খবর না দেওয়ার অভিযোগ ওড়াল সিবিআই

সারদা-মামলায় রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতার করার বিষয়টি রাজ্য বিধানসভার স্পিকারকে আগাম জানানোর প্রসঙ্গ নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়ে গেল। মুখ্যমন্ত্রী এবং বিধানসভার স্পিকারের অভিযোগ, এই ধরনের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে যে নিয়ম আছে, তা সিবিআই মানেনি। যার পাল্টা সিবিআইয়ের দাবি, তারা নিয়ম মেনেই চলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

সারদা-মামলায় রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতার করার বিষয়টি রাজ্য বিধানসভার স্পিকারকে আগাম জানানোর প্রসঙ্গ নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়ে গেল। মুখ্যমন্ত্রী এবং বিধানসভার স্পিকারের অভিযোগ, এই ধরনের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে যে নিয়ম আছে, তা সিবিআই মানেনি। যার পাল্টা সিবিআইয়ের দাবি, তারা নিয়ম মেনেই চলেছে।

Advertisement

বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বিধানসভা মুলতুবি থাকার সময় কোনও মন্ত্রী বা বিধায়ককে গ্রেফতার করতে হলে আগেই স্পিকারকে বিষয়টা জানানো ভারতের সংসদীয় রীতির মধ্যে পড়ে। মদনবাবুকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সিবিআই সেই রীতি মানেনি।” একই সঙ্গে তিনি জানান, কোনও মন্ত্রীকে গ্রেফতারের পর অতি দ্রুত (ইমিডিয়েট) তা স্পিকারকে জানানোর কথা তদন্তকারী সংস্থার। সিবিআই সেই নিয়মও মানেনি।

মদনবাবুর গ্রেফতারির খবর পেয়ে শুক্রবার নবান্নে একই অভিযোগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর অভিযোগ ছিল, মন্ত্রীকে গ্রেফতারের আগে সিবিআই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলেনি। স্পিকারকেও আগাম কিছু জানায়নি। বিষয়টি জেনে তিনি নবান্ন থেকেই ফোন করেন স্পিকারকে। তার পর ডেকে পাঠান প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের। ওই কর্তারা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীকে তখনই জানান, সিবিআই পদ্ধতিগত ভাবে কোনও ভুল করেনি। যদিও আমলাদের সেই বক্তব্য মানতে চাননি মমতা।

Advertisement

শনিবার আলিপুর আদালতে মদনের আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিবিআই বিধানসভার স্পিকার এবং রাজ্য সরকার কাউকেই আমার মক্কেলের গ্রেফতারের খবর জানায়নি। আমার মক্কেল এখনও মন্ত্রী। তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। তাঁর হাতে দু’টি দফতর। সিবিআইয়ের উচিত ছিল গ্রেফতারের আগে স্পিকার কিংবা রাজ্য সরকারকে জানানো।”

বদলে গেল মত

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

মুখ্যমন্ত্রী, স্পিকার বা মদনবাবুর আইনজীবীর অভিযোগ মানতে নারাজ তদন্তকারী সংস্থা। কোনও মন্ত্রীকে গ্রেফতারের খবর রাজ্য সরকারকে জানানোর যে দাবি মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, শনিবার আলিপুর আদালতে এজলাসের বাইরে দাঁড়িয়ে তা উড়িয়ে দিয়েছেন সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত। তিনি বলেন, “এ রকম কোনও নিয়মই নেই।” আর স্পিকারকে জানানোর বিষয়টি? এ প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, “নিয়ম মেনে যা করা উচিত, তাই করা হয়েছে। মদন মিত্রকে গ্রেফতার করার পরেই বিধানসভার স্পিকারকে ফ্যাক্স করে গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়।” সিবিআই সূত্রের দাবি, স্পিকারের দফতরে ফ্যাক্স পাঠানোর পাশাপাশি ওই সময়েই ই-মেল করেও বিষয়টি জানানো হয়েছিল। সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, শুক্রবার বিকেলে স্পিকারের দফতরে যে ফ্যাক্স পাঠানো হয়েছিল, তার প্রাপ্তিস্বীকারের কোনও প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। তবে শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার সময়ে যে ফ্যাক্স বার্তাটি পাঠানো হয়েছিল, তার প্রমাণ (সময় সহ) সিবিআইয়ের কাছে রয়েছে।

সিবিআইয়ের বক্তব্য শোনার পরে স্পিকার বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আমার অফিসে সচিব, উপ-সচিবরা ছিলেন। কিন্তু তাঁদের কাছেও সিবিআইয়ের চিঠি বা ফ্যাক্স পৌঁছয়নি। অথচ সল্টলেক থেকে বিধানসভা ভবনের দূরত্ব তো এমন কিছু না।” বিমানবাবুর দাবি, “শনিবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত আমি খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু মদনবাবুর গ্রেফতারের বিষয়ে সিবিআই-এর কাছ থেকে কোনও চিঠি কেউ বিধানসভায় দিয়ে যায়নি। সোমবার গিয়ে আর একবার দেখব।”

মদনের গ্রেফতার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও স্পিকার যে সব অভিযোগ তুলছেন, সে ব্যাপারে আইন কী বলছে?

কোনও মন্ত্রী বা বিধায়ককে গ্রেফতারের আগে স্পিকারকে জানাতে হয় বলে মমতা বা বিমানবাবু যে দাবি করেছেন, তা ধোপেই টেকে না বলে জানিয়েছেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্য বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আবদুল হালিম। সোমনাথবাবু বলেন, “কোনও ফৌজদারি মামলায় কোনও মন্ত্রী বা বিধায়ককে গ্রেফতার করার আগে স্পিকারকে জানানোর কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু গ্রেফতারের অব্যবহিত পরেই তা স্পিকারকে অবশ্যই জানাতে হবে।” হালিম আবার বলেন, “বিধানসভার ভিতর থেকে কাউকে গ্রফতার করতে হলে স্পিকারের আগাম অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু বিধানসভার বাইরে মন্ত্রী বা বিধায়ককে গ্রেফতার করলে দ্রুত সেই ঘটনা স্পিকারকে জানাতে হয়। সেটাই আইন।”

লোকসভা এবং বিধানসভার কার্যবিবরণীর ২২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে লোকসভা বা বিধানসভার কোনও সদস্যকে গ্রেফতার করা হলে তদন্তকারী সংস্থাকে অতি দ্রুত তা স্পিকারকে জানাতে হয়। ওই সদস্যকে কেন গ্রেফতার করা হল, তাঁকে কোথায় রাখা হচ্ছে, তা-ও সুনির্দিষ্ট ভাবে জানাতে হয় স্পিকারকে। এই ‘অতি দ্রুত’ সময় ঠিক কতটা? দীর্ঘদিন বিধানসভায় কাজ করা এক পদস্থ আমলা জানিয়েছেন, গ্রেফতারের দু-তিন ঘণ্টার মধ্যেই খবরটা স্পিকারকে জানানোর নিয়ম। ক্ষেত্র বিশেষে কিছুটা এদিক-ওদিক হতে পারে। তবে ২৪ ঘণ্টার বেশি কখনওই নয়।

যদি দেখা যায়, সোমবারেও মদনকে গ্রেফতার সংক্রান্ত সিবিআইয়ের কোনও বার্তা স্পিকারের দফতরে পৌঁছয়নি, তা হলে কী হবে? বিমানবাবু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সরকার পক্ষ বা কোনও বিধায়ক কোনও প্রস্তাব আনলে তা নিয়ে সভায় আলোচনা হতেই পারে। সভা নিন্দাপ্রস্তাব নিতে পারে। তা ছাড়া যদি কেউ স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনেন, সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”

ফের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা


আব্দুল মান্নান

সারদা কেলেঙ্কারিতে মদন মিত্রকে সিবিআই গ্রেফতার করার প্রতিবাদে আলিপুর আদালত চত্বরে হাঙ্গামা বাধানোয় ফের দেশের শীর্ষ আদালতে মামলার মুখে পড়তে চলেছে তৃণমূল। ওই হাঙ্গামার জেরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। যাঁর মামলার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। শনিবার মদনকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে তৃণমূল সমর্থকরা সেখানে গোলমাল করেন। মান্নান বলেন, “সারদা কাণ্ডের সিবিআই তদন্ত হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। সুুতরাং, এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে গ্রেফতারে বাধা দেওয়ার অর্থ আদালতেরই কাজে বাধা সৃষ্টি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আচরণকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। সে জন্যই সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে।” সিপিএমের আইনজীবী নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সোমবার ওই মামলার প্রস্তুতি সারবেন। এর আগে আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য-সহ তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস কর্মীরা সল্টলেকে সিবিআই দফতরের সামনে ধর্না দিয়েছিলেন। সে ব্যাপারেও সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন মান্নানরা। সেই মামলা বিচারাধীন বলে মান্নান জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement