কার্ডের তথ্য চুরি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ পুলিশ

গয়া গ্যাংয়ের জারিজুরি ধরে ফেলেছিল কলকাতা পুলিশ। এ বার চ্যালেঞ্জ ঝাড়খণ্ড গ্যাং। বালি থেকে বোলপুর, যাদবপুর থেকে মুম্বই---অনলাইনে টাকা হাতিয়ে জালিয়াতির কারসাজির শিকড়ের খোঁজে বার বার রাজ্যের ঝাড়খণ্ড সীমানায় মিলছে সূত্রের হদিস। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে নানা ভাবে গ্রাহকদের সতর্ক করেও কমছে না লোক ঠকানোর ঘটনা।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৭
Share:

গয়া গ্যাংয়ের জারিজুরি ধরে ফেলেছিল কলকাতা পুলিশ। এ বার চ্যালেঞ্জ ঝাড়খণ্ড গ্যাং। বালি থেকে বোলপুর, যাদবপুর থেকে মুম্বই---অনলাইনে টাকা হাতিয়ে জালিয়াতির কারসাজির শিকড়ের খোঁজে বার বার রাজ্যের ঝাড়খণ্ড সীমানায় মিলছে সূত্রের হদিস।

Advertisement

বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে নানা ভাবে গ্রাহকদের সতর্ক করেও কমছে না লোক ঠকানোর ঘটনা। বেগতিক দেখে অনলাইন জালিয়াতি বন্ধ করতে খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার দ্বারস্থ হয়েছে কলকাতা পুলিশ। গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, অনলাইন টাকা সরানোর প্রক্রিয়ায় কিছু রদবদলের জন্য আরবিআই কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

কী ভাবে ঘটছে এমন জালিয়াতি? গয়া গ্যাংয়ের ক্ষেত্রে জালিয়াতেরা এটিএম থেকে কৌশলে টাকা সরাত। এ ক্ষেত্রে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করে স্মার্টফোনেই অনলাইন টাকা সরানো হচ্ছে। ব্যাঙ্ক-কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বিনীত ভঙ্গিতে গ্রাহকের হাঁড়ির খবর বার করে ফেলতে জুড়ি নেই জালিয়াতদের। সাধারণত, গ্রাহকের ডেবিট কার্ড ব্লক হয়ে গিয়েছে বলে ফোন আসে। বলা হয়, এখনই পিন না বদলালে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে যাবে। এমনও হয়েছে, বেসরকারি সংস্থার কর্তা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বিষয়টি যাচাই না করেই কার্ড নম্বর, মেয়াদ ফুরোনোর তারিখ, সিভিভি নম্বর, পিনসব বলে দিয়েছেন। ইদানীং কালে এই তথ্যের ভিত্তিতে অনলাইন টাকা খরচ করার সময়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের মোবাইলে এককালীন পাসওয়ার্ড পাঠানো দস্তুর। অনলাইন প্রক্রিয়া চালু করে জালিয়াত অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহককে বলেছেন, পরিচয় যাচাই করতে আপনার মোবাইলে আমি একটি নিরাপত্তা কোড পাঠিয়েছি, বলুন তো সেটা কী! গ্রাহক সেটাও বলে দিয়েছেন।

Advertisement

পুলিশের কাছে আসা এমন সব অভিযোগের মধ্যে দেখা গিয়েছে, এক ব্যক্তির সঙ্গে কার্ড ছিল না। ফোন করে স্ত্রীর থেকে সব খুঁটিনাটি শুনে জালিয়াতকে ফোনে বলে দিয়েছেন। এর পরেই গ্রাহকের কাছে ব্যাঙ্কের ‘থ্যাঙ্ক ইউ-এমএমএস’ গিয়েছে, অনলাইন খরচ করে অমুক অ্যাকাউন্টে ‘এত’ টাকা পাঠানোর জন্য। তখন হাত কামড়ানো ছাড়া উপায় নেই। আর একটি ঘটনায় এক ব্যক্তির কার্ডের নম্বরটা পুরো পড়া যাচ্ছিল না। জালিয়াত ফোনে বলে, কোনও সহকর্মীর কার্ড নম্বর বললেও হবে। এর পরে সেই কার্ড থেকে টাকা লোপাট হয়েছে।

লালবাজারের এক কর্তার দাবি, “এ ভাবে তস্য বোকা বনার পরে প্রথমে অনেকে বলতে চান না, কী ভাবে এমন হল। নেট ব্যাঙ্কিংয়ের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা লোপাটের গল্প বলেন। পরে বোঝা যায় আসল ঘটনা।” দেখা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া, ধানবাদ, সিংভূমের কিছু এলাকায় এই জালিয়াতির চক্র সক্রিয়।

এই সমস্যার মোকাবিলায় কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ বা বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ? কলকাতা পুলিশের তরফে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে বৈঠকে কিছুটা ফল মিলেছে। সপ্তাহে অন্তত দু’বার ব্যাঙ্কের তরফে গ্রাহকদের এসএমএস পাঠানোর চেষ্টা চলছে। ওই এসএমএসে স্পষ্ট বলা হয়, অচেনা কেউ ব্যাঙ্কের নাম করে তথ্য চেয়ে বসলে গ্রাহক যেন কিছু না বলেন। কলকাতা পুলিশের তরফেও জনে জনে এমন এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা কমার লক্ষণ নেই। দক্ষিণ কলকাতার এক থানার ওসি-র কথায়, “ডেবিট কার্ডের তথ্য আদায় করে এমন চার পাঁচটি জালিয়াতির অভিযোগ হপ্তায়-হপ্তায় আসে।”

এই পরিস্থিতিতে গত মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন লালবাজার কর্তারা। ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার ওসি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় কয়েকটি প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। পুলিশের প্রস্তাব, জালিয়াত ডেবিট কার্ডের তথ্য চুরি করে নিলেও যাতে সঙ্গে সঙ্গে টাকা সরাতে না পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি, কেউ যে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরাচ্ছে, তা-ও গ্রাহককে বুঝিয়ে দিতে হবে। কী ভাবে সেটা সম্ভব?

পুলিশ চায়, অনলাইন টাকা সরানোর প্রক্রিয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে তা অন্য অ্যাকাউন্টে সরানো যাবে না। ব্যাঙ্কের তরফে কিছুক্ষণ টাকা আটকে রেখে কত টাকা সরানো হচ্ছে, তা এসএমএস করে গ্রাহককে জানাতে হবে। এক পুলিশকর্তার কথায়, “টাকা অনলাইনে সরানোর এই পর্যায়টিকে আমরা পার্কিং ওয়ালেট নাম দিয়েছি। ৬-১২ ঘণ্টা টাকা ওই ওয়ালেটে আটকে থাকবে। গোলমাল বুঝলে গ্রাহক অনলাইন টাকা সরানোর প্রক্রিয়া বাতিল করতে পারবেন।” তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই প্রক্রিয়া অনুমোদন করে ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ পাঠালে তবেই এটি চালু হবে। কলকাতা পুলিশের তরফে কিছু সদর্থক প্রস্তাব আসার কথা জানিয়েছেন কলকাতায় আরবিআই-এর জিএম অজয় কুমার। তিনি বলেন, “প্রস্তাবটি আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ খতিয়ে দেখছে। গ্রাহকদের সচেতন করা ছাড়াও ব্যাঙ্ক ও পুলিশকে নিয়েই সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement