পাহাড়ে পা দিলেন বিজেপি প্রার্থী এস এস অহলুওয়ালিয়া। স্বাগত বিমল গুরুঙ্গের।
গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে বুধবার দিনভর চাপানউতোরের জেরে দার্জিলিং জমজমাট।
আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি আদায়ের ‘স্বপ্ন’ ফেরি করতে জোরকদমে আসরে নেমেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, বিজেপি এবং নির্দল প্রার্থী মহেন্দ্র পি লামাও। এ দিনই উত্তরবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ফের স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ‘জীবন থাকতে বাংলার এক ইঞ্চি জমি ভাগ হতে দেব না।’ সেই সঙ্গে প্রায় তিন বছর পরে এ দিনই মহা সমারোহে পাহাড়ে ফিরে জিএনএলএফ নেতা সুবাস ঘিসিঙ্গও ঘোষণা করেছেন, ‘গোর্খাল্যান্ড কী ভাবে আদায় করতে হয়’ তা তাঁর ভাল ভাবেই জানা রয়েছে।
এ দিন দুপুর থেকেই তাই দার্জিলিং সরগরম হয়ে যায়। বেলা ১টা নাগাদ মোর্চা সমর্থিত বিজেপি প্রার্থী এস এস অহলুওয়ালিয়া শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, তাঁরা ছোট রাজ্যের পক্ষপাতী। তবে দার্জিলিং কেন্দ্রের সমতলের বিরাট এলাকার ভোটের কথা মাথায় রেখেই হয়তো বিজেপি প্রার্থীকে বলতে শোনা যায়, “বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ গোর্খাল্যান্ডের দাবির যে বিরোধিতা করছেন তা-ও সাংবিধানিক। আলাদা রাজ্যের দাবিও অসাংবিধানিক কিছু নয়। এই দু’য়ের মাঝখানে একটা উপায় খুঁজতে হবে।”
একই দিনে দার্জিলিঙে জাকির হোসেন রোডে নিজের বাড়িতে ফিরলেন সুবাস ঘিসিঙ্গ। ছবি: রবিন রাই।
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিকে পাশে বসিয়ে এ দিন অহলুওয়ালিয়া জানান, লোকসভা ভোটের আগে পুরোনো মামলায় মোর্চা নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাতে নির্বাচন কমিশনে যাবে বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের নামে ‘দোহাই’ দিয়ে পুরোনো মামলায় মোর্চা নেতাদের গ্রেফতার যেমন করা হচ্ছে, তেমনই পুরোনো মামলা খুঁচিয়েও তোলা হচ্ছে। এই ঘটনায় সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে অহলুওয়ালিয়া বলেন, “২০১১ সালে রাজ্য সরকার যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করেছিল, তাতে বলা হয়েছিল গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনের সময় দায়ের করা মামলাগুলি নিয়ে ভবিষ্যতে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না। অথচ ভোটের আগে কমিশনের দোহাই দিয়ে জোর করে পুরোনো মামলা খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে।” তাঁর অভিযোগ, পাহাড়ের যে সব নেতা-কর্মীরা পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কিন্তু কোনও পুরনো মামলা তোলা হচ্ছে না। এই সব তথ্যও নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে।
ঘটনাচক্রে এ দিনই উত্তরবঙ্গে কর্মিসভা শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতাও। বিকেলে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে ও সন্ধ্যায় মালদহে বারেবারেই গোর্খাল্যান্ডের দাবির বিরোধিতায় সুর চড়িয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “পাহাড় এবং সমতল দুই বোনের মতো। আলাদা গোর্খাল্যান্ডের প্রশ্নই নেই। জীবন থাকতে বাংলার এক ইঞ্চি জমি ভাগ হতে দেব না।” দু’টি কর্মিসভায় তেলঙ্গানা গঠনের জন্য কংগ্রেসের যেমন সমালোচনা করছেন, তাদের সমর্থন করার জন্য ততটাই দুষেছেন বিজেপি-কে। তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, “তেলঙ্গানা গড়েছে কংগ্রেস। বিজেপি-র সমর্থনে তা হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, সিপিএম-ও আলাদা তেলঙ্গানার দোসর।
এ দিন বিকেলে পাহাড়ে পৌঁছন ঘিসিঙ্গ। তাঁর দাবি, প্রায় সব দলই তাঁর কাছে সমর্থন চাইলেও কার পাশে দাঁড়াবেন, তা ঠিক করেননি। তাঁর মন্তব্য, “সুবাস ঘিসিঙ্গের কোনও ডুপ্লিকেট হয় না। আমি সেই ঘিসিঙ্গই আছি। এখন থেকে পাহাড়েই থাকব। কোনও দল নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। এটা বলতে পারি, কী ভাবে গোর্খাল্যান্ড আদায় করতে হয় তা আমি জানি।”
এ দিন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গও পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ের সব দল, নির্দল ও সমমনোভাবাপন্নদের একজোট হওয়ার আহ্বান করেছেন। এত দিন সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মহেন্দ্র পি লামার দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার বিরোধিতা করেছেন গুরুঙ্গ। কিন্তু এ দিন নিজের ফেসবুক ‘পেজ’-এ গোর্খাল্যান্ডের স্বার্থে মহেন্দ্রবাবুকেও গুরুঙ্গ অনুরোধ করেছেন এস এস অহলুওয়ালিয়াকে সমর্থনের জন্য। ‘ফেসবুকে’ গুরুঙ্গ লেখেন, “এ বারের লোকসভা ভোটে কারা গোর্খাল্যান্ডকে সমর্থন করছেন আর কারা বিরোধিতা করছেন, তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।” তাঁর বক্তব্য, বিজেপি দেশে ক্ষমতায় আসতে পারে। তারা গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন জানাবে বলেছে, এটা সুবর্ণ সুযোগ। তিনি লিখেছেন, “মহেন্দ্রবাবুকে আমি আমাদের সমর্থন করতে অনুরোধ করছি। ওঁর সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি।” মহেন্দ্রবাবু অবশ্য গুরুঙ্গের আর্জিতে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করে বলেন, “ফেসবুকের মন্তব্য পড়ে মন্তব্য করতে পারব।” ডুয়াস-দার্জিলিং নিয়ে তিনিও যে আলাদা রাজ্যের দাবি তুলেছেন, সে কথাও জানান সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য।
দু’বছর আগে পাহাড়ে জিটিএ গঠন হয়েছে। বন্ধ-অবরোধ-আন্দোলনের জেরে তা এখনও জোরকদমে কাজ করতে পারেনি। এরই মধ্যে ফের আলাদা রাজ্যের দাবির টানাপোড়েন শুরু হওয়ায় তাতছে উত্তরের পাহাড়-সমতল।