জেলায় জেলায় সংগঠন বাড়াতে চায় রাজ্য কংগ্রেস

গোটা দেশে মোদী-ঝড়ে উড়ে গিয়ে মাত্র ৪৪টি আসন! পূর্বাঞ্চলে ওড়িশায় খাতা খোলা যায়নি। ক্ষমতায় থেকেও অসমে তিনটি আসন। বিহারে মাত্র দু’টি। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েক বছর পরে একা লড়ে ৬টির মধ্যে রক্ষা করা গিয়েছে চারটি আসন। দেশে জুড়ে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়ার মধ্যেও তুলনামূলক ভাবে এই ফলকে উৎসাহজনক ধরেই আগামী বিধানসভা ভোটের জন্য তৈরি হতে চাইছেন প্রদেশ নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০২:৫৪
Share:

গোটা দেশে মোদী-ঝড়ে উড়ে গিয়ে মাত্র ৪৪টি আসন! পূর্বাঞ্চলে ওড়িশায় খাতা খোলা যায়নি। ক্ষমতায় থেকেও অসমে তিনটি আসন। বিহারে মাত্র দু’টি। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েক বছর পরে একা লড়ে ৬টির মধ্যে রক্ষা করা গিয়েছে চারটি আসন। দেশে জুড়ে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়ার মধ্যেও তুলনামূলক ভাবে এই ফলকে উৎসাহজনক ধরেই আগামী বিধানসভা ভোটের জন্য তৈরি হতে চাইছেন প্রদেশ নেতৃত্ব।

Advertisement

লোকসভা ভোটের আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অধীর চৌধুরীকে। ভোট শিয়রে এসে যাওয়ায় তখন নিজের মতো করে সংগঠন সাজানোর সময় পাননি অধীর। এখন সব কমিটি ভেঙে নতুন করে টিম গড়তে চান তিনি। তার আগে আজ, সোমবার প্রদেশ ও জেলার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক বসছে বিধান ভবনে। ভোটের ফলের প্রাথমিক পর্যালোচনা এবং পরবর্তী কতর্ব্যই বৈঠকের আলোচ্য। এ বার কংগ্রেসের চারটি লোকসভা আসনই এসেছে মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলা থেকে। রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা চান, শুধু ওই দুই জেলায় আটকে না থেকে অন্যান্য জেলাতেও দলের সম্ভাবনার দিকে নজর দিন প্রদেশ ও এআইসিসি নেতৃত্ব। তার সলতে পাকানোর কাজ এখন থেকেই শুরু হোক, চান তাঁরা।

প্রদেশের বৈঠকের অব্যবহিত আগে জেলায় জেলায় সংগঠন বাড়ানোর জন্যই কর্মীদের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন অধীর। কংগ্রেসের অন্যতম ঘাঁটি কাটোয়ায় রবিবার দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠকের শুরুতেই তিনি বলেন, নেতাদের নির্দেশে এখন থেকে আর কর্মীরা চলবেন না। কর্মীদের নির্দেশে নেতারা চলবেন। অধীরের কথায়, “তাই সভাপতি হিসেবে কর্মীদের কথা শুনতে এসেছি। যার মধ্যে দিয়ে আগামী দিনে দল কোন পথে চলবে, তার দিশা পাওয়া যাবে।” বৈঠকে কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা মানুষের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে নামা, কর্মীরা সন্ত্রাসের মুখে পড়লে উচ্চ নেতৃত্বের এলাকায় এসে পাশে দাঁড়ানো, কাজের ছেলেদের সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া-সহ নানা দাবি জানান। অধীর বলেন, “অত্যাচারিতদের পাশে দাঁড়াতে ভালবাসি। যে কোনও সমস্যায় কর্মীদের পাশে আমাকে পাবেন।”

Advertisement

বস্তুত, কংগ্রেস নেতাদের একটি বড় অংশের মতে, রাজ্যে দলের দুরবস্থার জন্য নেতৃত্বের অদূরদর্শিতাই দায়ী। তাঁদের বক্তব্য, ২০০১ সালে বিধানসভা ভোটে মহাজোটের সময়ে ১৪ জন কংগ্রেস বিধায়কের টিকিট কেটে দেওয়া হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোট ছেড়ে এনডিএ-তে ফিরে যাওয়ায় ২০০৪-এ লোকসভা ভোটে একা লড়ে কংগ্রেস পেয়েছিল ৬টি আসন, ২০০৬-এর বিধানসভা ভোটে ২১টি আসন (অধীরের জিতিয়ে আনা দুই নির্দল বিধায়ক বাদে)। আবার ২০০৯-এ তৃণমূলের সঙ্গে জোট হল। রাজ্যে তখন একটি লোকসভা আসন হাতে-থাকা তৃণমূলকে ছাড়া হল ২৮টি আসন। আর কংগ্রেস ১৪টিতে লড়ে ৬টি আসনই রাখল। তার দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া যতগুলি আসনে লড়তে চেয়েছিলেন, তা দেওয়া হল না। কংগ্রেস ৬৫টি আসনে লড়ে ৪২ পেয়েছিল। আরও বেশি আসনে লড়ার সুযোগ থাকলে রাজ্যের সমীকরণই অন্য হতো, দাবি কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের ।

এক রাজ্য নেতার কথায়, “কয়েক বছর রাজ্যের বহু এলাকায় হাত চিহ্ন দেখতেই পাননি মানুষ। রাহুল গাঁধীকে ধন্যবাদ, তিনি এ বার ৪২টি আসনে লড়ার সুযোগ করে দেন!” প্রদীপ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস বিপুল সন্ত্রাসের অভিযোগের মধ্যেও ৬% ভোট পায়। মানসবাবু-প্রদীপবাবুদের তৈরি জমির উপরে লড়েই অধীরের কংগ্রেস এ বার লোকসভায় রাজ্যে ৯.৬% ভোট পেয়েছে। কংগ্রেস নেতাদের লক্ষ্য, ঐক্যবদ্ধ ভাবে এখন থেকে বিধানসভার জন্য ঘর গোছানো শুরু হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement