সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে ফের জেরা করতে চেয়ে রাজ্য কারা দফতরে চিঠি পাঠাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কুণাল আপাতত দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি। জেলে বন্দি কোনও অভিযুক্তকে জেরা করতে হলে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। ইডি-র কাছে সেই অনুমতি আছে কি না, কেন্দ্রীয় সংস্থারকে পাল্টা চিঠি দিয়ে তা জানতে চেয়েছে কারা দফতর।
নবান্ন সূত্রের খবর, গত শনিবার ইডি-র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর রঞ্জন সেন একটি চিঠি পাঠান রাজ্য কারা দফতরে। তাতে বলা হয়, কুণালকে জেরা করার জন্য রবিবার তাঁকে ইডি-র দফতরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক। উত্তরে কারা দফতর ইডি-কে চিঠি লিখে জানতে চায়, কোনও বিচারাধীন বন্দিকে জেল থেকে জেরার জন্য নিয়ে যেতে হলে আদালতের যে নির্দেশ প্রয়োজন, তা ইডি-র আছে তো? এ ব্যাপারে সোমবার রাত পর্যন্ত ইডি জবাব পাঠায়নি বলেই কারা দফতরের এক কর্তা জানান। ইডি চেয়েছিল, কুণালকে তাদের দফতরে হাজির করানোর ব্যবস্থা করুক কারা দফতর। কিন্তু কারাকর্তারা জানিয়ে দেন, যে সংস্থা বিচারাধীন বন্দিকে জেরা করতে চায়, তাদেরই গাড়ি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। কুণালের ক্ষেত্রে আদালত অনুমতি দিলে সেই ব্যবস্থা করতে হবে ইডি-কেই।
সারদা কাণ্ডের তদন্তের শুরুতেই কুণালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের তদন্তকারী সংস্থা ‘সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস’ (এসএফআইও)-এর তদন্তকারীরাও জেরা করেছিলেন তাঁকে।
গত বুধবার সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী পিয়ালি ও ছেলে শুভজিৎকে। তাদের জেরা করে কিছু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, লকার ও সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। এক তদন্তকারী জানান, কুণালকে জেরা করে আগে কিছু তথ্য মিলেছিল। সম্প্রতি যে নতুন তথ্য হাতে এসেছে, তার ভিত্তিতেই ফের কুণালকে জেরা করতে চায় ইডি। তবে আদালতের অনুমতি কবে মিলবে, কুণালকে কবে জেরা করা হবে তা এখনও নিশ্চিত করে বলছে পারছেন না ইডি-র কর্তারা।
কলকাতায় ঘাঁটি গেড়ে ইডি তৎপর হওয়ায় গত ক’দিনে নতুন করে গতি পেয়েছে সারদা তদন্ত। ইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, একাধিক ই-মেল ও মোবাইল ফোনের সূত্র থেকে বেশ কিছু নতুন নাম মিলেছে। সারদার তছরূপ হওয়া অর্থের সন্ধান পেতে পনেরো জনকে নোটিস পাঠিয়েছে ইডি। যার মধ্যে লোকসভা ভোটে বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ এবং প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার রয়েছেন। দু’জনে নোটিস পাওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। রজতবাবু ইডি অফিসারদের সঙ্গে দেখা করার কথা স্বীকার করেছেন। অর্পিতাও ফোনে ইডি কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর কেন্দ্রে ভোট মিটলে ২৫ এপ্রিল তিনি ইডি দফতরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। ইডি সূত্রের খবর, কিছু লোককে জেরা করে পাওয়া তথ্য কুণালের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চান তাঁরা। সারদার জমি সংক্রান্ত তথ্য জানতে রাজ্যের ভূমি রাজস্ব দফতর ও কয়েকটি ব্যাঙ্কেরও সাহায্য নেওয়া হতে পারে বলে ইডি সূত্রের খবর।
ইডি সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে সারদার প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ মেলে। এ ছাড়া কলকাতার উপকণ্ঠে সারদার টাকায় বেনামে কেনা কয়েক একর জমি ও একটি পানশালারও খোঁজ পান তদন্তকারীরা। যার মূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা। এই জমি কেনাবেচার আইনি কাগজপত্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন ইডি কর্তারা। একটি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ওই জমি রেজিস্ট্রেশনের কোনও নথি পায়নি ইডি। ফলে জমি কেনাবেচা না দখল করা হয়েছিল তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে গোয়েন্দাদের।
এ দিন ইডির একটি দল সারদার অধীনস্থ একটি চ্যানেলের আর্থিক বিষয়ক কাগজপত্র জোগাড় করতে গিয়েছিলেন। ওই চ্যানেলটি প্রথমে অন্য মালিকানায় ছিল। পরে সারদা গোষ্ঠী তা কেনে। চ্যানেলটি চালাতে কী খরচ হত, তা কত টাকায় সারদা গোষ্ঠী কিনেছিল এ সব কাগজপত্র জোগাড় করতে চাইছে ইডি। এক তদন্তকারীর কথায়, “কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে খুব শীঘ্রই এই সব কাগজপত্র দরকার পড়বে।” সারদার মালিকানাধীন আরও কিছু সংবাদমাধ্যম নিয়েও খোঁজ করছেন গোয়েন্দারা।
আজ, মঙ্গলবার পিয়ালি ও শুভজিতকে ফের আদালতে হাজির করানো হবে। ধৃত দু’জনকে ফের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আর্জি জানাতে পারেন তদন্তকারীরা। ইডি-র নোটিস পাওয়া কয়েক জনকে পিয়ালি ও শুভজিতের সামনাসামনি বসিয়ে জেরার পরিকল্পনাও রয়েছে তদন্তকারীদের।
ইডি-র তৎপরতা নিয়ে এ দিনও সরব ছিল বিভিন্ন দল। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে সভায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ফের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, “অর্পিতাকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে, আজ মুকুল রায়কে চিঠি পাঠানো হবে, কাল ওকে পাঠানো হবে, তাকে পাঠানো হবে। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে নোংরা খেলা খেলা হচ্ছে।
সারদা নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধে এ দিন সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাত বলেন, “তৃণমূলের এক জন নেতা জেলে রয়েছেন। আরও অনেকের নাম এসে যাবে। সারদা মানেই মমতা! মমতা মানেই চিটফান্ড, আর চিটফান্ড -দুর্নীতি!” এ রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, “খাদির শাড়ি আর হাওয়াই চটি পরে ঘুরে বেড়ালেই স্বচ্ছতার প্রতীক হওয়া যায় না।’’