কপিলের শেষযাত্রায় শোকে আকুল মতুয়ারা

‘বড়বাবু’র শেষবিদায়ে চোখের জলে ভাসল ঠাকুরবাড়ি। বুধবার মতুয়া ভক্তদের দেখা গেল, তাঁদের সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুতে শোকে মূহ্যমান। কেউ কাঁদছেন। কেউ শোকেরই বহিঃপ্রকাশ হিসাবে দু’হাত উপরে তুলে ডাঙ্কা-কাঁশি-নিশান নিয়ে হরিবোল ধ্বনি তুলে মাতাম-এ (মতুয়াদের নিজস্ব নাচ) সামিল।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৬
Share:

পরিবারের কর্তার (কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর) অন্তিম শয্যায় কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে। বুধবার নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

‘বড়বাবু’র শেষবিদায়ে চোখের জলে ভাসল ঠাকুরবাড়ি।

Advertisement

বুধবার মতুয়া ভক্তদের দেখা গেল, তাঁদের সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুতে শোকে মূহ্যমান। কেউ কাঁদছেন। কেউ শোকেরই বহিঃপ্রকাশ হিসাবে দু’হাত উপরে তুলে ডাঙ্কা-কাঁশি-নিশান নিয়ে হরিবোল ধ্বনি তুলে মাতাম-এ (মতুয়াদের নিজস্ব নাচ) সামিল। সোমবার দুপুরে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে কপিলবাবুর মৃত্যুর পরে গত দু’দিনে এই পরিস্থিতির অভাবটাই বার বার অনুভূত হয়েছে। বুধবার অবশ্য চিত্রটা বদলে গেল। অন্য দু’দিনের তুলনায় এ দিনও ভিড়ও বেড়েছে।

এ দিন সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে মতুয়া ভক্তেরা এসে জড়ো হতে থাকেন গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের পীঠস্থান ঠাকুরবাড়িতে। সকাল সাড়ে ৬টার সময়ে হাজির হন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কপিলকৃষ্ণকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি দ্রুত ফিরে যান কলকাতায়, পূর্ব নির্ধারিত সরকারি কাজে। দলের তরফে শেষকৃত্যের দেখভালের জন্য আসেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। ছিলেন দলের আরও অনেক নেতা। জেলা পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী, জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলও আসেন। পুলিশ কর্মীও প্রচুর পরিমাণে ছিল।

Advertisement

ঠাকুরবাড়ির কামনাসাগরের (মতুয়া ভক্তেরা মহা মেলায় এসে এই বিশাল পুকুরে পুণ্যস্নান সারেন) পাড়ে সত্‌কারের জায়গা প্রস্তুত করা হয়েছিল। প্রথা মতো বাড়ির গাছ কেটে সেই কাঠ দিয়ে চিতা সাজে। সঙ্গে ছিল চন্দন কাঠ। সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে ঠাকুরবাড়িতে হরিচাঁদ মন্দিরের সামনে নাটমন্দিরের ভিতর অস্থায়ী বেদী থেকে কাঁধে করে নামানো হয় সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মরদেহ। ভক্তদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘বড়বাবু’ হিসাবেই। বাবাকে দেখতে এসে চোখের জল সামলাতে পারছিলেন না কপিলবাবুর চার মেয়ে। স্ত্রী মমতাবালাও ভাসছিলেন চোখের জলে। শেষবেলায় চোখের জল সামলাতে পারেননি ভাইপো সুব্রত ঠাকুরও। মনমরা হয়ে ঘুরতে দেখা গেল কপিলের ভাই তথা রাজ্যের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকেও।

হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দির থেকে আশীবার্দী ফুল দেওয়া হয় কপিলের মুখে। দেহ নিয়ে যাওয়া হয় কপিলবাবুর মা তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণিদেবীর (বড়মা) ঘরের উঠোনে। কিন্তু সেখানে দেহ নামানো হয়নি। বড়মাও ঘর থেকে বেরোননি। নাটমন্দিরের পাশের রাস্তা দিয়ে শবযাত্রা এগোয় কপিলবাবুর বাবা প্রমথরঞ্জনের নামাঙ্কিত মন্দিরের দিকে। আশপাশে দাঁড়ানো বহু মানুষ তখন কাঁদছেন। কেউ মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন। ইতিমধ্যেই খবর আসে, মমতাবালাদেবী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন মেজো মেয়ে মোনালিসাও। তাঁদের চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পাঠানো হয় কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে। ঠিক দু’দিন আগে যেখান থেকে শুরু হয়েছিল বাড়ির দিকে কপিলবাবুর অন্তিমযাত্রা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement