কংগ্রেসের গড়েই অধীরকে চ্যালেঞ্জ যুবরাজের

কংগ্রেসের ‘গড়’ বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদে ঢুকে খোদ অধীর চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডোমকলের জনকল্যাণ ময়দানে মঙ্গলবারের জনসভায় তাঁর কুড়ি মিনিটের বক্তব্যে প্রায় পনেরো মিনিট ধরেই ছিল অধীর-আক্রমণ। কখনও সরাসরি চ্যালেঞ্জ, কখনও কটাক্ষ শুনে হাততালিতে ফেটে পড়েছে মাঠে উপস্থিত তৃণমূলের প্রায় হাজার আটেক কর্মী-সমর্থক।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

ডোমকল শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫২
Share:

ডোমকলের সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত

কংগ্রেসের ‘গড়’ বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদে ঢুকে খোদ অধীর চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডোমকলের জনকল্যাণ ময়দানে মঙ্গলবারের জনসভায় তাঁর কুড়ি মিনিটের বক্তব্যে প্রায় পনেরো মিনিট ধরেই ছিল অধীর-আক্রমণ। কখনও সরাসরি চ্যালেঞ্জ, কখনও কটাক্ষ শুনে হাততালিতে ফেটে পড়েছে মাঠে উপস্থিত তৃণমূলের প্রায় হাজার আটেক কর্মী-সমর্থক।

Advertisement

যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেকের রাজ্য সফর যে ডোমকল থেকেই শুরু হবে, সে কথা আগেই ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল। মুর্শিদাবাদও ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছিল যে, অধীরের গড় দখল করতে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসা পিতা-পুত্রের (প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেন ও তাঁর পুত্র সৌমিক হোসেন) উপরে বিশেষ ভরসা রাখছেন পিসি-ভাইপোও (তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ভাইপো অভিষেক)। কিন্তু এ দিন কখনও নাম করে, কখনও নাম না করে অভিষেক যে ভাবে অধীরকে বিঁধলেন, তা এর আগে সিপিএম কিংবা বিজেপি দূরে থাক, খোদ মমতাও ততটা করেছেন বলে মনে করতে পারছেন না তৃণমূলের বহু পোড় খাওয়া নেতা!

অভিষেক এ দিন সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, “মুখে বড় বড় কথা। আর ভোটের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখিয়ে ভোট আদায়। দম থাকলে কত বড় বাপের ব্যাটা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়ে দেখাও!” কখনও বলেছেন, “ও কি এই জেলার হরিদাস পাল? রেলের মন্ত্রী থাকার সময় কাকে জমি দেওয়া হয়েছে আমরা জানি না?” কখনও আবার হুমকির সুরে বার্তা, “তৃণমূল কর্মীদের গায়ে একটা আঁচড় পড়লে কংগ্রেস নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করুন। ঘেরাও করে আমাকে ফোন করুন। আসতে যে সময়টা লাগবে সেটুকু দেবেন। পৌঁছে দেখে নেব, কে কত বড় বাপের ব্যাটা!” তাঁর সেংযাজন, “বাবু গতকাল কলকাতা পুরসভার সামনে মিটিং করে দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কুৎসা করছেন। কটা আলো লাগিয়ে দিলেই উন্নয়ন হয় না। জেলাটাকে ধ্বংস-স্তুপে পরিণত করে জলের উপরে কর বসিয়ে দাদাগিরি আর গুন্ডামি করছে অধীর!” মাঠে উপচে পড়া ভিড় দেখে উৎসাহিত অভিষেক এ-ও বলেছেন, “বুঝতে পারছি, এখানে কাস্তে হাতুড়িতে জং ধরেছে। আর হাতের পাঁচটা আঙুলেই ব্যান্ডেজ পড়েছে। ফিরে গিয়ে দলনেত্রীকে এই উপস্থিতির কথা বলব।”

Advertisement

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর অবশ্য যুবরাজের আক্রমণকে গায়ে মাখতে চাইছেন না। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এ সব বালখিল্য কথার উত্তর দেওয়ার মানসিকতা নেই!” আর বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক এবং প্রদেশ নেতা মনোজ চক্রবর্তীর পাল্টা কটাক্ষ, “উনি (অভিষেক) তো তৃণমূলের নক্ষত্র নন! নিজের আলো নেই। পিসির আলোয় আলোকিত গ্রহ! তাঁর এত তর্জন-গর্জন নিয়ে মাথা ঘামানোর মানে হয় না!”

অভিষেকের পরে বলতে উঠে একই ভাবে অধীরকে আক্রমণ করেন ইন্দ্রনীল সেন, সৌমিক ও মান্নান। সৌমিক বলেন, “বিজেপি আর সিপিএমের দালালি করতে হবে বলেই আমি ওই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ ছেড়ে এসেছি।” আর মান্নান অধীরকে ‘তোলাবাজ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “ওকে গোটা জেলার মানুষ চেনে। এখন প্রকাশ্যে সভা করার সাহস পাচ্ছে না! সিনেমা হলে, কখনও স্কুলের সভাকক্ষে সভা করতে হচ্ছে।”

গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক অশান্তি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডোমকল তার পুরনো পরিচয় অনেকটাই মুছে ফেলতে পেরেছিল। তবে মান্নান ও সৌমিক কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরে তৃণমূল নেত্রীকে খুশি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নিজেদের গড় দখলে রাখতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কংগ্রেসও। যে অধীর কালেভদ্রে ডোমকলে সভা করতেন, তিনিও এখন ঘনঘন ডোমকলে আসছেন। এলাকার সাধারণ মানুষ ও প্রশাসনের একাংশের আশঙ্কা, রাজনৈতিক এই উত্তাপের ফলে ডোমকল ফের তার পুরনো চেহারায় ফিরবে না তো?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement