যোগ সত্ত্বেও নকলবাজি অব্যাহচ। এই অবস্থায় বুধবার বিধানসভা চলাকালীন টোকাটুকি নিয়ে সরব হন বাম বিধায়কেরা। এ দিন সভায় বিষয়টির উল্লেখ করেন এসইউসি-র বিধায়ক তরুণ নস্কর এবং কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়াও। তরুণবাবু জানান, শিক্ষামন্ত্রী টোকাটুকি রুখতে কড়া বার্তা দিচ্ছেন। অথচ পর্ষদ-প্রশাসক বলছেন, কিছুই হয়নি! বিধানসভার বাইরে তরুণবাবু বলেন, “প্রশাসক সরকার মনোনীত ব্যক্তি। টোকাটুকি ঘিরে এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়া সত্ত্বেও তিনি বলছেন ‘কিছুই হয়নি’। এর পরেও তাঁকে ওই পদে রেখে দেওয়া ঠিক কি না, সেটা ভেবে দেখার কথা বলেছি বিধানসভায়।”
পার্থবাবু অবশ্য এ দিন তেমন কড়া বার্তা দেননি। সন্ধ্যায় টেলিফোনে তিনি বলেন, “বাম বিধায়কেরা অন্য একটি বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার ঘরে এসেছিলেন। সেই সময় আমি নিজেই টোকাটুকির প্রসঙ্গ তুলি। তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্ট ভাবে জানতে চাই, কোথায় এমন ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়া গোটা রাজ্যে তো নয়, বরাবরের মতো উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেই এই সমস্যা হচ্ছে বলেও জানাই তাঁদের।”
মঙ্গলবার পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময়বাবু যা বলেছিলেন, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে পার্থবাবু এ দিন বলেন, “টোকাটুকি তো ভিতরে হওয়ার কথা। বাইরে থেকে দেখে ভিতরে কী হচ্ছে, তা বলা যাবে কেমন করে? এ-পর্যন্ত এ বারের মাধ্যমিকে খুব বড় কোনও ঘটনা যে ঘটেনি, সেটা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি।”
টোকাটুকির অভিযোগ এ দিন ফের সপাটে উড়িয়ে দিয়েছেন কল্যাণময়বাবুও। তিনি জানান, প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরেই ১৪৪ ধারা জারি আছে। ওই নিষেধাজ্ঞা ভেঙে কেউ সেখানে ঢুকলেই পুলিশ ধরবে। ভিতরে টোকাটুকি তো হয়ইনি। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরেও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি প্রশাসকের। তিনি বলেন, “প্রশাসনের ভূমিকায় আমি সন্তুষ্ট।”
বুধবার ছিল মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষা। সর্বত্র নির্বিঘ্নে পরীক্ষা হয়েছে বলে জানান প্রশাসক। আজ, বৃহস্পতিবার বিরতি। কাল, শুক্রবার ইতিহাস পরীক্ষা হওয়ার কথা।