মানছে বিধানসভার কমিটি

জঙ্গলমহলের হাসির নেপথ্যে কেন্দ্রের টাকাও

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয়তম দাবি, তাঁর রাজত্বে পাহাড় ও জঙ্গলমহল হাসছে। উন্নয়নের জোয়ার এনেই তাঁর সরকার জঙ্গলমহলে হাসি ফুটিয়েছে। প্রতি বার পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া বা বাঁকুড়া সফর গিয়ে এই কথাই বলে থাকেন তিনি। বিধানসভায় এ বার রাজ্যেরই অর্থ এবং উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি মেনে নিল, জঙ্গলমহলের তিন জেলায় উন্নয়নের কাজে সিংহ ভাগ অর্থই সরবরাহ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার! কেন্দ্রের অবদান মেনে নিয়ে যে কমিটি এমন রিপোর্ট দিয়েছে, তার মাথায় আবার তৃণমূলেরই বর্ষীয়ান বিধায়ক জটু লাহিড়ী!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয়তম দাবি, তাঁর রাজত্বে পাহাড় ও জঙ্গলমহল হাসছে। উন্নয়নের জোয়ার এনেই তাঁর সরকার জঙ্গলমহলে হাসি ফুটিয়েছে। প্রতি বার পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া বা বাঁকুড়া সফর গিয়ে এই কথাই বলে থাকেন তিনি। বিধানসভায় এ বার রাজ্যেরই অর্থ এবং উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি মেনে নিল, জঙ্গলমহলের তিন জেলায় উন্নয়নের কাজে সিংহ ভাগ অর্থই সরবরাহ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার! কেন্দ্রের অবদান মেনে নিয়ে যে কমিটি এমন রিপোর্ট দিয়েছে, তার মাথায় আবার তৃণমূলেরই বর্ষীয়ান বিধায়ক জটু লাহিড়ী!

Advertisement

অর্থ, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ রিপোর্টে পরিষ্কার দেখানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ (আইএপি) এবং অনুন্নত এলাকা উন্নয়ন তহবিলের (বিআরজিএফ) টাকায় পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার ২৪টি ব্লকে উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ২০১০-১১ সালে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের আইএপি-র সূচনা হয়েছিল। শিশু কল্যাণ, রাস্তা, পানীয় জল, বাজার, কালভার্ট, আশ্রম, হস্টেল বা কমিউনিটি হলের মতো পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ যে এই প্রকল্পের আওতায় হচ্ছে, তা-ই বলা হয়েছে রিপোর্টে। গোটা দেশে ৯টি রাজ্যের ৮৮টি জেলা এই প্রকল্পের আওতায় পড়ে। মাওবাদী-অধ্যুষিত এলাকা হিসাবেই উন্নয়নের জন্য বিশেষ নজর দিতে এই ধরনের প্রকল্পের সূচনা করেছিল মনমোহন সিংহের বিগত সরকার।

সরকারি সূত্রের বক্তব্য, জঙ্গলমহলের মতো পিছিয়ে-পড়া এলাকায় উন্নয়নের কাজ যে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে হচ্ছে, এটা কোনও অভিনব তথ্য নয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে হেতু গুচ্ছ গুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাসের সময় কখনওই কেন্দ্রীয় সরকারের অবদানের কথা বলেন না, তাই এ বারের রিপোর্টের তথ্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিরোধীরা। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার কথায়, “জঙ্গলমহলের কথা বলার সময় মুখ্যমন্ত্রী ভুলেও কেন্দ্রের নাম নেন না! পূর্বতন কেন্দ্রীয় সরকার উন্নয়নের কাজে এই রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা করেছে বলে যে অভিযোগ তিনি করেন, তা যে ঠিক নয় এই রিপোর্টই তার প্রমাণ!” মানসবাবুর সঙ্গে আর এক কংগ্রেস বিধায়ক, প্রাক্তন আমলা সুখবিলাস বর্মাও সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সদস্য। সিপিএমের তরফে প্রতিনিধি মালদহের খগেন মুর্মু। তৃণমূলের তরফে জটুবাবু ছাড়াও আছেন নরেশ চাকী, ফিরদৌসি বেগম, শুভাশিস বটব্যালেরা। কেন্দ্রীয় অর্থ কতটা এসেছে এবং তার কতটাই বা খরচ হয়েছে, সে সব তথ্য সামনে আনার জন্য কমিটিতে বিরোধী শিবিরের বিধায়কেরা লড়াই চালাতেন বলেই কমিটি সূত্রের খবর।

Advertisement

রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, ২০১০-১১ থেকে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত চারটি আর্থিক বছরে আইএপি-র আওতায় পশ্চিম মেদিনীপুর পেয়েছে মোট ৯৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে খরচ হয়েছে ৭৫.৪৩৪৯ কোটি টাকা। তিন বছরে (২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪) বাঁকুড়া ৭০ কোটি টাকা পেয়ে খরচ করেছে ৫২.২৮৮০ কোটি এবং পুরুলিয়া ওই সময়ে ৭০ কোটি পেয়ে খরচ করতে পেরেছে ৫৯.২৮৮০ টাকা। এ ছাড়াও, বিআরজিএফের টাকায় রাস্তা-সহ উন্নয়নের কাজ এবং ‘ন্যাশনাল রুরাল ড্রিঙ্কিং ওয়াটার প্রজেক্ট’ (এনআরডিডব্লিউপি)-র আওতায় ৪১টি জল সরবরাহ প্রকল্পের মধ্যে ৩৮টির কাজ শুরু হয়েছে।

উন্নয়নের ‘কৃতিত্ব’ নিয়ে বিরোধীদের দাবি বা অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ শাসক দল। তৃণমূলের এক বিধায়কের কথায়, “জঙ্গলমহলের মতো পিছিয়ে-পড়া এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু প্রকল্প আছেই। সে সব রূপায়ণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসকের নেতৃত্বে কমিটি গড়ে দিয়েছেন। রাজনীতি ঢুকতে দিন। এগুলো অস্বীকার করলে চলবে না!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement