বনগাঁ উপ-নির্বাচনের আগে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গেল তৃণমূল-বিজেপিতে। সদ্য শাসক দল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে শনিবার ব্যক্তি-আক্রমণের অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে। জবাবে একই পথে হেঁটেছেন মঞ্জুলও। আবার মঞ্জুলের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন জ্যোতিপ্রিয়-শিবিরের এক নেতা।
বিজেপির অভিযোগ, মতুয়া ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়। মন্ত্রীর দাবি, তিনি নয়, এক সময়ের ঘনিষ্ঠেরাই এ দিন মঞ্জুল সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তিনি শুধু সে কথার উল্লেখ করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত ঠাকুরনগরের একটি লজে। এ দিন সেখানে মঞ্জুল-ঘনিষ্ঠ বলে দলে পরিচিতদের নিয়ে একটি কর্মিসভায় হাজির ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের নেতাদের একাংশের ধারণা ছিল, গাইঘাটা ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েত এলাকায় মঞ্জুল-অনুগামীদের উপস্থিতি চোখে পড়ে। ভোটের আগে হাওয়া পরখ করতেই তাঁদের ডাকা হয় সভায়। তবে সভায় মঞ্জুল-অনুগামীদের উপস্থিতি দেখে এবং তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে দলের নেতাদের ধারণা হয়, ওই সব কর্মী-সমর্থকেরা ব্যক্তি নয়, দলের প্রতি অনুগত। এর পরেই সভায় জ্যোতিপ্রিয়কে বলতে শোনা যায়, “প্রমথরঞ্জন (পি আর) ঠাকুর ও বীণাপানিদেবী (বড় মা) নমস্য। কিন্তু পরিবারের তিন ছেলের মধ্যে এক জন কুলাঙ্গার হতেই পারে।”
মতুয়া-সম্প্রদায়ের অবিসংবাদী নেতা প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের তিন ছেলের মধ্যে মৃদুলকৃষ্ণ এবং কপিলকৃষ্ণ মারা গিয়েছেন। বনগাঁর সাংসদ পদে কপিলের টিকিট পাওয়া নিয়েই তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া উদ্বাস্তু পুনর্বাসনমন্ত্রী মঞ্জুলের। কপিলের মৃত্যুর পরে দেখা যায়, ঠাকুরবাড়িতে তাঁর স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুরকেই গুরুত্ব দিচ্ছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একটি প্রভাবশালী অংশ। ক্ষোভে বড় ছেলে সুব্রতকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন মঞ্জুল। সে দিনই মমতাবালাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে তৃণমূল। বনগাঁ উপনির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দিল্লিতে দলের নেতৃত্বের অনুমোদনের জন্য রাজ্য বিজেপি যাঁদের নাম পাঠিয়েছে, সুব্রত তাঁদের অন্যতম।
জ্যোতিপ্রিয়র আক্রমণের জবাবে মঞ্জুল বলেছেন, “উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলকে জ্যোতিপ্রিয়ই শেষ করছেন।” রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীর চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলতে ছাড়েননি তিনি। বিজেপির তরফে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক (নিজেও মতুয়া) বিপ্লব হালদারের বক্তব্য, “পিআর ঠাকুরের বংশের কারও সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা মানে মতুয়া ভাবাবেগে সরাসরি আঘাত। জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কাছ থেকে মতুয়ারা এমন আশা করেননি।” বিজেপি নেতাদের সংযোজন: “এর আগে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর বংশধর বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে ক্ষমা চাইতে হয়েছে তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ওঁরা কি ঠেকেও শেখেন না?” জ্যোতিপ্রিয়র বক্তব্য, “মতুয়া ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার প্রশ্ন নেই। এ দিনের সভায় এক সময়ের ঘনিষ্ঠরাই মঞ্জুলবাবুকে নিয়ে ওই মন্তব্য করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে আমি তার উল্লেখ করেছি মাত্র।” এর পরে এ দিন সন্ধ্যায় জ্যোতিপ্রিয় অনুগামী বলে পরিচিত গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সহ-সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ গাইঘাটা থানায় মঞ্জুলের বিরুদ্ধে মুকুল রায়ের সাংসদ তহবিল থেকে ঠাকুরবাড়ির উন্নয়নকল্পে দেওয়া ২০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করেছেন। পুলিশ তদন্ত করছে। মঞ্জুল অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, “পরিবারের সম্মানহানি করতে উঠে পড়ে লেগেছেন জ্যোতিপ্রিয়রা।”
ঠাকুর পরিবারের দিকে আঙুল ওঠায় মতুয়া-ভাবাবেগে আঘাত লাগছে না? মঞ্জুলের বৌদি মমতাবালার জবাব, “মন্ত্রী কী বলেছেন, মন্তব্য করব না। এটুকু বলতে পারি, মঞ্জুল ঠাকুরের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করেছেন বড় মা।”