রাজ্য সরকারের জমি নীতির ফাঁসেই কেন্দ্রীয় সাহায্যের টাকা আটকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আনলেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। শনিবার কলকাতায় তাঁর মন্ত্রকের এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর খেদ, পরিকল্পনার অভাবে ও খরচ করতে না পারার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে রাজ্যের বেশ কিছু প্রকল্পের টাকা ফেরত চলে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম যুক্তি-তথ্য দিয়ে অভিযোগ খণ্ডনের পথে না হেঁটে স্রেফ কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রাজ্যের একমাত্র সদস্যের উদ্দেশে। ববির কথায়, “উনি তো নতুন মন্ত্রী! এখনও অনেক কিছু জানার বাকি।”
নিউটাউনের নজরুল তীর্থে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির নগরায়ন বিষয়ে ওই কর্মশালায় বাবুল, ববিদের পাশাপাশি ছিলেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুও। তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত অভিযান সফল করতে এ রাজ্যকে আগামী চার বছরের জন্য ৬৫০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। প্রথম কিস্তি হিসেবে ৬৪ কোটি টাকার ‘রিলিজ অর্ডার’ এ দিনই দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে ফিরহাদ রাজ্যের কিছু প্রকল্পে কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য না পাওয়ার কথা তোলেন। দার্জিলিঙের জলপ্রকল্প থেকে শুরু করে গার্ডেনরিচ উড়ালপুল, টালা ট্যাঙ্কের সংস্কার, কলকাতাকে জঞ্জালমুক্ত করতে কমপ্যাক্ট মেশিন বসানোর পরিকল্পনার প্রসঙ্গও তোলেন। কেন্দ্র অনুমোদন দিলেও এই সব প্রকল্পে টাকা না পাওয়া নিয়ে রাজ্যের সমস্যার কথা জানান ফিরহাদ। বেঙ্কাইয়া এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে ফিরহাদের দাবি, ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বেঙ্কাইয়া তাঁকে জানিয়েছেন, সংসদের বাজেট অধিবেশনে জেএনএনইউআরএমের বকেয়া প্রকল্পগুলি নিয়ে কথা হবে।
এ দিনই সল্টলেকে হাডকো ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রকল্পে কেন্দ্রের টাকা না পাওয়া প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানান বাবুল। তিনি বলেন, “রাজ্যের জমি নীতিতে কিছু খামতি রয়েছে, যা কেন্দ্রীয় সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হচ্ছে।” বাবুল জানান, সব রাজ্যই নিয়ম-নীতি মেনে আবেদন জানাচ্ছে। তাদের টাকা পেতেও অসুবিধা হচ্ছে না।” তিনি বলেন, “সব রাজ্যই কেন্দ্রের চোখে সমান। এ রাজ্যের জন্য আলাদা নিয়ম হতে পারে না।” উল্টে বাবুলের অভিযোগ, “খরচ করতে না পারায় এ রাজ্যের অনেক প্রকল্পের টাকা ফেরত যাচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকাই এর প্রধান কারণ।” পাল্টা জবাবে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “যে সব প্রকল্পের টাকা বাকি, তাদের সঙ্গে জমি নীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সবই কেন্দ্রের ছাড়পত্র পাওয়া প্রকল্প।” বাবুল ‘না জেনেই’ এ সব বলেছেন বলে মন্তব্য করেন ফিরহাদ।
কেন্দ্রে নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পরই বাবুল এ রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু সে ডাকে সাড়া দেয়নি রাজ্য সরকার। এ দিনের অনুষ্ঠানে অবশ্য রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় দুই মন্ত্রীর সঙ্গে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ মেজাজেই দেখা গিয়েছে। বেঙ্কাইয়া সরাসরি রাজ্যের বিরুদ্ধে কোনও আক্রমণে যাননি। বরং বলেন, “আমরা কখনওই কারও শত্রু নই। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মাত্র।” দেশের উন্নয়নের স্বার্থে মোদী-মমতা-ফিরহাদ সবাইকে এক সঙ্গে কাজে নামতে হবে।” বাবুল যদিও অনুষ্ঠানের পরে রাজ্যের সমালোচনা করেন।
তিন সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলী গড়ে এ দিনই তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র তথা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনকে তার অন্যতম সদস্য করা হয়েছে। সমমনস্ক দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার বাড়তি দায়িত্বও এখন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যয় ও তাঁর হাতে। ডেরেক জানিয়েছেন, রাজ্যের কিছু প্রকল্পের বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়ার সঙ্গে ফিরহাদ হাকিমের সদর্থক আলোচনা হয়েছে।
এ দিনের কর্মশালায় বেঙ্কাইয়ার মূল বক্তব্য ছিল নগরায়নে সরকারের ভূমিকা নিয়েই। তিনি বলেন, “অন্যান্য রাজ্যের মতো এ রাজ্যেও জনগণের চাহিদার তুলনায় পরিষেবায় ঘাটতি রয়েছে। অনেক রাজ্য স্মার্ট সিটি গড়তে চাইছে। কিন্তু তা তো আর আমার পকেটে নেই, যে বের করে দিয়ে দেব।” তাঁর মতে, এর জন্য রাজ্যগুলিকেই উদ্যোগী হতে হবে। কেন্দ্র টাকা দেবে বলে বসে থাকলে চলবে না। পরিচ্ছন্নতার দিকে যে কেন্দ্রীয় সরকার খুবই গুরুত্ব দিয়েছে, সে কথা জানিয়ে বেঙ্কাইয়া বলেন, “পুরসভার কমিশনার, অফিসারদের নিয়মিত শহর সাফ করার দিকে নজর দিতে হবে। পুর কমিশনারের উচিত প্রতি দিন সকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে শহর ঘুরে দেখা।”