কেএলও-র বন্ধের আগে অস্ত্র উদ্ধার

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন কেএলও-র নাশকতার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ ও অসম লাগোয়া এলাকায় বাড়তি নজরদারি শুরু হতেই একটি কার্বাইন, ১৫ রাউন্ড গুলি-সহ বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার হল মালদহে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৪ ২৩:২৬
Share:



নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন কেএলও-র নাশকতার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ ও অসম লাগোয়া এলাকায় বাড়তি নজরদারি শুরু হতেই একটি কার্বাইন, ১৫ রাউন্ড গুলি-সহ বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার হল মালদহে। বুধবার রাতে হবিবপুর থানার সিংলা গ্রামের একটি মাঠ থেকে ওই অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়। বৃহস্পতিবার জঙ্গি ঘাঁটির সন্ধান মিলেছে পড়শি রাজ্য অসমের কোকরাঝাড়ের গোঁসাইগাঁওয়েও। বৃহস্পতিবার সেখানে অসম পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে দুই এনডিএফবি (সংবিজিৎ) জঙ্গির মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, বনগাঁও এলাকায় এক দল জঙ্গি ঘাঁটি গেড়েছে জানতে পেরে কাল রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সেখানে হানা দেয়। জঙ্গিদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর বেশ কিছুক্ষণ গুলির লড়াই চলে। পরে জঙ্গিরা পালায়। জওয়ানেরা জঙ্গি ঘাঁটিতে তল্লাশি চালিয়ে দুই জঙ্গির দেহ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে মিলেছে একটি পিস্তল, দু’টি গ্রেনেড ও কিছু কার্তুজ। নিহত জঙ্গিদের নাম পুস্কে বসুমাতারি ও প্রণব বসুমাতারি।
তার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মালদহ ও নামনি অসমে তল্লাশির জেরে দুই রাজ্যের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছেই স্পষ্ট, ১২ জানুয়ারি কেএলও-র ডাকা বন্ধে নাশকতার ঘটানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে জঙ্গিরা। গত ২৬ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ির বজরাপাড়ায় বিস্ফোরণে ৬ জনের মৃত্যুর পরে রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ করছে। কেএলও এবং তাদের মদতদাতা সন্দেহে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। সেই সঙ্গে পড়শি রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে কেএলও-র এক মুখপাত্র বারেবারেই হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন কী ভাবে, সেই প্রশ্নেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। বিষয়টি কেন্দ্রকেও জানানো হয়েছে। এর পরে কেএলও-র পক্ষ থেকে পুলিশি অভিযান বন্ধ করাতে আগামী ১২ জানুয়ারি ২৪ ঘণ্টা বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গ ও নামনি অসমের ৪ জেলা নিয়ে তাদের প্রস্তাবিত কামতাপুর এলাকায়। পুলিশি অভিযান বন্ধ না হলে পাল্টা আঘাত হানার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে কেএলও।
এই অবস্থায় রাজ্যের তরফে মালদহ, ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি শুরু হয়েছে। তার জেরেই মালদহে অস্ত্রশস্ত্র, দু’টি জলপাই রঙের পোশাক ও নথিপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, উদ্ধার অস্ত্র ও পোশাক জঙ্গিরা মাটির নীচে লুকিয়ে রেখেছিল। পুলিশের সন্দেহ, এই ঘটনার সঙ্গে কেপিপি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ধৃত সুভাষ বর্মন যুক্ত। যদিও সুভাষবাবুর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে বলে তাঁর মেয়ে স্মিতা বর্মনের দাবি। তিনি বলেন, “কেএলও জঙ্গি মালখান সিংহ আমার বাবাকে খুন করতে চেয়েছিল। বাবা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তা ছিঁড়ে ফেলে। আর বাবা কেএলও-র সহযোগী, এলাকায় কেউ তা বিশ্বাস করবে না। পুলিশ সুপার জানেন। তবুও বাবার বিরুদ্ধে কেএলও-র সঙ্গে যোগাযোগ এবং বাসে হামলার মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বাবা জড়িত নন। কেপিপি-র আন্দোলনকে দমন করতেই চক্রান্ত করা হচ্ছে।” এই প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সুভাষ বর্মনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই মাঠের মাটি খুঁড়ে গুলি ও কার্বাইন উদ্ধার হয়েছে। এই মামলা বিচারাধীন। তাই এর বেশি কিছুই বলব না।”
পুলিশ সূত্রে খবর, ২৭ ডিসেম্বর রাত ৯টা নাগাদ হবিবপুর থানার কালীপুকুরের কাছে মালদহ-বামনগোলা রাজ্য সড়কে একটি বাসে কেএলও জঙ্গিরা গুলি চালায়। হামলায় তিন জন বাসযাত্রী গুলিবিদ্ধ হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ও ৯ এমএম পিস্তলের ১৬ রাউন্ড গুলির খালি খোল উদ্ধার করে। তদন্তে নেমে পুলিশ ফলেন বর্মন নামে এক কেপিপি নেতাকে গ্রেফতার করে।
পুলিশের দাবি, হামলার আগের দিন রাতে ফলেনবাবুর বাড়িতেই মালখান সিংহ এবং সুভাষবাবুর বৈঠক হয়। সেখানেই হামলার পরিকল্পনা তৈরি হয়। এর পরে গ্রেফতার হয় আর এক কেএলও জঙ্গি খোকন রায়। তাদের জেরা করেই জানা যায়, দুটি বাইকে করে গিয়ে ছ’জন কেএলও জঙ্গি বাসে হামলা চালিয়েছিল। হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মালখান সিংহ। এর পরেই মালখান এবং তাঁর সঙ্গীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরের বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে পুলিশ এবং গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, অসম থেকে আলিপুরদুয়ার মহকুমায় একদল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেএলও জঙ্গির আনাগোনা শুরু হয়েছে। এই খবর পেয়ে উত্তরবঙ্গ জুড়ে পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, কেএলও ২৪ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছে ১২ জানুয়ারি। তার আগে বা পরে নাশকতা ঘটাতেই দলটি আলিপুরদুয়ার দিয়ে উত্তরবঙ্গে ঢুকেছে।
এ দিন আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “নাশকতা এড়াতে আলিপুরদুয়ার শহরে এক কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। কুমারগ্রাম, বারোবিশা ও হাসিমারা এলাকায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী (স্ট্র্যাকো) রাখা রয়েছে। নাকা তল্লাশি ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।” কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দা সূত্রের সন্দেহ, জঙ্গল ঘেরা অসম-বাংলা এলাকা হয়েই রাহুল বর্মন ওরফে গাঁধী নামে এক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কেএলও জঙ্গি অসম থেকে তিন চার জনের একটি দল নিয়ে আলিপুরদুয়ার মহকুমায় ঢুকেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement