চুক্তি ভেঙে জিটিএ-র কাজে নাক গলাচ্ছে রাজ্য সরকার।
বৃহস্পতিবার, দিল্লিতে জিটিএ-র তিন শরিক, কেন্দ্র-রাজ্য এবং মোর্চার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে এমনই অভিযোগ মোর্চা নেতৃত্বের।
বৈঠকে মোর্চার তরফে দাবি করা হয়, এ পর্যন্ত ৫০টি দফতর হাতে পেলেও ভূমি রাজস্ব, পূর্ত কিংবা তথ্য সংস্কৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলি এখনও তাদের ‘অধরা’ রয়ে গিয়েছে। এমনকী যে দফতরগুলি হস্তান্তর হয়েছে, তার কাজ কর্মের ব্যাপারেও কার্যত চুক্তি ভেঙে ‘নাক গলাচ্ছে’ রাজ্য সরকার।
এ দিন, বৈঠক শেষে জিটিএ সদস্য রোশন গিরি বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী যে দফতরগুলি জিটিএ-র এক্তিয়ারে থাকার কথা তার অধিকাংশই এখনও রাজ্য সরকার জিটিএ-কে হস্তান্তর করেনি।” দিন কয়েক আগে দার্জিলিঙে এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মোর্চা নেতৃত্ব। সেখানেও তাঁরা ক্ষোভ আড়াল করেননি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সেই বৈঠকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়। তবে তার আশু সমাধান যে সম্ভব নয়, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেই তা স্পষ্ট। তিনি জানান, এ জন্য আইন সংশোধন করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে যতটা সম্ভব দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলে এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। রোশনের দাবি, “জিটিএ যাতে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে, তার জন্য রাজ্য সরকারকে যাবতীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছে।”
মোর্চা নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টিও ঝুলে রয়েছে। এ দিন তা নিয়েও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে জিটিএ। মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, মোর্চার উত্থানের পরে, পৃথক গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলনের সময় থেকে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৫০টি ‘রাজনৈতিক’ মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস চুক্তিতে ছিল। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। তাদের নালিশ শুনে, আগামী দু’মাসের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মোর্চার দাবি।
জিটিএ গঠনের সময় কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতি ছিল, পাহাড়ের উন্নয়ন খাতে বছর প্রতি ২০০ কোটি টাকা করে, প্রথম তিন বছর জিটিএ-র হাতে তুলে দেওয়া হবে। দু’বছর কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত বরাদ্দের ৩১৫ কোটি টাকা পাওয়া গেলেও এ দিন বকেয়া টাকার দাবিতে সরব হন জিটিএ সদস্যরা। জিটিএ-র দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানের ২৪০ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই ব্যয় করেছে তারা। পেশ করা হয়েছে তার হিসেবও। তা সত্ত্বেও বকেয়া অর্থ মিলছে না। এ দিন, জিটিএ-র তরফে আরও ১৭০ কোটি টাকার বাড়তি অর্থ সাহায্য দাবি করা হয়েছে। কেন্দ্রের কাছে তাদের আবেদনের তালিকায় রয়েছে, পাহাড়ে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সৈনিক স্কুল এবং নিউ জলপাইগুড়ির পরিবর্তে দার্জিলিং মেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলি ছাড়ুক সুকনা থেকে।
শিলিগুড়ি ও ডুয়ার্সের বিভিন্ন মৌজাকে জিটিএ-র আওতায় আনতে প্রথম থেকেই দাবি জানিয়ে আসছে মোর্চা নেতৃত্ব। এ দিনের বৈঠকে সে প্রসঙ্গও ওঠে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের আপত্তি রয়েছে। তা লিখিত ভাবে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে রাজ্য সরকারকে।