উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সিপিএমের দুই জেলা সম্পাদক গৌতম দেব ও সুজন চক্রবর্তীকে যে মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে, সেটি সারদা কেলেঙ্কারির মূল মামলা বলে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশের দাবি। তাঁরা জানিয়েছেন, আমানতকারীদের কাছ থেকে সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সংগ্রহ করা প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা তাঁদের ফেরত না দিয়ে কোথায় সরানো হল ও এই ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে’ কারা লাভবান, তার-ই তদন্ত হচ্ছে ওই মামলায়।
পুলিশি সূত্রের খবর, ওই মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে সারদার কর্নধার সুদীপ্ত সেনের পাশাপাশি দেবযানী মুখোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষ, সোমনাথ দত্ত, অরবিন্দ চৌহান ও মনোজ নাগেলের নামও রয়েছে।
বিধাননগর (উত্তর) থানায় ওই মামলা (কেস নম্বর ১০২, তারিখ ৬ মে, ২০১৩) রুজু করা হয় মল্লিকা চট্টোপাধ্যায় নামে উত্তর শহরতলির কেষ্টপুরের বাসিন্দা এক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে। তাঁর অভিযোগ ছিল, সারদার চারটি সংস্থায় তিনি বিভিন্ন সময়ে মোট ৬ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। তবে মল্লিকা দেবী লিখিত ভাবে নরোত্তম দত্ত নামে সারদার এক এজেন্ট ও ‘সারদার সবর্ময় কর্তা সুদীপ্ত গুপ্ত’-র বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশের বক্তব্য, মল্লিকা দেবী সুদীপ্ত সেনের কথাই বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভুলবশত তাঁর পদবি সেনের জায়গায় গুপ্ত লেখেন। তাই, পুলিশ প্রথমে নরোত্তম দত্তর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে, পরে সুদীপ্ত সেন ও সারদা মিডিয়া গ্রুপের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সোমনাথ দত্তকে এই মামলায় যুক্ত করা হয়।
পরে সিবিআই তদন্তের দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে রুজু হওয়ার পর ওই মামলায় নতুন করে যুক্ত করা হয় দেবযানী মুখোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষ, অরবিন্দ চৌহান ও মনোজ নাগেলকে। পুলিশ জানায়, সব অভিযুক্তই জামিনে রয়েছেন। এখনও ওই মামলায় চার্জশিট পেশ করা হয়নি।
ওই মামলায় কার্যত এক বছর বাদে কেন ডাকা হল গৌতম দেব ও সুজন চক্রবর্তীকে? বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান অর্ণব ঘোষের দাবি, “তদন্তের প্রয়োজনেই ওই দু’জনকে ডাকা হয়েছে।” কী ধরনের প্রয়োজন? গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, “তদন্তে বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ওই দু’জনকে ডাকার প্রয়োজন হয়েছে।” কিন্তু এক বছর পরে হঠাৎ কেন তাঁদের ডাকার প্রয়োজন হল কেন? অর্ণববাবুর কথায়, “তদন্ত চলছে। সেই সূত্রেই ওই দু’জনকে ডাকার প্রয়োজন হয়েছে। তা ছাড়া, যে কোনও মামলার তদন্ত করার জন্য আইন মোতাবেক আমরা তিন বছর সময় পাই।”
ওই মামলায় ইতিমধ্যেই তদন্তকারী অফিসার তিন বার বদল হয়েছে। এর প্রথম তদন্তকারী অফিসার ছিলেন সল্টলেক উত্তর থানার তৎকালীন সাব-ইন্সপেক্টর এস বন্দ্যোপাধ্যায়, পরে দায়িত্ব পান বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের তৎকালীন ইন্সপেক্টর এস এন পাঁজা এবং তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার করা হয়েছে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার আইসি পি রায়কে।
এ বছর মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট জিজ্ঞেস করে, সারদার ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে’ কারা লাভবান? বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-কে জিজ্ঞেস করা হয়, এই ব্যাপারে মূল মামলাটি কোথায়? আর তখনই সিট-এর তরফে বিধাননগর (উত্তর) থানায় রুজু হওয়া ওই মামলাটির কথা বলা হয়।