কাগজকল খুলতে সাহায্যের আশ্বাস

শিল্পোদ্যোগীদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা যাবে না বলে শনিবারই বর্ধমানের দলীয় নেতাদের সতর্ক করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুর নরম করলেন দুর্গাপুরের প্রতাপপুরে সিন্ডিকেট চালানোয় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৭
Share:

দুর্গাপুরের প্রতাপপুরের বাঁশিয়া গ্রামে বন্ধ হয়ে যাওয়া কাগজকল ফের চালু ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবিতে রবিবার মিছিল করল সিপিএম। ছবি তুলেছেন বিশ্বনাথ মশান।

শিল্পোদ্যোগীদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা যাবে না বলে শনিবারই বর্ধমানের দলীয় নেতাদের সতর্ক করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুর নরম করলেন দুর্গাপুরের প্রতাপপুরে সিন্ডিকেট চালানোয় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতারা। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে সেখানকার বন্ধ হয়ে যাওয়া কাগজকল চালুর জন্য সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। কাজ চালুর আর্জি জানিয়েছে সিপিএম এবং এসইউসি-ও। কাগজকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের উপরে বেজায় চটেছেন প্রতাপপুরের বাসিন্দারা।

Advertisement

ওই কাগজকলের সমস্যা মেটাতে আজ, সোমবার দুপুরে কারখানার দুর্গাপুরের আধিকারিকদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন বলে জানান রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। তিনি বলেন, “স্থানীয় আধিকারিকেরা দেখা করতে চেয়েছেন। শ্রম দফতরে আলোচনা হবে।” যদিও কাগজকলটির মালিক বাবুভাই খান্ডেলওয়াল বলেন, “আমি জম্মুতে রয়েছি। বৈঠকের ব্যাপারে আমার কাছে কোনও খবর নেই।”

চার বছর আগে তৈরি হওয়ার কিছু দিন পরেই নানা কারণে বন্ধ হয়ে পড়েছিল প্রতাপপুরে ওই কাগজকলটি। গত জুনে দিল্লির শিল্পপতি বাবুভাই খান্ডেলওয়াল প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকায় কিনে কারখানা চালু করতে উদ্যোগী হন। সীমানা পাঁচিল-সহ নানা নির্মাণকাজ চলছিল। উৎপাদন বাড়াতে কিছু সম্প্রসারণ প্রকল্পও হাতে নেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিন্ডিকেটের উৎপাত ও নানা রাজনৈতিক দলের তরফে লোক নিয়োগের চাপের অভিযোগ তুলে শুক্রবার কাজ বন্ধের নোটিস দেওয়া হয় ওই কাগজকলে।

Advertisement

কাগজকল চালুর প্রক্রিয়া শুরুর পরে টুকটাক কাজ পাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আশায় ছিলেন, উৎপাদন শুরু হলে আরও অনেকে কাজ পাবেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তাঁরা। রাজনৈতিক নেতাদের উপরে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। মলয় কুণ্ডু নামে এক বাসিন্দার কথায়, “রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থ দেখছেন। আমরা চাই, দ্রুত কারখানা চালু হোক।” আর এক বাসিন্দা মাধব দে বলেন, “দু’এক জনের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর জন্য যাঁরা দায়ী, বাসিন্দাদের কাছে তাঁদের জবাবদিহি করতে হবে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, “কারখানা চালু হচ্ছে দেখে ভেবেছিলাম কাজ পাব। কিন্তু পার্টির নেতারা যা শুরু করেছেন, কোনও আশা দেখছি না!”

শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ, তার পরে এলাকাবাসীর উষ্মা আঁচ করে রবিবার সিন্ডিকেট চালানোয় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তাপস মণ্ডল বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষ আসুন। তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করা হবে।” তাপসবাবু ও তাঁর দলবল ওই কারখানায় নির্মাণ সামগ্রী কেনার ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি, নিয়োগের জন্য চাপ দেওয়ায় অভিযুক্ত তৃণমূলের অপর নেতা মানস মণ্ডলের আবার দাবি, “দলের একাংশের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফের কাজ শুরু হোক। কারখানা যাতে নির্বিঘ্নে চলে, তা আমরা দেখব।” সিপিএম নেতা সুব্রত পাল, এসইউসি-র বিপ্লব মণ্ডলদের বক্তব্য, “শুধু তৃণমূলের লোকেরা কাজ পাবেন, তা হবে না। আলোচনা হোক। কিন্তু আগে কাজ চালু হওয়া দরকার।” ওই দুই দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও সিন্ডিকেট গড়ে দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠেছিল। অবিলম্বে কারখানা খোলার দাবিতে রবিবার গ্রামে একটি মিছিলও করে সিপিএম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement