কর্পোরেটের গণ্ডি পেরিয়ে মমতা-জগতে তন্ময়-সম্প্রতি

ম্যানেজমেন্ট পড়তে পড়তে দু’জনেরই বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি বাঁধা হয়ে গিয়েছে। তবু রাজনীতির অন্দর মহলকে যাচাই করে নিতে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের শিক্ষার্থী হলেন দুই তরুণ। এক জন এ রাজ্যেরই বোলপুরের আদি বাসিন্দা। দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্যে রাজনীতিতেই আসার ইচ্ছা তাঁর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৮:৪১
Share:

ম্যানেজমেন্ট পড়তে পড়তে দু’জনেরই বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি বাঁধা হয়ে গিয়েছে। তবু রাজনীতির অন্দর মহলকে যাচাই করে নিতে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের শিক্ষার্থী হলেন দুই তরুণ।

Advertisement

এক জন এ রাজ্যেরই বোলপুরের আদি বাসিন্দা। দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্যে রাজনীতিতেই আসার ইচ্ছা তাঁর। আর এক জন ছত্তীসগঢ়ের ভিলাই ছেড়ে পড়াশোনার জন্য কলকাতায়। পণ্য বিপণনের কর্পোরেট ইনিংসের বাইরে আদর্শ বিপণনে আগ্রহী। অধুনা আইএমএম (কলকাতা)-র জোকা ক্যাম্পাসের বাসিন্দা দুই তরুণ তন্ময় মণ্ডল ও সম্প্রতি মোতঘারের নতুন কাজের ঠিকানা হতে চলেছে তপসিয়ার তৃণমূল ভবন।

রাজনীতির প্রতি অদম্য আগ্রহ এই একটি মাপকাঠিই তন্ময় ও সম্প্রতিকে সাহায্য করেছে বাকি আবেদনকারীদের টপকে তৃণমূলের হয়ে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পেতে। গত বিধানসভার ভোটে আগে যেমন হয়েছিল, এ বার লোকসভা ভোটের আগেও তেমনই দু’জনকে শিক্ষার্থী হিসাবে চেয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সমাজে বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যোগাযোগ আরও মসৃণ ভাবে গড়ে তোলার জন্য তৃণমূলের নীতি যাঁরা হাতে-কলমে রূপায়ণ করতে পারবেন। আইআইএম (কলকাতা) থেকে মোট জমা পড়েছিল ৩১টি আবেদন। প্রথম বর্ষের কাউকে বিবেচনা করা হবে না বলে বাদ দেওয়া হয়েছিল ১৭ জনকে। বাকি ১৪ জনের আবেদনপত্র, জীবনপঞ্জি খতিয়ে দেখে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়েছিল ৫ জনকে। দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সে রবিবার তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সচেতক তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। শেষ পর্যন্ত বাছা হয়েছে তন্ময় ও সম্প্রতিকে।

Advertisement

ম্যানেজমেন্ট জগৎ, কর্পোরেটের হাতছানি এ সবের মধ্যে রাজনৈতিক দলের শিক্ষানবিশি বেছে নেওয়া কেন? আনন্দবাজারকে তন্ময় বলেছেন, “শুধু বাইরে থেকে কথা বলে ব্যবস্থার পরিবর্তন করা যায় না। তার জন্য ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকতে হয়। আমরা যে জায়গায় আছি, সেখানে ঝান্ডা নিয়ে রাস্তায় নেমে রাজনীাতি করা হয়তো সম্ভব নয়! কিন্তু একটা সুযোগ পেলাম রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারণের প্রক্রিয়া সামনে থেকে দেখার।” তন্ময়ের পরিবার তৃণমূলের প্রতিই অনুরক্ত। পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাবও তন্ময়ের মায়ের কাছে এসেছিল। কিন্তু এখন কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে শিক্ষানবিশি করলে চাকরিতে সমস্যা হবে না? তন্ময়ের মতে, “রাজনীতি আমার দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য। স্বল্প মেয়াদে তার জন্য কিছু স্বার্থত্যাগ করতেই হতে পারে! আমি বহুজাতিকের চাকরিতে বিদেশ যেতে পারি। সেখানে এই নিয়ে উদ্বেগ থাকবে বলে মনে হয় না।”

তন্ময়ের মতোই ভাবনা সম্প্রতিরও। আদতে মরাঠি। বড় হয়েছেন ভিলাইয়ে। এখন কলকাতায়। রাজ্যের রাজনৈতিক চালচিত্রে পরিবর্তন চোখের সামনে দেখেছেন। পরপর নির্বাচনে তৃণমূলের সাফল্য তাঁদের দু’জনকেই আগ্রহী করে তুলেছে। সম্প্রতির কথায়, “যে চাকরি করব, সেখানে পণ্য বিক্রি করতে হবে। কিন্তু রাজনীতিতে একটা আদর্শকে বিপণন করতে হয়। এটা আমার কাছে খুব উত্তেজক মনে হয়েছে।” শিক্ষিত, সচেতন, তরুণ সম্প্রদায়ের আরও বেশি করে রাজনীতির মধ্যে আসা উচিত, মত দু’জনেরই।

ইন্টারভিউ নিয়েছেন যিনি, সেই ডেরেকের প্রতিক্রিয়া, “রাজনীতির জন্য আগ্রহকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেই জন্যই এই দু’জন সুযোগ পেয়েছে। এর পরে আরও কিছু শিক্ষানবিশ নেওয়া হবে।”

কর্পোরেটের মায়া ঠেকিয়ে রেখে শিক্ষার্থীরা আপাতত রাজনীতির বলয়ে ঢুকছেন বটে! কিন্তু রাজনীতিতেও এখন কর্পোরেটের আঙ্গিক কী ভাবে এসে পড়েছে, এ দিনই টের পেয়েছেন এক আবেদনকারী। নির্ধারিত সময়ের ২৫ মিনিট দেরিতে আসায় ওই প্রার্থীর ইন্টারভিউই বাতিল হয়েছে! ডেরেকের কথায়, “অন্য কোনও কারণ নয়। আমাদের দলনেত্রী সময়ানুবর্তিতায় বিশ্বাস করেন। দেরি করলে সেই দলের কাজ কী করে করবেন?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement