খুদেদের নাচ-গানের ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত মোবাইলে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
উন্নয়ন-কাজে তাঁর সরকার এক নম্বর বলে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, পাহাড় ও জঙ্গলমহলকে ‘উন্নয়নের মডেল’ বলেও জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসে জঙ্গলমহলের তিন জেলা (পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া)-র পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “উন্নয়নের প্রশ্নে আমরা অনেক কিছুতেই এক নম্বর হয়েছি। একশো দিনের কাজ থেকে শুরু করে, স্কিল ডেভেপমেন্ট, স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রিতে এক নম্বর হয়েছি। ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান, ন্যায্য মূল্যের ডায়াগনস্টিক সেন্টার এটাও তো মডেল। আর ‘জঙ্গলমহল মডেল’, দার্জিলিংও মডেল। আমরাই পেরেছি।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ দিন জঙ্গলমহলের তিন জেলার মাওবাদী প্রভাবিত ২৩টি ব্লকের ‘রিভিউ মিটিং’ হয়েছে। এই নিয়ে গোটা রাজ্যে এমন ৭৩টি প্রশাসনিক বৈঠক হল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “একেবারে সিএমও থেকে বিডিওস্তর পর্যন্ত এই বৈঠক। যেখানে খামতি রয়েছে, আলোচনা হয়েছে। মোটামুটি ঠিক আছে। এ বছর লোকসভা নির্বাচন ছিল। ফলে কাজের সুযোগ হয়নি। তাছাড়া বর্ষা গেল, দুর্গাপুজো গেল। কোথায় কাজে কী সমস্যা, কোথায় দেরি হচ্ছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, গত বছর আমলাশোলে এসে তিনি ১৩ হাজার কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরির সূচনা করেছিলেন। তার মধ্যে ৮ হাজার কিমি রাস্তার কাজ হয়ে গিয়েছে। আরও ৯ হাজার কিমি রাস্তা তৈরি হবে বলেও জানান মমতা। তাঁর কথায়, “এর মধ্যে ৭ হাজার কিমি রাস্তা একেবারেই খারাপ। সব মিলিয়ে ২২ হাজার কিমি রাস্তা হবে। বাঁকুড়া থেকে পুরুলিয়া পর্যন্ত রাস্তা চওড়া করতে সাড়ে তিনশো কোটি টাকা খরচ করা হবে।”
বাঁশি শিল্পী রঞ্জন জানার অনুষ্ঠান তাঁর মন ভরিয়েছে। শিল্পীকে অভিনন্দন জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, উত্তরবঙ্গেও পূর্ত দফতর রাস্তার তৈরির জন্য ছ’শো কোটির টাকা প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি সর্বত্র যুব দিবস, ১২ জানুয়ারি পরিষেবা দিবস, ২০-২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র দিবস পালন করা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ২২টি ও পুরুলিয়ায় ৪৪টি মাল্টি পারপাস কমিউনিটি হল, জঙ্গলমহলের সব ব্লকে মিনি ইন্ডোর স্টেডিয়াম হবে বলে জানান মমতা। মেদিনীপুর মেডিক্যালে ১৬ কোটি টাকায় মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ দিন দুপুর বারোটা নাগাদ ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসে জঙ্গলমহলের তিন জেলার মাওবাদী প্রভাবিত ২৩টি ব্লকের বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে দেড়ঘন্টা ধরে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন তিন জেলার জেলাশাসক, সভাধিপতি, পুলিশ সুপার, তিন জেলার মাওবাদী প্রভাবিত থানার পুলিশ আধিকারিকেরা এবং পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, যুব কল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পশ্চিমাঞ্চল মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প বিষয়ক মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিজি জিএমপি রেড্ডি, আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বিশাল গর্গ, ডিআইজি (বাঁকুড়া রেঞ্জ) অজয় নন্দ। বিভিন্ন দফতরের সচিব, স্থানীয় বিধায়করাও বৈঠকে ছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য ঝাড়গ্রামের রাস্তায় সারেঙ্গায় গাড়িতে তল্লাশি।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়া জেলার কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বিশেষত, সারেঙ্গা ও রাইপুর ব্লকে একশো দিনের কাজের খতিয়ানে অসন্তুষ্ট হন মমতা। বাঁকুড়ার জেলাশাসক ও সভাধিপতিতে সপ্তাহে তিন দিন ওই দু’টি ব্লকে গিয়ে কাজকর্ম খতিয়ে দেখারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিন জেলার মাওবাদী প্রভাবিত থানার আধিকারিকদের কাছে মমতা জানতে চান এলাকার পরিস্থিতি। এলাকায় শান্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। এলাকার ক্লাব-প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ে জনসংযোগ বাড়াতে পুলিশকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলেন। তবে বৈঠকে একবারও ‘মাওবাদী’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। শাসকদলের এক প্রবীণ জনপ্রতিনিধির সরস মন্তব্য, “সরকারি ভাবে জঙ্গলমহল তো হাসছে! তাই হয়তো মুখ্যমন্ত্রী ওই শব্দটি এড়িয়ে গিয়েছেন।”