ঝটকা খেয়ে শোধরাবেন মমতা, বলছেন মোদী

শেষ দফার ভোটের আগে সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তকে পুঁজি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ চরমে নিয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। রাজ্য সরকারের বিরোধিতা অগ্রাহ্য করেই সুপ্রিম কোর্ট সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কাল। সেই সূত্র ধরেই আজ মমতাকে আরও ঝাঁঝালো আক্রমণ শানান মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৪ ০২:৩১
Share:

শেষ দফার ভোটের আগে সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তকে পুঁজি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ চরমে নিয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। রাজ্য সরকারের বিরোধিতা অগ্রাহ্য করেই সুপ্রিম কোর্ট সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কাল। সেই সূত্র ধরেই আজ মমতাকে আরও ঝাঁঝালো আক্রমণ শানান মোদী।

Advertisement

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে এত দিন যে কথা তিনি বলে আসছেন, শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তারই সমর্থন মিলল বলে দাবি করেন মোদী। প্রচারের শেষ দিনে সারদা কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে তিনি আজ দিল্লিতে আনন্দবাজারকে বলেন, “অপরাধীদের যাঁরা রাজনৈতিক ভাবে আশ্রয় দিচ্ছেন, তাঁদের কোনও ভাবে রেয়াত করা যাবে না। হাজার হাজার পরিবারের কষ্টের সঞ্চয় আত্মসাতের চেয়ে বড় অপরাধ আর কিছুই হতে পারে না। তাই এমন কোনও দৃষ্টান্ত তৈরি করা উচিত নয়, যাতে ভবিষ্যতে কেউ মানুষকে এ ভাবে আর্থিক ভাবে ধোঁকা দিতে সাহস পায়।” একই সঙ্গে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর ঘোষণা, “কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে আমরা এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”

“আচ্ছে দিন আনেওয়ালা হ্যায়,” এই আশ্বাস শুনিয়ে মোদী দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, সেটাও সেই ভাল দিন আসারই শুভ সঙ্কেত। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, এ বারের ভোটে মমতা ভাল রকম ধাক্কা খাবেন। তার কারণও ব্যাখ্যা মোদী। তাঁর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে চিট ফান্ডের নামে চিটিং হয়েছে। গরিব মানুষের টাকা গিয়েছে। সারদার নামে লক্ষ্মীর লুঠ হয়েছে।

Advertisement

৩৫ বছরে বামেরা পশ্চিমবঙ্গকে বরবাদ করেছে। আর ৩৫ মাসে দিদিও মানুষের মন জিততে পারেননি। বাংলার মানুষ বুদ্ধি দিয়ে বিচার করেন। এখন তাঁরা মনে করছেন, বিজেপিই বাঁচাতে পারবে। এ বারের ভোটে দিদির যে ঝটকা লাগবে,আশা করি তাতে তিনি নিজেকে পরিবর্তন করবেন।”

আগামী সোমবার পশ্চিমবঙ্গে শেষ দফার ভোট মূলত শহর ও শহরতলিতেই। মোদী শুধু নন দলের অন্য শীর্ষ নেতারাও মনে করছেন, লোকসভা ভোটে এই এলাকার মানুষের মধ্যেও মমতা সম্পর্কে মোহভঙ্গ হওয়া শুরু হয়েছে। মোদীকেই তাঁরা এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলিও আজ মমতার প্রতি তোপ দেগে বলেন, “মমতা বুঝতে পারছেন না, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক ভোটাররা তৃণমূলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। তাঁরা মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। মমতা যে ভাবে মোদীর প্রতি রূঢ় শব্দ প্রয়োগ করছেন, তাতে তিনি লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করে ফেলছেন। মমতা তো বামেদের পরিবর্তন করে ক্ষমতায় এসেছেন। তা হলে বিজেপিকে কেন মূল নিশানা করছেন?” জেটলির মতে, বাংলার মানুষও বুঝে গিয়েছেন, মমতাকে দিয়ে রাজ্যের উন্নয়ন হবে না। একমাত্র বিজেপিই তা করতে পারে। মমতা এটা বুঝেই এত আক্রমণাত্মক হচ্ছেন কি না, প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সন্দেহ নেই শেষ দফার ভোটে দলীয় আসন যথাসম্ভব বাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই বিজেপি নেতৃত্বের এই তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ। তবে ভোটযুদ্ধের ময়দানে পরস্পরকে আক্রমণের পালা আজ সন্ধেয় শেষ হল। এখন প্রশ্ন হল, ভোটের পরের সমীকরণ নিয়ে কী ভাবছে বিজেপি? ক’দিন আগেই ‘টাইমস নাও’ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভোটের পর মমতার জন্য তাঁদের দরজা খোলা রয়েছে। আজ কিন্তু মোদী এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। ভোটের পরে প্রয়োজনে মমতার প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়াবেন কি না, এর জবাবে আত্মবিশ্বাসী মোদী বলেন, “প্রশ্নটাই ভিত্তিহীন। রাজীব গাঁধী সরকারের পর এ বারেই প্রথম সবথেকে শক্তিশালী সরকার আসতে চলেছে।”

ফলে উন্নয়নের প্রশ্নে নিজেদের দায়বদ্ধতার কথা জানানোর পাশাপাশি মমতা সরকারকে চাপে রাখতে চাইছেন মোদী। তাঁর কথায়, “যত তাড়াতাড়ি আমরা রাজ্যের উন্নয়ন করতে পারি, ততই মঙ্গল। এ বারের ভোটে দিদির ঝটকা লাগলেও আমি চাইব, বিধানসভা ভোটের আগে আরও দু’বছর তিনি ভাল কাজ করে যান। কেন্দ্রে আমরা সরকারে থাকলে আমাদের সহযোগিতাও তিনি পাবেন।” রাজনাথ-জেটলিরা মনে করছেন, লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মমতা কিছু আসন পেলেও আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপির এক শক্তিশালী ভিত তৈরি হয়ে থাকছে এই রাজ্যে। জেটলি বলেন, “এ বারের ভোটের ফলেই মমতা বুঝতে পারবেন, বিধানসভার জন্য তাঁর বিপদঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে।”

সারদা প্রশ্নে মোদী শুধু মমতার প্রতিই খড়্গহস্ত নন, ছাড় পাচ্ছেন না ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও। আজই সারদা কেলেঙ্কারিতে নবীনের ভূমিকাও তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছে বিজেপি। ভোটের সময় একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু ওড়িশায় তো ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে! তবে কেন এই তোপ?

দলীয় সূত্রের বক্তব্য, এক সময়ের এনডিএ শরিক নবীন আত্মবিশ্বাসে ভর করে যখন জোট ছেড়েছিলেন, তখন বিজেপি ক্ষমতায় ছিল না। এর পরে কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। ফলে মাঝে একটা সময় নবীনকে ফের জোটে পাওয়ার চেষ্টাও চালিয়েছে বিজেপি। দলের কিছু নেতা এখনও মনে করেন, ভোট-পরবর্তী সমীকরণের কথা মাথায় রেখে সম্ভাব্য শরিকদের প্রতি নরম মনোভাব নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এ বারের নির্বাচনে মোদী ও সঙ্ঘের লক্ষ্যই ছিল, এনডিএ সম্প্রসারণের কথা ভুলে যতটা সম্ভব বিজেপির শক্তি বাড়ানোর জন্য ঝাঁপানো। এবং মোদী এখন আত্মবিশ্বাসী, ফল প্রকাশের পর নতুন শরিকের বা কোনও দলের পরোক্ষ সহযোগিতার প্রয়োজনই হবে না। যদিও বা হয় তবে আগে থেকেই মমতা-নবীনদের মতো প্রাক্তন এনডিএ শরিকদের যতটা সম্ভব দুর্বল করে দেওয়াটাই শ্রেয়। রাজনৈতিক ভাবে দু’পক্ষকেই কার্যত দুরমুশ করার অস্ত্র পেয়ে গিয়েছেন সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement