শনিবার আদালত থেকে বেরিয়ে এবং সিবিআই দফতরে ঢোকার আগে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। রবিবার পাল্টে গেল ছবিটা। মদন মিত্রের সেই মেজাজটাই উধাও। রবিবার রাত পৌনে ৯টা নাগাদ যখন সিবিআই দফতর থেকে তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন দাপুটে পরিবহণমন্ত্রীর বয়স যেন রাতারাতি বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই।
শুধু মদনবাবু শরীরের ভাষাই নয়, গত ২৪ ঘণ্টায় পাল্টে গিয়েছে অনেক কিছুই। শনিবার সিবিআই দফতরের সামনে ছিলেন তাঁর অনুগামীরা। দলীয় ঝান্ডা নিয়ে আদালত চত্বরে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছিলেন তাঁরা। রবিবার সকাল পৌনে ৭টা নাগাদ বিধাননগর ইলেকট্রনিক্স থানা থেকে যখন সিবিআই অফিসে আনা হয় মদনবাবুকে, তখন সেখানে ছিলেন না তাঁর এক জন অনুগামীও। ভাবা হয়েছিল, বেলা বাড়লে বোধ হয় ভিড় করবেন সমর্থকেরা। কিন্তু সারা দিনে তাঁদের কাউকেই দেখা যায়নি সিজিও কমপ্লেক্সের ধারেকাছে।
তবে শনিবার আদালতে তৃণমূল সমর্থকেরা যে কাণ্ড করেছেন, তাতে উদ্বিগ্ন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রের দাবি, পর পর দু’দিন মদন মিত্রকে নিয়ে যা ঘটেছে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। শনিবারের ওই ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারীরা। সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের একাংশ জানান, আদালতে যাওয়ার সময়ে এক দল লোক গাড়ি আটকে দেয়। ক্রমাগত পুলিশের গাড়ির কাচের উপর ঘুষি মারতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও কাজ হয়নি। এমনকী, খোদ মদনবাবু হাত নেড়ে নিষেধ করলেও থামেননি বিক্ষোভকারীরা। তদন্তকারীরা জানান, যে রকম বিক্ষোভ চলছিল, তাতে মন্ত্রীও আহত হতে পারতেন।
তদন্তকারীদের একাংশের মতে, মন্ত্রীকে আদালতে নিয়ে যাওয়া এবং বের করে আনার ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। এ দিন সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “পর পর দু’দিনের ঘটনা সকলেই দেখেছেন। সিবিআই-ও প্রতিটি ক্ষেত্রে নজর রাখছে।” রবিবার সকালে সিবিআই দফতরে ঢোকার সময়ে অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মদনবাবু। এ দিন তাঁর পরনে ছিল সাদা পাজামা, বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি এবং ঘিয়ে রঙের শাল। চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল ক্লান্তির ছাপ। ম্রিয়মাণ পরিবহণমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে কারও দিকে না তাকিয়ে ধীর পায়ে ঢুকে যান সিবিআই দফতরে।
সিবিআই সূত্রের খবর, শনিবার রাতে মন্ত্রীকে থানার লক আপে রাখা হয়নি। তাঁকে থানার মধ্যে একটি আলাদা ঘরে রাখা হয়। তাঁকে দেওয়া হয়েছে একটি ফোল্ডিং খাটও। রাতে সিবিআই দফতরেই তাঁকে খেতে দেওয়া হয়েছিল সব্জি-রুটি। রাতে থানায় গিয়েই শুয়ে পড়েন মন্ত্রী। তবে তিনি অনেক রাত পর্যন্ত জেগে এ পাশ ও পাশ করেছেন বলে সিবিআই সূত্রের খবর। তদন্তকারীরা জানান, রবিবার দুপুরে জেরা চলাকালীনই স্থানীয় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক এসে মদনবাবুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। সূত্রের খবর, সুস্থই রয়েছেন মদনবাবু। রাতে জেরা পর্ব শেষ হওয়ার পরে তাঁকে আগের রাতের মতোই খাবার খেতে দেন সিবিআই অফিসারেরা। খাওয়ার পরে রাত পৌনে ৯টা নাগাদ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।